ভাতের মজা কিছুতেই পাই না।
অবিরত পায়চারি করছে কায়সার। মনে তার একটুও শান্তি নেই। ঘুরে ফিরে শুধু শেফালী আর রনকের কথাই মনে পড়ছে। আজ সে বুঝতে পারছে সত্যিকারে সে শেফালীকে কতটুকু ভালবাসে।
তার মনের আকাশে ঘুরে ফিরে শুধু একটি তারা ই জ্বল জ্বল করছে। শেফালি শেফালি শেফালি! শেফালি কায়সারকে, কায়সারও শেফালিকে কখনো সরাসরি তার ভালবাসার কথা বলেনি। তবুও ভার্সিটির সকলের কাছেই তারা প্রেমিকা প্রেমিকা হিসেবে পরিচিত। শেফালী সবার সঙ্গেই হাসিমুখে কথা বলে তাই তার নিরব প্রেমিকের সংখাও নেহাত কম নয়। শেফালীর মায়াবী হাসির মায়াজালে আটকা পড়েছে তাদের ক্লাসেরই তুখোড় মেধাবী ছাত্র রনক।
এক কালে রনক শেফালীর প্রাইভেট টিউটর ছিল। শেফালীকে অনেক কিছু শিখিয়েছে সে। শেফালী শিখতে তেমন পটু নয় তাই রনক কে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশী ই করেছে শেফালীর জন্য, সবই তার একতরফা ভালবাসা থেকে। রনকের পারিবারিক অবস্থা তেমন ভাল নয়, সবকিছুই শেফালীর সাথে শেয়ার করে।
ছোট একটা চাকরী আর কয়েকটি টিউশনী করে পরিবার চালানোর দায়িত্ব এখন ওর ঘাড়ে। শেফালী রনকের প্রতি যা অনুভব করে তা হল সহানুভূতি, ভালবাসা নয় কোন কালেই।
পরীক্ষায় ভাল করার জন্য শেফালী সব সময় ক্লাসে রনকের পাশের সিটেই বসে। বুদ্ধি করে দুইজনের রোল নম্বরও রেখেছে পাশাপাশি। এতে কায়সারের কোন সমস্যাই নেই।
শেফালী পরীক্ষায় ভাল করুক এটাই কায়সার সবসময় চেয়ে আসছে। তবে রনক ইদানিং যে বাড়াবাড়ি শুরু করেছে তা কায়সার কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না। বন্ধুদের দিয়ে রনক কে কয়েকবার সতর্কও করেছে কিন্তু রনকের হৃদয়ের পালে যে প্রেমের সুবাতাস বইছে। এমতাবস্থায় রনক কি কারো সতর্কবাণী শুনে দমবার পাত্র! কায়সারও বেপরোয়া। এর একটা হেস্ত নেস্ত করে ছাড়বেই ছাড়বে।
সেটা সিগারেটের ই হোক আর রনকের হোক না কেন!
ইংলিশ ক্লাস মাত্র শেষ হয়েছে। সবার আগে বেরিয়ে পড়ল কায়সার। কিছুক্ষন পর একসাথে বেরুল রনক আর শেফালী। ভার্সিটির গেটের সামনে যেতেই হঠাত মাস্তান মত দুটি ছেলে রনক কে শার্টের কলার ধরে টেনে আড়ালে নিয়ে গেল। দাগি আসামিদের মত চেহারা দেখতে শিপনের।
ফিরোজের চেহারাও কাটা কাটা। দুইজনের চেহারা মোবারক দেখেই রনকের অবস্থা কেরোসিন। শেফালী প্রচন্ড চেষ্টা করে যাচ্ছে রনক কে ছেলে দুটির হাত থেকে বাচাঁতে। ছেলে দুটি আসলে রনক কে মারছে না শুধু ধরে আছে। অপেক্ষায় আছে কায়সার এসে চূড়ান্ত ফয়সালা করবে।
অবশেষে কায়সার আসল। এসেই রনক কে তাদের হাত থেকে ছাড়িয়ে বলল, দোস্ত শুনেছি হার্টের অসুখে তোর আব্বা হাসপাতালে আছেন। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে যা। রনক কথা না বাড়িয়ে সোজা চলে গেল।
শিপন ও ফিরোজ কায়সারের প্রতি রাগে গজ গজ করছে! হাতের কাছে পেয়েও বেটা চামচিকাটা কে এভাবে ছেড়ে দিলি?- চেচিয়ে উঠল দুজনেই।
কায়সার কাউকেই পাত্তা না দিয়ে আপন মনে হেঁটে চলে গেল...
তার চলে যাওয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল শেফালী। কায়সার কে আরো বেশী ভালবাসতে ইচ্ছা করছে শেফালীর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।