অচেনার মাঝেও নিজেকে চেনার নিঁখুত অভিনয় করি
আমার খালাতো ভাই যে কিনা এবার এস এস সি দেবে। ঢাকায় থাকে। তো ঢাকায় গেলে ওর সাথে খুব গল্প চলে। কাকে ভাল লাগল, ওর বন্ধুরা কার কার সাথে ইয়ে ইয়ে করে সব ঘটনা আমাকে বলা চাই। গল্প শুনতে শুনতে রাতের অন্ধকার দিনের আলোয় দূর হয়ে যায়।
এত বড় রাতটা যে গল্পের মাঝে কিভাবে কেটে যায় তা টের পাওয়া যায় না।
তো সে তার সাম্প্রতিক পছন্দের মেয়েটির কথা বলল। আমি মনযোগী শ্রোতা হিসাবে যথেষ্ট মনযোগ দিয়ে শুনলাম। মাঝে মাঝে আশ্চর্য হয়ে যায় ওর কথা শুনে। মেট্রিকে পড়ার সময় এত কিছু কি আমি বুঝতাম? তা মনে করে নিজেই খানিকটা বিরক্ত হলাম।
সবাই সব কিছু পারে নাকি? মেয়েটি নবম শ্রেণীতে পড়ে।
রাতের গভীরতায় মন অনেক তরল থাকে। মনের অনেক কথা এম্নেই বের হয়ে যায়। একজন মানুষকে চেনার সবচেয়ে ভাল উপায় রাতের বেলায় গল্প করা। দিনের আলোর কঠিন মানুষটিরও মন যে নরম রাতের গল্প দ্বারা বুঝা যায়।
থাক সেগুলো বাদ।
তা ওর গল্প বলার পর আমি পড়লাম মহা বিপদে। এবার আমারটা বলতে হবে। কাকে পছন্দ করি। ভাগ্য ভাল এখনও সেরকম কিছু ঘটে নি।
ঘটলে রাতের এই তরল সময়ে মুখ দিয়ে সব ফট ফট বের হয়ে যেত। আর ভাইটির সবদিকে ভাল একটাই দোষ। কথা পেটের ভিতর রাখতে পারে না। বদ হজম হয়ে যায়। সেজন্য সে প্রকাশ করে ফেলে।
সবাই এম্নে আমার নিরীহ চেহারা দেখে ভদ্র মনে করে!!
আমি বললাম, আমি আসলে সেভাবে কাউকে পছন্দ করি না।
না, যা ভাবছিলাম। ও বিশ্বাস করল না। “ ধুরো, তুমি মিথ্যা বলছো। ” বার বার বলার পরও দেখি বিশ্বাস করছে না।
তখন নিরুপায় হয়ে কিছু বলতে হলো।
ওকে প্রশ্ন করলাম, বলব? আমার ভালবাসার কথা বলব?
ঃ বলবা মানে এখুনি শুরু করো। আমি বলতে যাচ্ছি এরকম আবহ দেখে ওর খুশী দেখে কে!! ওর তর সইছে না। জিজ্ঞেস করে বসল- মেয়ের নাম কি?
কাউকে বলবা নাতো। আমি একটু ঢং করে বললাম।
ঃ বিশ্বাস করো কাউকে বলব না।
দেখলাম তার আগ্রহ দ্বিগুণ বাড়ল।
নাম বললাম- হৈমন্তী।
শুনে ও চমকে উঠল। “ আরে কি বলো! মনে তো হচ্ছে অন্য ধর্মের মেয়ে।
কঠিন কেস!! অ্যাঙ্কেল অ্যান্টি জানলেতো তোমার রক্ষা নেই।
আমি একটু বিরক্ত হওয়ার ভান করলাম। - তুমি কি আম্মু আব্বুকে বলে দেবা নাকি?
ঃ পাগল হইছি আমি। কাউকে বলব না, কেউ জানবে না। এগুলো বলে আমাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে।
“ আচ্ছা হৈমন্তী ভাবীর বাসা কোথায়?”
-হৈমন্তী তোমার ভাবী হলো কোত্থেকে?
- তোমার সাথে বিয়ে হলে আমি ভাবী ডাকবো না? বল না, কিভাবে পছন্দ হলো?
ওর সরলতা দেখে আর ইচ্ছে করল না মজা করতে। ও দেখি সত্য সত্য বিশ্বাস করে বসছে। রহস্য ফাঁস করে দিলাম। আরে এটা রবীন্দ্রনাথের হৈমন্তীর কথা বলছি। হৈমন্তী গল্পের হৈমন্তী।
আমার কথা শুনে ভাইটি মহা বিরক্ত হলো। ওর মুখ দেখে মনে হলো পৃথিবীর সবচেয়ে অন্যায় কাজটি আমি এই মাত্র করলাম। এরপর কয়েকদিন ধরে আমার সাথে কথা পর্যন্ত বলে নি। আসার সময় সৌজন্যতার খাতিরে বিদায় জানিয়েছিল মাত্র। কাল আবার ঢাকায় যাচ্ছি।
আবার দেখা হবে, ইনশাল্লাহ।
আসলে হৈমন্তী মেয়েটি আমার অনেক পছন্দ। পরস্ত্রীর দিকে চোখ দেওয়া গুণাহ। তারপরও হৈমন্তীকে আমার অনেক বেশি আপন মনে হয়। ইশ!! জানি না আমার এই পছন্দের ব্যাপারটা অপু বাবু জানলে কি ভাববেন? হৈমন্তীর প্রতিটি আচরণ আমার পছন্দের।
চরিত্রটি পড়তে গেলে আমি শিহরিত হই। ভাল লাগায় আক্রান্ত হই। হৈমন্তীর কষ্ট দেখে মনে হয় সত্যিই আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষের কষ্ট হচ্ছে.....
হৈমন্তী সম্পর্কে আমার আরো অনেক অনুভূতি, কল্পনা আছে। অন্য একদিন আপনাদের সাথে শেয়ার করার ইচ্ছে আছে। া
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।