আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চাচা কাহিনী

প্রবাসী

চাচা কাহিনী ছোট বেলা সৈয়দ মুজতবা আলির “চাচা কাহিনী” পড়েছিলাম। বইয়ের বিষয়বস্ত আজ আর এক বিন্দুও আমার মনে নেই নতুন করে যে পড়ব তার ধৈর্য্য ও আজ নেই। আজ বলতে বসেছি আমার রোগী, আমার অন্ধ ভক্ত নাটোরের ওবায়েদ চাচার গল্প। তখন নতুন করে চেম্বার সাঁজিয়ে বসেছি। রোগী পত্র খুব বেশী হয় না, পেপার পড়ে, যা দু একজন রোগী আসে তাদের সাথে গল্প করে সময় কাটাই।

চাচা আমার এই রকম সময়কার রোগী । কিছু কিছু মানুষের মুখাবয়ব কৌতুক রস বোধ সম্পন্ন হয়, আমাদের চাচা ও ছিলেন ঐ রকম মানুষ । সব সময় হাসি হাসি মুখ। চাচার বয়স প্রায় আশি। হাটুর ব্যাথা নিয়ে এসেছিলেন আমার কাছে।

ঔষধপত্র খেয়ে চাচা ভাল হলেন। তারপর থেকে চাচা আমার ভক্ত। অনেক রোগী চাচা পাঠাতেন। রোগী গরীব হলে চাচার নাম করলেই ১০০ টাকা কম নিতে হত আমাকে। এর মধ্যে ৩/৪ বছর কেটে গেছে ।

আমার পসার ও কিছুটা বেড়েছে। চাচাকে আগের মত সময় দিতে পারি না, তাতে অবশ্য চাচার কোন দুখঃ নেই। ততদিনে চাচা আমার বাধাঁ রোগী এবং চাচার ফিস মাফ। আমার চেম্বারের ছেলেটাও চাচাকে চিনে গেছে, চাচা এলেই তাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখানোর ব্যাবস্থা সেই করে দিত। এ নিয়ে দু একদিন ঝামেলা ও হয়েছে।

যাই হোক ,বেশ কিছুদিন পর সেবার যখন চাচা এলেন বেশ কিছুটা মর্মাহত হলাম। চাচা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন সেই জন্যই এবার দেরি করে এলেন। ঢাকাতে ছিলেন বেশ কিছুদিন । এখন ভাল। কিন্তু চাচার ডাক্তার আমি, আমাকে না দেখিয়ে চাচা তৃপ্তি পাচ্ছিলেন না।

বলতে ভুলে গেছি চাচা ছিলেন ধার্মিক হাজী মানুষ, হাটুর ব্যাথায় নামাজ পড়তে কষ্ট পেতেন। আমার চাচী দুজন। একজনের বয়স ৭০ আরেকজনের ৪০ এর একটু উপরের। ছেলেমেয়ে দুই ঘরে মিলিয়ে ৮/১০জন। অবস্থা সম্পন্ন ব্যাবসায়ী মানুষ চাচা, তার ব্যবসা এখন ছেলেরাই দেখাশোনা করে।

আগে অনেকবার চাচা একা একাই এসেছেন কিন্তু এবার সপরিবারে, দুই চাচী আরো ৪/৫ জন ছেলে মেয়ে নিয়ে। স্ট্রোকের কারনে ছেলেমেয়ে বৌ সাথেই এসেছে। চাচাকে দেখে শেষ করার পর চাচা বললেন “ স্যার আপনার সাথে একটু প্রাইভেট আলাপ করতে চাই” সবাইকে চেম্বার থেকে বাইরে পাঠিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম চাচার”প্রাইভেট’ বক্তব্য শোনার জন্য। “স্যার আমি বড্ড বিপদে আছি” -কেন? -"স্যার আমার সব কিছু “নরমাল” হয়ে গেছে"। অবাক হলাম চাচার কথা শুনে ।

নরমাল মানে স্বাভাবিক সেটা তো ভাল তাতে চাচার বিপদ কেনো? “কোন মুখে বলি স্যার, আপনার চাচিদের নিয়ে ভাই বোনের মত শুয়ে থাকি, আমার সব কিছু “নরমাল” এতক্ষনে চাচার সমস্যা বুঝতে পারলাম। স্বল্প শিক্ষিত মানুষ চাচা বলে চললেন” পুরুষ মানুষের একটা মনুষ্যত্ব আছে না, স্ট্রোকের পর থেকে ঐ জিনিসটা আর নেই। চাচা পুরুষত্বকে মনুষ্যত্ব বলছেন ভুল করে । চাচাকে বোঝাতে চেস্টা করি “ বয়স হয়েছে, স্ট্রোকের রোগী, কি আর করবেন” ইত্যাদি। চাচা কে কিছূ ঔষধ ও দিলাম।

খুব বেশী আশ্বস্ত চাচা হলেন না। আরো দু এক বছর কেটেছে। এখন চাচার বড় ছেলে এসেছে রোগী হিসেবে । তার কাছেই শুনলাম চাচা মারা গেছেন মাস খানেক আগে। চাচার শেষ দিন গুলো কেটেছে বেশ কস্টে।

এই এক মাসেই চাচার পরিবার বিভক্ত হয়ে গেছে । বিষয় সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা হয়ে গেছে। আর সবচে দুখঃএর ব্যাপার হল- আমার ছোট চাচি। চাচার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা বাগিয়ে নিয়ে একই গ্রামের রহমত শেখকে বিয়ে করে নতুন সংসার পেতেছে চাচা মারা যাওয়ার আগেই। চাচার সমস্যার কিছু আমি করতে পারি নি।

আমার ছোট চাচি অন্য কোথাও বিয়ে করবেন চাচা ঠিকই বুঝেছিলেন। আমি চাচার বিপদ বুঝতে পারি নি, চাচার “মনুষ্যত্ব” ফিরিয়ে দিতে পারি নি। সব কিছুর সমাধানই তো ডাক্তারদের হাতে নেই।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।