একটা গোপন কথা বলি আজ। সবাই আমাকে যতটা চুপচাপ আর বোকা মনে করে আমি আসলে ওমন না। কথা বলিনা, হয়ত সাহস পাইনা; কিন্তু কথা ঠিকই জানি। বলতে পারিনা তো কি, ভাবছি না বলা কথাগুলো লিখব এখন। এবার বুঝবে মজা।
আব্দুল্লাহ ছেলেটা আসলেই সোনার ছেলে। এখন না হয় বিদেশে ওত্ত বড় চাকরি করে, একটা সময় ছিলো যখন ওদের সেই সামর্থ ছিলো না। বাবা সিভিস সার্জনের ড্রাইভার, কম বেতন। তা দিয়ে কি আর চলে। তবে শিক্ষকেরা আব্দুল্লাহকে অন্যচোখেই দেখত।
টিউশনির টাকা তো নিতই না নানা রমক সাহায্যও করত তাকে। করবেই তো। এমন সোনার ছেলের জন্যই তো করবে। যা বলছিলাম। আব্দুল্লাহ তখনো বুয়েটে পড়ে।
টিউশনি আর কোচিংয়ে ক্লাশ নিয়ে নিজের টা কোন ভাবে চলে। বাড়িতে বাবা-মার সঙ্গ তার দুই বোন, একটা বড় আরেকটা ছোট। বড় বোনটার বিয়ে ঠিক হয়েছিল, ভেঙ্গে গ্যাছে। ওকে নিয়েই বাবা-মার যত্ত চিন্তা। আবার বিয়ে দিতে গেলে অন্য সমস্যা তো আছেই, খরচার বিষয়টাও তো ভাবতে হবে।
তবে উনাদের একটাই শান্তনা, ছেলে মানুষ হচ্ছে, দিন বদলাবেই। আব্দুল্লাহর ছোট বোনটা ভিষন দুষ্টু, ডলি। এখন আর অত্ত ছোটটি নেই। কলেজে পড়ে। আব্দুল্লাহ এই বোনটাকে খুব ভালোবাসে।
একদিকে দুনিয়া, আরেকদিকে ডলি। ডলি আবার আরেক বায়না ধরেছে কদিন ধরে, 'ভাইয়া আমি ঢাকায় থাকব। তুমি একটা বাসা নাও'। ওই পাগলি কি আর বুঝে ঢাকায় বাসা নেওয়া তার ভাইয়ের পক্ষে সম্ভব না। অবশ্য ডলিকে ঢাকায় এনে রাখতে পারলে ভালো হতো, ওর পড়াশোনা হচ্ছেনা।
নাহ্। কষ্ট করে হলেও ডলিকে ঢাকায় নিয়ে আসতে হবে। একটা এক রুমের বাসা নিয়েই ফেলল আব্দুল্লাহ। টিউশনি আরেকটা বাড়িয়ে দিলো। এর মাঝেও বোনের জন্য সময় বের করে সে।
আর ডলিটাও না. . . . কোন কাজ করেনা ঘরের। আব্দুল্লাহই সব করে, রান্না বান্না, এমনকি ডলির কাপড়ও ধুয়ে দেয় সে। এ নিয়ে অবশ্য তার কোন আক্ষেপ নেই। লক্ষী ছেলে।
আব্দুল্লাহ বুয়েট থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এ বিএসসি পাশ করলে এভাবে।
সেকেন্ড হয়েছে সে। এবার এমএসসি??? নাহ্ স্বপ্নটা অনেক দূর। বাইরে থেকে এমএসসি করবে আব্দুল্লাহ। বাবা মাও চান তাদের ছেলের স্বপ্ন যেনো পূরণ হয়। আব্দুল্লাহও অনেক চেষ্টা করে ৫০% স্কলারশিপ জুটিয়ে ফেলল।
তার পরও যে টাকা লাগবে সেটাও অনেক। ৫ লাখ। এত্ত টাকা??? বাবা শুধু বললেন হয়ে যাবে..........
হলোও। বাবা আর্লি রিটায়মেন্টে গেলেন। টাকার জোগান হলো।
আগে ভেবেছিলো রিটায়মেন্টের টাকায় মেয়ে দুটোর বিয়ে দেওয়া হবে। তাতে কি, ছেলে বিদেশে গেলে ওসব আর সমস্যা থাকবে না। আব্দুল্লাহ প্রথমে রাজি হতে চায়ন, বাবার সারা জীবনের সম্বল। অবশেষে বাবা-মা আর বোনদের জোড়াজোড়িতে আব্দুল্লাহ রাজি হলো। সে বিদেশ গেলো পড়তে, এমএসিসি ইন সিএস।
রিয়াজ। সেই আগের মতোই আছে। তবে ওকে নিয়ে তার পরিবারের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। ওর জন্য আর মুখ রইল না। শেষমেষ যা করলো তার পরে মাথা কাটা গেলো একেবারে।
নারী অপহরন কেসে ফেসে গেলো সোনাধন। ওকে দিয়ে আর কিছু হবে না। ওর মামা একদিন কইল, ওরে বিদেশ পাঠাই দিলে কেমন হয়? রিয়াজের বাবা বললেন খোজ নিতে। ভালোই হয়। যা ইচ্ছ্ করুক, চোখের সামনে থেকে দূরে গিয়ে করুক।
মামা কয় দিনের মধ্যেই একটা লাইন আনলেন। সৌদি পাঠানো হবে। আড়াই লাখ টাকা লাগবে। রিয়াজের আব্বার জন্য অবশ্য এই টাকা খুব সমস্যা না। তয় সমস্যা সোনাধনরে রাজি করানো নিয়া হে কি এই সুখে থুইয়্যা যাইব বিদেশ?
তবে কেসটা খাইয়্যা ভালোই হইল।
ওই দোহাই দিয়া ওরে রিয়াদ পাঠাইয়া দেয়া হলো।
যাওয়ার দুইদিন আগে থেইক্যা কেমন জানি চুপচাপ হইয়া গেছিলো পোলাডা। এই রিয়াজরে কেউ চিনে না........ (চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।