করিম চাচা, কিপট্যা টাইপের সবার সাথে অমায়িক ব্যবহার করেন কারো সাথে চাচার ঝগড়া লাগে না তেমনি একটা ঘটনা, সুরুজ একটা মাঝারি আকারের লাউ (কদু) নিয়ে বাজারের দিকে রওয়ানা দিছে পতিমধ্যে চাচার সাথে দেখা, সুরুজ বলল, স্লামালেকুম চাচা,
চাচা : সালাম তো দিবে ব্যাটা, মুরব্বীকে তো সালাম-ই দিতে হয়। তা কই যাও।
সুরুজ : চাচা বাজারে যাই লাউ বেঁচতে।
চাচা : তর লাউ তুই তো বিক্রি করবি।
সুরুজ : তাইলে চাচা যাই?
চাচা : যাবি তো সময় কি বইস্যে আছে, যা যা।
সুরুজ বাজার থেকে ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে গেল, রাস্তায় আবারও চাচার সাথে দেখা। দেখেই সুরুজ বলল, জানেন চাচা কি ঘটনাই ঘটল!
চাচা : কি হইচ্যা?
সুরুজ : আমি লাউ নিয়্যা বসলাম, একজন খরিদ্দার আইসা জিগাইলো দাম কতো?
চাচা : জিগাইবো না?
সুরুজ : আমি কইল্যাম দশ টাকা।
চাচা : তর লাউ তুই তো দাম কবিই।
সুরুজ : খরিদ্দার কইলো, তিন টাকা।
চাচা : খরিদ্দারের তো কিছু কওনের আছে।
সুরুজ : আমি কইল্যাম, তর বাপে লাউ কোনদিন খাইছো?
চাচা : এমন দাম কইল্যে তুই কইব্যি।
সুরুজ : শুইন্যা ব্যাটা আমারে চড় মারলো।
চাচা : বাপ তুইল্যা কথা কইল্যে কি ছাইড়া দিব?
সুরুজ : আমি জোরে একটা চড় দিলাম।
চাচা : তরে মারছে তুই কি ছাইড়্যা দিবি?
সুরুজ : এরপর পুলিশ আইলু
চাচা : মারামারি করল্যে তো পুলিশ আইবুই।
সুরুজ ; আমারে ধইরা থানা নিয়া গেল।
চাচা : পুলিশে ধরল্যে থানায় তো নিবই।
সুরুজ : কিন্তু বেশীক্ষন রাখলো না ছাইড়্যা দিল।
চাচা : ছাড়তে হইবো, পুলিশ ব্যাটা কি জানেনা তুই করিমের ভাতিজা।
চাচার এমন অনকে ঘটনা আছে, আরেকদিন চাচা বাজারে গেছে লুঙ্গি কিনতে, দশ টাকা দিয়া লুঙ্গি কিনে সেটা তিন বছর পড়ার পর ছিড়ে গেল চাচা সেটা কেটে গামছা বানাল। মাস তিনেক পর এইটাও ছিড়ে গেল, চাচা পরে টুপি বানাল, ঐটাও ছিড়ে গেল, এবার রুমাল বানাল এটা ছিড়ে যাবার পর চাচা সেটাকে পোড়াল এবং সেই ছাই দিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে পুকুর পারে গিয়ে কুলি করল এবং মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল, এই পথ দিয়ে সুরুজ যাচ্ছিল, চাচাকে বলল- চাচা, মন খারাপ নাকি? চাচা বলল- ভাতিজারে আর বলিস না, আমার দশটা টাকাই জলে গেল!
চাচায় ছোটবেলার গল্প শোনায়- আমারে নিয়া ছফিনা বো গেছি ক্ষেতে, ছফিনা বো আমারে নিয়া পাটক্ষেতে ঢুকলো, ইয়া লম্বা লম্বা পাঠ দাড়াইলে দেখা যায় না।
আমি কই ছফিনা বো পাটক্ষেতে কির লাইগ্যা যামু, বো কয়- আয় পরে বুঝবি। কিছুক্ষন পর বাইরে পাটের লড়ন চড়ন দেইখ্যা মধু মিয়া কয়- পাটক্ষেতে কেডা রে? আমি কই- আমি আর ছফিনা বো ঘন পাতা বাছি। (দুঃখিত বাকিটা অপ্রকাশিত চাচা বলে নাই)
বছর দশেক আগে চাচার বাবা মারা গেল, চাচায় তো কাঁদতে কাঁদতে বিনাশ। সবাই স্বান্তনা দিল, কাইন্দ্যে না আমরাই তোমার বাপ, চাচা শান্তি পাইয়া কান্না বন্ধ করলো, পরের বছরই মারা গেল চাচার মা, চাচায় তো দিশেহারা, চিৎকার করতে করতে কইলো আমার মায় নাইরে আমার মায় নাই। সবাই আবার স্বান্তনা দিল আমরাই তোমার মা কাইন্দো না।
চাচার কান্না শেষ। দুই বছর পর চাচার বউ গেল মারা, চাচায় কান্দে আর কান্দে, একদিন দুইদিন এইভাবে এক সপ্তাহ। সবাই কয় করিমের বাবায় মরলো, মায় মরলো করিমরে তো এতো কাঁদতে দেখি নাই এখন দেখি বউয়ের জন্য্ এতো কান্না? ও করিম বউয়ের লাইগ্যা এতো মায়া? চাচায় কয়- দূর এসব কিছু না আমার বাবা মরল সবাই কইল আজই থাইক্যা আমরা তোমার বাবা, মায় মরলো সবাই কইল আইজ থাইক্যা আমরা তোমার মা, কিন্তু আমার বউডা মরলো কেউ এখনও কইলো না- আইজ থাইক্যা আমি তোমার বউ!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।