প্রায় ৩৫ বছর আগে বকুল জন্মাবার দিন থেকেই ওর এবং ওর বাসার সবার কপালেই গভীর কালো ক্ষতের মত একটা দাগ দেখা দেয়। ওর জন্মের পর থেকেই সবাইকেই ঐ দাগটা বহন করতে হচ্ছিল। দাগটা এমন, দেখলে কেমন একটা গা গুলানোর মত অনুভূতি হয়, দগদগে ঘা এর মত। এ নিয়ে নানা সময়ে ভীষন লজ্জায় পড়তে হয়েছে তাকে বা তার পরিবারের সবার।
অনেক চিকিৎসা, উপদেশ, এ্যালোপ্যাথ, হোমিওপ্যাথ থেকে শুরু করে কবিরাজি সব চেষ্টাই করা হয়েছে, কিন্তু শেষ ফলাফল তেমনই।
কিছুতেই দাগ থেকে মুক্তি মেলেনি। হতাশ হয়েছে, কিন্তু চেষ্টাও চালিয়ে গেছে সবাই মিলে। কপালের দাগটার দিকে না তাকালে বকুলের মুখশ্রীটায় শান্ত, সৌম্য সরলতার একটা প্রকাশ দেখা যায় যেমনটি সে স্বভাবে। অথচ কপালের উপর দাগটা....... চোখটা ওখানে যাবেই আর ঐ জায়গা আড়াল করা সত্যিই খুব দুরুহ। সারাক্ষণ একটা অস্বস্তি ঘিরেই থাকে তাকে; আর যারা দেখে তাদেরও।
কপাল ঢাকতে লম্বা চুল রাখা শুরু করেছে সবাই। অবিন্যস্ত চুল ফেলে রাখা সারাক্ষণ কপালের উপর। অগোছালোই লাগে দেখতে। কিন্তু মুক্তির উপায় কি - জানা নেই।
কিছুকাল আগে থেকে কি একটা 'প্যাক' লাগানোও শুরু করেছে সে।
বিভিন্ন লতাগুল্মের রসের মিশেল দিয়ে তৈরী, তা'তে কিছু উপকার পাচ্ছে কিন্তু তা বাহুল্যই বলা যায়। প্রতিদিন রাতে ঘুমাবার আগে খুব যত্ন করে সে মুখে মাখে, মাখে দাগ থেকে মুক্তির আশায়।
আরদিনের মতই তবু অনেকখানি হতাশা নিয়ে সারা মুখে-কপালে বেশী করে লোশনটা নিয়ে বকুল ঘুমাতে যায়। .......
সকালে ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজে চোখ বুলানো বহুদিনের অভ্যাস তার। তার সবচেয়ে আগ্রহের জায়গা চিকিৎসা আর বিজ্ঞাপনের পাতা।
যদি কোন নতুন ওষুধের খোঁজ পাওয়া যায়! খবর মেলে না। প্রতিদিনের মত তাই 'প্যাক' টাকে সে ধুয়ে ফেলে; অভ্যাসবশেই আয়নায় মুখ রাখে বকুল। প্রথমে ভ্রম বলেই মনে হয় তার, সে আবার আয়নায় মুখ দেখে তারপর মুহূর্তে সে চিৎকার করে ওঠে অবিশ্বাসে। তার কপালের দাগটা প্রায় উধাও! বারবার সে নিজেকে দেখে নিশ্চিৎ হয় মুখটা তারই এবং কপালে সেই দগদগে দাগটা নেই! তাহলে তো 'প্যাক'টা আসলেই কাজের! এতগুলো বছরের কষ্ট কাজে লেগেছে! তার চিৎকার শুনে মা ছুটে আসেন, দরজায় জোরে ধাক্কা দিতে থাকেন উদ্বেগে। বকুল ছুটে বের হয়ে আসে, মা'কে জড়িয়ে ধরে, চিৎকার করে বলতে থাকে 'মা আমার কপালের দাগটা চলেই গেছে!' মা'ও অবাক হয়ে যান।
আনন্দের মুহূর্ত চলে গেলে বকুল চেয়ে দেখে মা'র কপালের দাগটাও অপস্রীয়মান। বকুলের বুঝতে অসুবিধা হয় মা'র দাগটা কিভাবে গেল! মা তো কোন কিছু ব্যবহার করে না! তাহলে! বাবার কিংবা বোনেরটাও কি তাহলে নাই! দৌড়ে অফিস যাওয়া বাবাকে দেখে - একি বাবার টাও তো প্রায় চলে গেছে! হলোটা কি?
বকুল কোন সূত্র খুঁজে পায় না এই সুখবরের। বাইরের কারো মুখেও কোন গভীর দাগ দেখে না। কোন অভিষাপ কি ছিল তবে এ এলাকার উপর? বাসায় ফিরে খবরের কাগজ উল্টে দেখে খবরের আসায়, সূত্রের আসায়। তন্ন তন্ন করে খুঁজে তেমন কোন খবর পায় না।
বকুল প্রথম পাতায় ফিরে আসে আবার...........হতাশ চোখ আটকে যায় খবরটায়...........তবে কি......... এটাই কারন! এরাই অভিষাপ ছিল? তা না হলে এলাকার সবার একসাথে দগদগে দাগটা চলে গেল কেন? এটাই কারন তাহলে!
'আমাদের কলঙ্ক গেছে মা' বলে দ্বিতীয়বার চিৎকার করে ওঠে বকুল।
২৮ শে জানুয়ারির সেই সকাল থেকে বকুল এখন আরো বেশী উচ্চকন্ঠ বঙ্গবন্ধু'র বাকি খুনিদের বিচারের দাবীতে। তার আমাদের সবার কলঙ্ক হটাতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।