কোথায় তাকে থামতে হবে - সীমালঙ্ঘনকারী তা কখনোই বুঝতে পারে না । প্রতিটি দুর্দশার মূলে রয়েছে ব্যাক্তির বাড়াবাড়ি বা সীমালঙ্ঘন ।
পোষ্টটি দেয়ার ইচ্ছা ছিল দেবদূত নিয়া যখন একটা পোষ্ট ষ্টিকি ছিল তখন কিন্তু শিশু দিবসে দেয়ার জন্য দেইনি ।
ঘটনা - ১
প্রয় বছখানেক আগে কম্পিউটার আপডেট করতে আইডিবি গিয়েছি পরিচিত একটা দোকানে ।
দোকানের মালিক নিজে বসেন, আছে তিন চারজন হার্ডওয়ার ইঞ্জিনিয়ার আর আছে একটা ১০/১১ বছরের ছেলে যাকে দিয়ে ছোটখাট কাজগুলা করানো হয় ।
আমার পিসিটা দিয়ে একটা চেয়ারে বসে তাদের কাজ দেখছিলাম । ছোট ছেলেটা তার বয়সের মতই চঞ্চল । কোন কাজের কথা বললে দৌড়ে দৌড়ে করছে । কিছু আনতে বললে দৌড় দিয়ে নিয়ে আসছে , কোথাও কিছু দিয়ে আসতে বললে দৌড়ে গিয়ে দিয়ে আসছে । আমি বসে বসে দেখছি, দেখতে ভালই লাগছে ।
একজন ইঞ্জিনিয়ার কিছু একটা করতে বলেছিল হয়ত কাজটা ঠিকমত হয়নি । দেখলাম টাস করে ছেলেটার গালে একটা চড় লাগিয়ে দিল । চড় খেয়েও ছেলেটা কাদেনি হয়ত এভাবে সে অব্যস্ত হয়ে গেছে, তবে যতক্ষন ওখানে ছিলাম ছেলেটার মধ্যে আর কোন চঞ্চলতা দেখিনি । কাজ শেষ হওয়ার পর ট্রলি দিয়ে আমার মেসিনটা বাইরে দিয়ে আসার জন্য তাকে ডেকে নিলাম । বাইরে এসে রিক্সা ডেকে চলে আসার সময় তার হাতে কিছু বকশিস দিলাম ।
ওদেরকে সবসময় বকশিস দেই কিন্তু ওইদিন কিছু বেশি দিলাম । মাথায় হাত দিয়ে বললাম ভাল থাকিস, অনেক্ষন পর তার মুখে একটু হাসি দেখলাম ।
ঘটনা - ২
কিছুদিন আগে আমার এক সিনিয়র কলিগের সাথে টেক্সি কেবে করে যাছ্চি, বনানীর লম্বা জ্যামে অপেক্ষা করছি এমন সময় ১০/১২ বছরের একটা অন্ধ ছেলে গাড়ীর জানালায় এসে ভিক্ষা চাইল, বলল স্যার আমি অন্ধ কোন কাজ করতে পারিনা আল্লাহর ওয়াস্তে সাহায্য করুন । আমি যখন পকেট থেকে মানিব্যগ বের করছি তখন সে থেমে গেল এবং আমার হাতের দিকে তাকিয়ে থাকল । পকেট থেকে ২ টাকা বের করে তার সামনে ধরতেই টাকাটা নিয়ে চলে গেল ।
বুঝতে পারলাম সে পূরোটা অন্ধ নয় অথবা একেবারেই অন্ধ নয় । আমার কলিগ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন মুজাহিদ আপনাদের মত কিছু লোকের কারনে ওরা প্রশ্রয় পায় । পক্ষান্তরে আপনি কিন্তু তার ক্ষতি করলেন । আপনি তাঁকে ভিক্ষাবৃত্তিতে উৎসাহিত করলেন । সিনিয়র লোক তাই কিছু বললামনা ।
কিন্তু এই টাকা দেয়ার পিছনে আমার নিজস্ব একটা যুক্তি আছে ।
আমার বাড়ীর কাহিনী
আমার বড় ভাইয়ের বড় ছেলেটার ১০ বছর হবে পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে । তার দুষ্টামিতে সারা বাড়ির লোক অতিষ্ট । সবাই তাকে শয়তানের ওস্তাদ বলে ডাকে, কারন সে যেখানে যায় সেখানে আর শয়তানের যাওয়ার প্রয়োজন হয়না । শয়তান জানে ওখানে তার যোগ্য প্রতিনিধি আছে তাই তার আর প্রয়োজন নেই ।
শয়তানিতে কোন অনিহা না থাকলেও খাবার বেলায় তার যত অনিহা । খাবার সময় হলে তার দাদা তাকে খুজে এনে খেতে বসান এবং খাওয়ার বিনিময়ে পুরুষ্কার ঘোষনা করেন । যেহেতু ভাত খেতে চায়না তাই ভাত ছাড়া আর কি ব্যবস্তা করা যায় সেই চিন্তা তার বাবা - মা র ।
আমার ভাতিজা, আই ডি বি র ছেলেটা এবং বনানী অন্ধ ছেলেটা একই বয়সের, কিন্তু জীবন যাপনে কত পার্থক্য । আমার ভাতিজাকে খাবারের চিন্তা করতে হয়না, কারন তার খবারের জন্য চিন্তা করার লোকের অভাব নেই ।
একই বয়সের একটি ছেলে আইডিবিতে সারাদিন খেটে যচ্ছ দু মোটো খাবার জোগাড় করতে, আরেকটা ছেলে অন্ধ সেজে ভিক্ষা করছে ।
যে বয়সে তাদের বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা সেই বয়সে তারা অন্যের চাকরী করছে । স্বাভাবিক চঞ্চলতাটা দেখাতে পারছে না, কোন ভুল নয় কোন দোষ নয় শুধু চঞ্চলতার কারনে তাকে চড় খেয়ে শান্ত হয়ে যেতে হয় ।
বনানীর সেই ছেলেটি হয়ত অন্ধ নয় । কিন্তু কেন সে অন্ধ সাজল ? দুটা টাকা পাওয়ার জন্যইত, এই টাকা দিয়ে সে দুমোটো খাবারের ব্যবস্তা করবে ।
হয়ত এই বয়সে আরো দুই একজনের দায়ীত্ব তার কাদে আছে ।
কিছুদিন আগে কাওরান বাজার কিউকেস থেকে টাকা উটানোর উদ্দেশ্য যাচ্ছি । এটিএনের সামন দিয়ে বাজারের ভিতরের রাস্তায় গিয়ে উটলাম । ব্যাংকে যাওয়ার পথে দেখি একটা বিল্ডিংয়ের বারান্দায় রসি দিয়ে বেড়া দিয়ে কয়েকজন লোক কয়েকটা শিশুকে নিয়ে বসে আছে । সাইনবোর্ড লাগানো পথশিশুদের উন্নয়নে কাজ চলতেছে ভিড় করবেননা ।
আমি দুর থেকে কিছুক্ষন দাড়িয়ে দেখে চলে গেলাম । পরদিন একই সময়ে ঐদিকে গেলাম কিন্তু ঐ লোকগুলোকে আর দেখলাম না । বুঝতে পারলাম ওরা কোন এনজিওর লোক । পথশিশুদের জন্য কোন অনুদান পেয়েছিল, আর সেটা আত্মসাত করার জন্য এই নাটক ।
আসলে ঐ শিশুদের জন্য ভাবার কেউ নেই ।
শিশুর উন্নয়নে কাজ হয় কিন্তু ওদের উন্নয়নে কাজ হয়না । শিশু অধিকার আদায়ে কাজ হয় কিন্তু ওদের অধিকার আদায়ের জন্য কোন কাজ হয়না ।
কেউ ভাবার নেই বলে ওরাতো নিঃশ্বেস হয়ে যেতে পারেনা ? অন্ধ সেজে ভিক্ষা করলইবা, অমরা যদি তাদেরকে দুই একটাকা না দেই তাহলে ওরা না খেয়ে মরবেযে ।
শেষ করার আগে বলছি, ওরাও কিন্তু দেবদূত । লোক দেখানো কোন নাটক না করে ওদের উন্নয়নে সামাজিক ভাবে কিছু একটা করা উচিত ।
ওদের জন্য আন্তরিক ভাবে ভাবা উচিত । কারন ওদের খুব কাছের এমন কেউ নেই যে তাদের জন্য ভাল কিছু ভাবতে পারবে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।