skype :: hasib.zaman
আমার দাদা খুব কড়া টাইপের মানুষ ছিলেন, দাদী সারাক্ষন ভয়ে তটস্থ থাকতেন। বড়চাচা তার মাকে গিয়ে বলেন,
“মা তোমার এত কষ্ট আমি তো আর সইতে পারি না। ”
দাদী পুত্রের মনের কথা বুঝতে পারেন, পুত্র বিবাহ করতে চায়। তিনি বলেন,
“বাবা, তুই তো চাকরী-বাকরী কিছু করলি না। এখন ব্যবসা-বানিজ্য কিছু কর।
নাইলে বিয়ে করাই ক্যামতে?”
“মা, আপনে খালি কিছু পয়সা দেন আমারে। দেখবেন কয়দিনের মধ্যেই বস্তায় বস্তায় টাকা আইনা আপনার পায়ের কাছে ফালামু। ”
দাদী সেই জামানায় পয়সা পাবেন কই? তিনি তার অতি আদরের পুত্রকে কিছু সোনাদানা দিলেন। বড়চাচা সত্যি সত্যি রাতারাতি আদম ব্যবসা করে ভালো টাকা বানালেন, বিয়ে করে বউ নিয়ে শহরে স্থায়ী হলেন। নবাবী কায়দায় চলাফেরা শুরু করলেন।
নামকরা লোকজনের সাথে তার ওঠাবসা, চেহারাও মাশাল্লা ভাল। কবরীর বিপরীতে সিনেমার অফার পেয়ে গেলেন, শুধু সিনেমা বানানোর কিছু খরচ চাচাকে দিতে হবে এই যা। কি কারনে জানি পরে আর চাচার হিরো হওয়া হয়নি, তবে হিরো হাবভাবে চলাফেরা চলতে থাকল। কয়েক বছরের মধ্যেই ব্যবসায় মার খেয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসলো। দাদীর দুঃখ-কষ্টের কোন গতি হল না।
বড়চাচার অর্থকড়ি কমে গেলেও আরাম আয়েশে কোন কমতি হলনা, বরং আরো জেঁকে বসল। স্থানীয় কলেজে লাইব্রেরীয়ান এর দায়িত্ব নিলেন, শুয়ে বসে যে চাকরী করা যায়। তবে একটা ব্যাপারে পরিবর্তন আসল। বেশ ধার্মিক হয়ে গেলেন তিনি। সকাল দশটায় ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে প্রতিদিন ফযরের নামাজ আদায় করেন এবং এ সিস্টেমে কোন সমস্যা নেই বলেও সবাইকে জ্ঞানদান করেন।
বড়চাচা নিজেকে বেশ বুদ্ধিমান লোক বলে মনে করেন। তিনি তার ছেলেমেয়েদের সবসময় বলেন, “আমি তোদের টাকা-পয়সা ধন-সম্পদ তেমন কিছুই দিতে পারবনা। তবে আমি তোদের ভাল ভাল বুদ্ধি দিতে পারব। ”
একবার তার বুদ্ধির খেসারত দিতে হল বাবাকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবা ছিলেন ক্লাশ নাইনের ছাত্র।
যুদ্ধ শেষে ১৯৭২ সালে চাচার হঠাৎ ধারনা হল দেশের সব ভাল ভাল চাকরী সবাই পেয়ে যাচ্ছে। তাই তার ছোটভাইকে উপদেশ দিলেন সেবারেই মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে দিতে। কারন তাড়াতাড়ি পড়াশোনা শেষ না করলে দেশে কোন চাকরী আর বাকী থাকবে না। বড়ভাইয়ের কথা শুনতে গিয়ে বাবা খারাপ রেজাল্ট করে বসলেন। এখনো সুযোগ পেলেই বাবা সেই আফসোস করেন।
খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে চাচার খ্যাতি দারুন, এই প্রায় ষাট বছর বয়সে তিনি আমাদের মত দু-তিনজন ইয়াং যুবকদের চেয়ে বেশী খেতে পারেন। কুরবানীর ঈদের পরদিন দুপুরে পারিবারিক আড্ডায় হঠাৎ বললেন, “আজ সকালে খাসীর পায়া দিয়ে যে নাস্তাটা করলাম এত সুস্বাদু হইসে যে কি আর বলবো! বেহেস্তেও এই খাবার পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। ”
ড্রিঙ্কসের উপর তার মারাত্মক টান, একসময় অনেক রকমের পানীয় খেয়েছেন বলেই হয়ত। এখন সেভেন-আপ দিয়ে চাহিদা মেটাতে হয়, একদিন আমাকে দিয়ে টাইগার এনার্জি ড্রিংক আনিয়ে খেলেন, বললেন,
“শরীরটা তো আগে ঠিক রাখতে হবে, কি বলিস?”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।