আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজ গুনে গুনী মহিমায় মহিয়সী(পর্ব-৩)



”ঈশ্বর থাকেন ঐ গ্রামে ভদ্র পল্লীতে এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না”বিখ্যাত ঔপন্যাসিক মানিক বন্দোপাধ্যায়ের “পদ্মা নদীর মাঝি”উপন্যাসের জেলে সমাজের হত দারিদ্র জেলেদের বুকের গভীর থেকে উপচে পড়া হাহাকার লেখকের লেখণীর দ্বারা কতটা দূর হয়েছে আমি জানি না । তবে আমি দৃঢ় প্রত্যয়ে বলতে পারব কাজী আবেদ হোসেন [এ.ডি.সি রেভিনিউ,কিশোরগঞ্জ]এর কথা। যিনি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার জেলে সমাজে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। জেলে সমাজকে করেছেন সাবলম্বী। কোন রূপকথার গল্প নয় কাজী আবেদ হোসেন স্বয়ং মোহনগঞ্জের জেলে সমাজের ভাগ্য উন্নয়নের রূপকার।

কাজী আবেদ হোসেন যেন জেলে সমাজের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য জেলে সমাজের প্রতিনিধি হয়ে গেলেন” আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপের ”মত। অশিক্ষিত জেলে সমাজকে আপন করে নিয়ে নিজের বুদিধ আর বিচক্ষণতা দিয়ে তিনি প্রমান করলেন সৎ মনোভাব থাকলে যে কোন কাজেই সফলতা লাভ করা যায়। শিখা পত্রিকায় পড়েছিলাম” জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ,বুদ্ধিযেখানে আড়ষ্ট,মুক্তি সেখানে অসম্ভব”। আমি ব্যক্তিগতভাবে ভাবি এই উক্তি জেলে সমাজের জন্য প্রযোজ্য কিন্তু কাজী আবেদ হোসেন তার অক্লান্ত পরিশ্রম আর সৃজনশীল মেধা দিয়ে উপরের উক্তির অসম্ভবকে সম্ভব করে তুললেন যা জেলে সমাজের জন্য প্রশংসনীয়। সালটা ২০০৮ কাজী আবেদ হোসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্ব নিয়ে আসেন নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায়।

কাজে যোগদানের সাথে সাথে তিনি পুরো মোহনগঞ্জ ঘুরে দেখেন । এই সময় জেলে পাড়ার দরিদ্র জেলে পরিবারগুলো দেখে তিনি আহত হন আর মনে মনে ভাবতে থাকেন কিভাবে এদের অভাব দূর করা যায়?কিভাবে এদেরকে সাবলম্বী করা যায়?মাসটা ছিল বৈশাখ তিনি অফিসের সারাদিনের কর্মব্যস্ত সময় পার করে গভীর রাতে গ্রামে গ্রামে গিয়ে সকল জেলে পরিবারকে একত্রিত করে বললেন”তোমরা যদি অভাবমৃক্ত হতে চাও তবে মা মাছ আর পোনা মাছ ধরা বন্ধ কর। জেলেরা অবাক দৃষ্টি নিয়ে বলল মাছ ধরা বন্ধ করলে আমরা না খেয়ে মরে যাব। কাজী আবেদ হোসেন বললেন আমার কথা শুনলে তোমাদের আর অভাব থাকবে না। তিনি বললেন,”বৈশাখ থেকে শ্রাবন মাস মাছের ডিম ছাড়া আর পোনা বড় হওয়ার্ মৌসুম এ সময় তোমরা যদি মাছ ধরা থেকে বিরত থাক তবে মাছ বড় হবার সুযোগ পাবে আর তোমরাও লাভবান হবে তার এই কথায় সকল জেলে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে রাজী হয়ে গেল।

এবার কাজী আবেদ হোসেন ২৪৪বর্গ কি.মি. আয়তনের ১৭৭টি গ্রামের মানুষকে নিয়ে সভা করলেন,মসজিদে গিয়ে জুম্মার সামাজের সময় বক্তব্য দিলেন। তার বক্তব্যে মুগ্ধ হয়ে পুরো উপজেলার ৫০,০০০ হাজার জেলে পরিবারসহ আড়াই লক্ষ মানুষ ৩ মাস মাছ ধরা থেকে বিরত থাকল। । এর ফলশ্রুতিতে ২০০৮সালে মাছের উৎপাদন দাঁড়ায় ৪হাজার মেট্রিকটন,২০০৯সালে ৮মেট্রিকটন এবং২০১০ সালে ১২ মেট্রিকটন। ফিরে আসে জলীয় পরিবেশ।

বিলুপ্ত হওয়া ২০ প্রজাতির বিরল মাছের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। জলজ ওঅন্যান্য প্রাণীর ও বংশবৃদ্ধি বহুগুণ বেড়ে যায়। জেলেরা পূর্বে প্রতিদিন আয় করত দৈনিক ১৫০-২০০ টাকা যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়৮০০-১০০০টাকা। জেলেরা সাবলম্বী হতে শুরু করে। এই কাজেও তিনি সরকারের কোন অর্থ ব্যয় করেন নি।

এছাড়া কাজী আবেদ হোসেন ২০০৮ সালে কথাশিল্পী হুমায়ূন আহম্মেদের স্মৃতি বিজড়িত মোহনগঞ্জ উপজেলার শিয়ালজানি খালাটি অতিরিক্ত ৬কি.মি.স্বেচ্ছাশ্রমে খনন করেন। ২০০৯সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে মাছেদের অভয় আশ্রম হিসেবে স্বেচ্ছাশ্রমে খনন করেন আরও একটি পুকুর । যা মোহনগঞ্জ উপজেলায় “একুশে দিঘী”নামে পরিচিত। এই মহান ব্যক্তির মহান কাজকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আবারো “পদ্মা নদীর মাঝি”উপন্যাসের লেখক মানিক বন্দোপাধ্যায়ের সেই কথাগুলো উল্লেখ করছি”দিন কাটিয়া যায়,জীবন অতিবাহিত হয়,ঋতুচক্রে সময় পাক খায় পদ্মার বুকে,জল ভেদ করিয়া জাগিয়া ওঠে চর। অর্ধ শতাব্দীর বিস্তৃর্ণ সেই চর পদ্মার জলে আবার বিলীন হয়ে যায় কিন্তু জেলেপাড়ার ঘরে ঘরে শিশুদের ক্রন্দন কোনদিন বন্ধ হয় না।

সুখ,দুঃখের দেবতা,হাসি,কান্নার দেবতা,অন্ধকার আত্মার দেবতা ইহাদের পূজা কোন দিন সাঙ্গ হয় না “পরিশেষে এটাই বলতে চাই কাজী আবেদ হোসেনকে অনুসরণ করে যদি কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি জেলে পাড়ার প্রতিনিধি হয়ে কাজ করে তবে জেলেদের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে এবং জেলে পাড়ার ঘরে ঘরে শিশুদের ক্রন্দন বন্ধ হবে আর তাদের পূজাও সাঙ্গ হবে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.