এনজি শট—হ্যাঁ, এনজি শট মাঝেমধ্যে কষ্ট দেয়, আনন্দ দেয়, কখনো বা লজ্জায় ফেলে দেয়; আবার এমনও হয়েছে, কখনো আমার রাগ তীব্রভাবে বাড়িয়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ‘মহান’ এনজি শট।
প্রথমে দেওয়া যাক আনন্দের উদাহরণ: গোলাম সোহরাব দোদুলের যন্তর মন্তর নাটকের শুটিংয়ে আমি হুমায়ুন ফরীদির পায়ে আমার পা দিয়ে স্পর্শ করব। পরিচালক দৃশ্য বুঝিয়ে দিলেন। ওদিকে আমি তো ভয়ে অস্থির—হুমায়ুন ফরীদির মতো এত বড়মাপের একজন অভিনয়শিল্পীর পায়ে পা দিয়ে স্পর্শ করব আমি—আমার মতো পুঁচকে একজন অভিনয়শিল্পী! তাঁর পায়ে পা দিতে হবে—কীভাবে দেব, এটা নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। এরপর খুব ভয়ে ভয়ে অভিনয় করলাম।
আমি ভয়ে যতটা আধমরা, হুমায়ুন ফরীদি ততটাই সাবলীল। একসময় দৃশ্যটি ধারণ হলো। তবে ভয়ের চোটে আমি কিন্তু ঠিকঠাক অভিনয় করতে পারিনি। তাই ভাবছিলাম, যদি আরেকবার শট নিত! তখনই জানা গেল, লাইটের কারণে এনজি হয়ে গেছে শট। এতে তো আমি খুব খুশি—খুব আনন্দ পেয়েছিলাম শটটি আরেকবার দিতে পেরে।
আনন্দের পরেই তো দুঃখ আসে। এবার তাহলে দুঃখের কাহিনিটি বলি: টেলিভিশন সিনেমার শুটিং করছি। এখানে একটি দৃশ্যে আমার কান ধরে উঠবস করতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে কাঁদতে হবে। বেশি উঠবস করলে আমার শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়। তাই আমি খুব চাইছিলাম একবারেই যেন শটটি ওকে হয়।
কিন্তু অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকিয়ে যায়—আমি প্রথমবার শট দিলাম, শট এনজি। ফলে দ্বিতীয়বার কান ধরে উঠবস না করে এবং আবারও কান্নাকাটির পসরা না সাজিয়ে উপায় কী! আমি কাঁদছি আর উঠবস করছি, এদিকে আমার শ্বাস-প্রশ্বাসগত সমস্যাও শুরু হবে হবে করছে। ওমা, দ্বিতীয় শটটিও এনজি হয়ে গেল কোনো এক কারণে! অগত্যা আবার...এভাবে আবার আবার করতে করতে পাঁচবারের মাথায় যখন ওকে হলো শট, ততক্ষণে আমার অবস্থা কাহিল—নিঃশ্বাস নিতে পারি কি পারি না। এদিকে আমি যখন একই শট বারবার দিচ্ছিলাম ও কাহিল হয়ে পড়ছিলাম, আমার অবস্থা দেখে পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও রেগে যাচ্ছিল। বারবার বলছিল, শটটি কেন ওকে হচ্ছে না!
আনন্দ-দুঃখের পালা শেষ।
এবার লাজুক কণ্ঠে লজ্জা পাওয়ার একটি ঘটনা বলা যাক: ঘটনাটি ঘটেছিল থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবির শুটিংয়ে। এতে একটি আবেগঘন দৃশ্যে মোশাররফ ভাই (মোশাররফ করিম) আমার শরীরের ওপর উঠে আসবেন। তখন সরয়ারের সঙ্গে আমার তুমুল প্রেম। আমি তো লজ্জায় বাঁচি না—এমন একটি দৃশ্য কীভাবে করব। মোশাররফ ভাইও লজ্জা পাচ্ছেন।
কিন্তু পরিচালক সরয়ার অটল। তো, এটা একবারে ওকে হলে তো হয়—না, সেটি আর হলো না। আমাকে দ্বিগুণ-চার গুণ লজ্জার মুখোমুখি করে শটটি বারবার এনজি হলো। কী আর করা, কপালের লিখন না যায় খণ্ডন!
অনুলিখন: আ. শা.
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।