ভাল লাগার ও না লাগার কিছু কথা
ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা। বিশেষ কোন মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ভালোবাসা। তবুও ভালোবাসাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়। আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয়,বিশেষ কারো সাথে নিজের সকল মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেয়া, এমনকি শরীরের ব্যাপারটাও এই ধরনের ভালোবাসা থেকে পৃথক করা যায়না। আর এই ভালোবাসা জন্যই মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাঁর স্ত্রী আরজুমান্দ বানু জন্য তৈরী করেন আশ্চর্য্য এক নিদর্শন ।
তাজ মহল ভারতের আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাঁর স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম যিনি মুমতাজ মহল নামে পরিচিত তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন। । সৌধটি নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে যা সম্পূর্ণ হয়েছিল প্রায় ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে। সৌধটির নকশা কে করেছিলেন এ প্রশ্নে অনেক বিতর্ক থাকলেও, এ পরিষ্কার যে শিল্প-নৈপুন্য সম্পন্ন একদল নকশাকারক ও কারিগর সৌধটি নির্মাণ করেছিলেন যারা উস্তাদ আহমেদ লাহুরীর সাথে ছিলেন, যিনি তাজ মহলের মূল নকশাকারক হওয়ার প্রার্থীতায় এগিয়ে আছেন।
তাজ মহলকে (কখনও শুধু তাজ নামে ডাকা হয়) মুঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয়, যার নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুর্কী, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যেশিল্পের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। যদিও সাদা মার্বেলের গোম্বুজাকৃতি রাজকীয় সমাধীটিই বেশি সমাদৃত, তাজমহল আসলে সামগ্রিকভাবে একটি জটিল অখন্ড স্থাপত্য। এটি ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। তখন একে বলা হয়েছিল ।
তাজ মহল
..........................................................................................................
মুঘল সম্রাট শাহজাহান এর স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম এর পরিচিতি :
মুমতাজ মহল সাধারন ডাকনাম আরজুমান্দ বানু বেগম , যিনি ভারতের আগ্রায় ১৫৯৩ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে জন্মগ্রহন করেন।
তার পিতা ছিলেন পারস্যের মহানুভব আবদুল হাসান আসাফ খান, যিনি সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নূর জাহানের ভাই। মুমতাজ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। তার বিয়ে হয়েছিল মাত্র ১৯ বছর বয়সে মে ১০, ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে যুবরাজ খুর্রম এর সাথে, যিনি পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট শাহ জাহান (প্রথম) নামে তাখ্ত ই তাউস বা ময়ূর সিংহাসনে বসেন। মুমতাজ শাহ জাহানের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন এবং তিনি শাহ জাহানের পছন্দের ছিলেন। মুমতাজ মৃত্যুবরণ করেন ডেক্কান বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের অন্তর্গত বুরহানপুরে জুন ১৭, ১৬৩১ খ্রিস্টাব্দে তার চতুর্দশ সন্তান জন্মদানের সময়, এক কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন নাম রাখা হয়েছিল গৌহর বেগম।
মৃত্যুর পর মুমতাজকে সমাহিত করা হয়েছিল আগ্রার তাজ মহলে।
আরজুমান্দ বানু বেগম ,আঁকা ছবি
...........................................................................................................
মুঘল সম্রাট শাহজাহান এর পরিচিতি :
* জন্মের সময় রাখা নাম : গিয়াস-উদ্দিন মুহাম্মদ
* পারিবারিক নাম : তীমুরীয়
* উপাধী : মুঘল সম্রাজ্যের সম্রাট
* জন্ম : জানুয়ারি ৫, ১৫৯২
* জন্মস্থান : লাহোর
* মৃত্যু : জানুয়ারি ২২, ১৬৬৬
* মৃত্যুস্থান : আগ্রা
* সমাধী : তাজ মহল
* উত্তরাধিকারী : আওরঙ্গজেব
“ভূ-গোলকের উপর শাহ জাহান” স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউট থেকে নেওয়া ।
.........................................................................................................
তাজ মহল তৈরীর সূচনা :
১৬৩১ খ্রিস্টাব্দে শাহ জাহান, যিনি মুঘল আমলের সমৃদ্ধশালী সম্রাট ছিলেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রী মুমতাজ মহল এর মৃত্যুতে প্রচন্ড ভাবে শোকাহত হয়ে পড়েন। মুমতাজ মহল তখন তাদের চতুর্দশ কন্যা সন্তান গৌহর বেগমের জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন ।
তাজ মহলের নির্মাণ কাজ মুমতাজের মৃত্যুর খুব শীঘ্রই শুরু হয়। মূল সমাধিটি সম্পূর্ণ হয় ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে এবং এর চারদিকের ইমারত এবং বাগান আরও পাঁচ বছর পরে তৈরি হয় ।
নির্মাণ :
তাজ মহল দেয়াল ঘেরা আগ্রা শহরের দক্ষিণ অংশের একটি জমিতে তৈরি করা হয়েছিল যার মালিক ছিলেন মহারাজা জয় শিং। শাহজাহান তাকে আগ্রার মধ্যখানে একটি বিশাল প্রাসাদ দেওয়ার বদলে জমিটি নেন। তাজ মহলের কাজ শুরু হয় সমাধির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে।
প্রায় ৩ একর জায়গাকে খনন করে তাতে আলগা মাটি ফেলায় হয় নদীর ক্ষরণ কমানোর জন্য। সম্পূর্ণ এলাকাকে নদীর পাড় থেকে প্রায় ৫০ মিটার উঁচু করা সমান করা হয়। তাজ মহল ৫৫ মিটার লম্বা। সমাধিটি নিজে ব্যাসে ১৮ মিটার এবং উচ্চতায় ২৪ মিটার।
ভিত্তি আর সমাধি নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল প্রায় ১২ বছর।
পুরো এলাকার বাকি অংশগুলো নির্মাণ করতে লেগেছিল আরও ১০ বছর। (যেহেতু চত্তর এলাকাটি কয়েকটি ভাগে নির্মিত হয়েছিল তাই তৎকালী ইতিহাস লেখকগণ নির্মাণ শেষের বিভিন্ন তারিখ উল্লেখ করেন। যেমন সমাধিটির কাজ শেষ হয়েছিল ১৬৪৩ খ্রিস্টাব্দে, কিন্তু বাকি অংশগুলোর কাজ তখনও চলছিল।
...........................................................................................................
কারিগর :
তাজ মহল কোন একজন ব্যক্তির দ্বারা নকশা করা নয়। এ ধরণের প্রকল্পে অনেক প্রতিভাধর লোকের প্রয়োজন।
বিভিন্ন উৎস থেকে তাজ মহল নির্মাণ কাজে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের বিভিন্ন নাম পাওয়া যায়।
* পারস্যদেশীয় স্থপতি, ওস্তাদ ঈসা; চত্তরের নকশা করার বিশেষ ভূমিকায় অনেক স্থানেই তার নাম পাওয়া যায় ।
* পারস্য দেশের (ইরান) বেনারসের ‘পুরু’; ফারসি ভাষার এক লেখায় তাকে তত্ত্ববধায়ক স্থপতি হিসেবে উল্লেখ করেছে।
* বড় গম্বুজটির নকশা করেছিলেন ওত্তোমান সম্রাজ্য থেকে আসা ইসমাইল খাঁন , যাকে গোলার্ধের প্রথম নকশাকারী এবং সে যুগের একজন প্রধান গম্বুজ নির্মাতা মনে করা হয়।
* কাজিম খাঁন, লাহোরের বাসিন্দা, বড় গম্বুজের চূড়ায় যে স্বর্ণের দন্ডটি ছিল, তিনি তা গড়েছিলেন।
* চিরঞ্জিলাল, একজন পাথর খোদাইকারক যিনি দিল্লী থেকে এসেছিলেন; প্রধান ভাস্কর ও মোজাইকারক হিসেবে নেওয়া হয়েছিল ।
* পারস্যের (সিরাজ, ইরান) আমানত খাঁন, যিনি প্রধান চারুলিপিকর (তার নাম তাজ মহলের প্রবেশপথের দরজায় প্রত্যায়িত করা আছে, সেখানে তার নাম পাথরে খোদাই করে লেখা আছে)
* মোহাম্মদ হানিফ রাজমিস্ত্রিদের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ।
* সিরাজ, ইরান থেকে মীর আব্দুল করিম এবং মুক্কারিমাত খাঁন, যারা ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক দিকগুলো সামাল দিতেন ।
.......................................................................................................
মালামাল সামগ্রী, উপাদান ও খরচ
তাজ মহল তৈরি হয়েছে সাড়া এশিয়া এবং ভারত থেকে আনা বিভিন্ন উপাদান সামগ্রী দিয়ে। নির্মাণ কাজ্রে সময় ১,০০০ এর ও বেশি হাতি ব্যবহার করা হয়েছিল নির্মাণ সামগ্রী বহন করে আনার জন্য।
আলো-প্রবাহী অস্বচ্ছ সাধা মার্বেল পাথর আনা হয়েছিল রাজস্থান থেকে, ইয়াশ্ব্- লাল, হলুদ বা বাদামী রঙের মধ্যম মানের পাথর আনা হয়েছেল পাঞ্জাব থেকে। চীন থেকে আনা হয়েছিল ইয়াশ্ম্- কঠিন, সাধা, সবুজ পাথর, স্ফটিক টুকরা। তিব্বত থেকে বৈদূর্য সবুজ-নীলাভ (ফিরোজা) রঙের রত্ন এবং আফগানিস্তান থেকে নীলকান্তমণি আনা হয়েছিল। নীলমণি- উজ্জ্বল নীল রত্ন এসেছিল শ্রীলঙ্কা এবং রক্তিমাভাব, খয়রি বা সাধা রঙের মূল্যবান পাথর এসেছিল আরব থেকে। এ ধরণের আটাশ ধরনের মূল্যবাদ এবং মহামূল্যবান পাথর সাদা মার্বেল পাথরেরে উপর বসানো রয়েছে।
খরচঃ
তৎকালীন নির্মাণ খরচ অনুমান করা কঠিন ও কিছু সমস্যার কারণে তাজ মহল নির্মাণে কত খরচ হয়েছিল তার হিসাবে কিছুটা হেরফের দেখা যায়। তাজ মহল নির্মাণে তৎকালীন আনুমানিক ৩২মিলিয়ন রুপি খরচ হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু শ্রমিকের খরচ, নির্মাণে যে সময় লেগেছে এবং ভিন্ন অর্থনৈতিক যুগের কারণে এর মূল্য অনেক, একে অমূল্য বলা হয়।
.......................................................................................................
পর্যটনকেন্দ্র :
তাজ মহলের নির্মাণের পর থেকেই তাজ মহল বহু পর্যটককে আকর্ষিত করেছে। এমনকি তাজ মহলের দক্ষিণ পাশে ছোট শহর তাজ গঞ্জি বা মুমতাজাবাদ আসলে গড়ে তোলা হয়েছিল পর্যটকদের জন্য সরাইখানা ও বাজার তৈরির উদ্দেশ্যে যাতে পর্যটক এবং কারিগরদের চাহিদা পূরণ হয় ।
বর্তমানে, তাজ মহলে ২ থেকে ৩ মিলিয়ন পর্যটক আসে যার মধ্যে ২,০০,০০০ পর্যটক বিদেশী, যা ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসে ঠান্ডা মৌসুমে অক্টোবর, নভেম্বর ও ফেব্রুয়ারি মাসে। বায়ূ দূষণকারী যানবাহন তাজ মহলের কাছে আসা নিষিদ্ধ তাই পর্যটকদের গাড়ী রাখার স্থান থেকে পায়ে হেঁটে অথবা বৈদুতিক বাসে করে তাজ মহলে আসতে হয় । খাওয়াসপুরা গুলো পর্যটকদের জন্য পুনরায় চালু করা হয়েছে।
রৈখিক চৌবাচ্চার পাশ দিয়ে হাটার রাস্তা
.........................................................................................................
তথ্যসূএ : উইকিপিডিয়া
.......................................................................................................
জানি না পোস্ট টি আপনাদের কেমন লাগলো , যদি ভালো লাগে বা টিউনটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকলে অবশ্যই মন্তব্য করে জানাবেন।
.......................................................................................................
১ম এখানে প্রকাশিত :
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।