আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চাচা কাহিনী



তখন আমি ক্লাস টেনে পড়ি। আমাদের ক্লাসরুমটা ছিল স্কুল গেটের সাথেই। পিছনের জানলা দিয়ে উঁকি দিলেই গেটটা দেখা যেত। আমাদের ছুটি হতো বারোটায় আর ওয়ান থেকে থ্রি পর্যন্ত ছুটি হতো থার্ড পিরিয়ডে, মানে নয়টায়। অনেক গার্ডিয়ান বাচ্চাদের নিতে আসতো ঐ সময়।

একদিন মেয়েদের মধ্যে একজন আবিস্কার করল বেশ সুন্দর দেখতে একটা ছেলে এসেছে একটা পিচ্চিকে নিতে। ছেলেটা খুবই কিউট...ফর্সা, গোলগাল চেহারা, সিল্কি সিল্কি চুল কপালের উপর পড়ে আছে, বড়জোড় কলেজে পড়ে। সে সবাইকে খবর দিল, ‌'এই দ্যাখ দ্যাখ, একটা সুন্দর ছেলে আসছে। ' যেই না বলা, সুন্দর ছেলেটাকে দেখার জন্য পুরো ক্লাস জানালার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল। এতগুলো মেয়ের মনোযোগ পেয়ে তো ছেলে খুবই ভাব ধরা শুরু করল।

জিন্সের পকেটে এক হাত ঢুকিয়ে আরেক হাতে মাথার চুল পরিপাটি করছে। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বান্দর ছিল ছবি। ছেলের অমন ভাব ধরা দেখে সেতো ক্ষেপেই গেল। হঠাৎ করে বলে বসল, 'আরে এইটা তো আমার চাচা হয়। চাচা, ওই চাচা.........।

' ওর সাথে সাথে পুরো ক্লাসই তখন চাচা, চাচা করে ডাকছে। ছেলেটা তাড়াতাড়ি সেই পিচ্চিকে নিয়ে ওইখান থেকে পালাল। পরদিন থার্ড পিরিয়ডের পরে আমরা তক্কে তক্কে ছিলাম কখন 'চাচা' আসে! আর আসামাত্রই আমরা দশ-বার জন একসাথে সেই চাচা, চাচা করে চেঁচাতে লাগলাম। বেচারার এত ভাব....সব ধুলিস্মাৎ হয়ে গেল এইভাবে তিন-চারদিন যাওয়ার পর দেখি ওই ছেলে আর আসে না। আহারে এমনই ছ্যাকা খাইছিল মাঝে মধ্যে রাস্তায় দেখতাম একেকজন আলাদা আলাদাভাবে।

কিন্তু একলা থাকলে তো আর রাস্তার মাঝখানে কিছু বলা যায় না, শুধু মিটমিট করে হাসতাম। তাতেই বেচারা একেবারে লালে লাল হয়ে যেতো। একদিন স্যারের বাসা থেকে প্রাইভেট পড়ে ফিরছি আমরা ত্রিরত্ন (স্কুলে আমরা তিন বান্ধবী সবসময় একসাথে থাকতাম আর চরম বান্দরামী করতাম। টিচাররা ভালবেসে (!) অথবা আমাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে ত্রিরত্ন উপাধি দিয়েছিলেন)। রাত হয়ে গিয়েছিল বলে স্যার আমাদের বাসায় পৌঁছে দিচ্ছিলেন একজন একজন করে।

স্যার সামনে, অনেকখানি পিছনে আমরা হা হা হি হি করতে করতে যাচ্ছি। হঠাৎ করে মাঝখানে দেখি চাচামিয়া যাচ্ছে। সে বেচারা নিশ্চয়ই আমাদের খেয়াল করেনি। আমরা কি করবো? সামনে তো স্যার। তখন খুবই নিচু চিকন গলায় তিন জনে সুর করে ডাকতে লাগলাম, চাচা আ আ আ......ওওওওওও চাচা আ আ আ আ........ চাচাতো ততক্ষণে টের পেয়েছে কই এসে পড়লাম! পিছন থেকে দেখি তার ঘাড় শক্ত, কাঁধ আড়ষ্ট হয়ে গেছে।

পালাতে পারলে বাঁচি আর কি। সামনে একটা গলি দেখতেই সে বেচারা সোজা রাস্তা ছেড়ে গলির মধ্যে পালাল। আর আমরাতো তখন হাসতে হাসতে প্রায় গড়াগড়ি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।