গলায় ব্যাথা!! আওয়াজ তুলতে পার্তাসি না!!
এক
রাত ১২টা বেজে কিছূ বেশী, লোড শেডিং, আধো আলো আধো অন্ধকারে মেয়েটির মুখটা ভালমত দেখা যাচ্ছে না। যেটুকু বোঝা যায় তাতে ওর চেহারায় আতংক আর অসহায়ত্বের ভাব। উৎসুক কিছু লোক ভীর জমিয়ে আছে, কিন্তু কেউ সাহস করে ওকে কিছু বলছেনা পাছে কোন ঝামেলা হয় এই ভয়ে। জটলাটা বেশ ভালই জমেছে, মানুষের কোলাহর শুনে পলাশ এসে একটু উকি দিচ্ছে আবার চলে যাচ্ছে, কিছুক্ষণ পর পলাশ ভীড় ঠেলে ভেতরে ঢুকল।
- এই মেয়ে নাম কি তোমার? কোন জবাব নেই, নীরবতা
কোন ভয় নেই তোমার নামটি বল, কোথায় থাক?
- কোথায় যাবে বল? আমরাই তোমাকে পৌছে দেব,
কোন কথা নেই, বাম হাতের পিঠ দিয়ে মুখে জমে থাকা রক্ত মুছে আবার নীরব হয়ে গেল শুধু মটির দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে।
দুই
রাত বাড়ছে, মানুষের ভীড় কিছুটা কমে এসেছে, কিন্তু মেয়েটা ঠিক সেখানেই বসে আছে। শোন…
- তুমি এখানে নিরাপদ, তোমাকে কেউ কিছু বলবে না, আমার কাছে বলতে পারো কি হয়েছে তোমার, এখানে কেমন করে এলে? কোথায় যাবে? আর তোমার এই অবস্থা কি করে হল?
অবশেষে মুখ খুলল সে
০ আমার নাম নাদিয়া,
আবার কান্না জুড়ে দিল
হঠাৎ করে মুরব্বী গোছের একজন বলল
= আহা কানতাছ কেন মা, কান্দাকান্দি করার মত কিছু হয় নাই, বাড়ীর ঠিকানা দেও তুমারে দিয়া আহি।
কিছু ক্ষণ পর ….
= মুখটা একবারে শুকনা সারাদিন কিছু খায় নাই মনে হয়।
লোকটা এবার পলাশের দিকে তাকিয়ে
= আরে মিয়া তুমি তো দেখতাছি মাইয়াডারে পুলিশের নাহান জেরা করতাছ? একবার কি জিগাইছ পেটে দানাপানি আছে কিনা? খালি তামাশা দেহে।
লোকটির কথায় নিজেকে অপরাধী মনে হল, আসলেই খাবারের ব্যাপারটা আমার মাথায় আসল না!
এর মধ্যে কেউ একজন পাউরুটি ও কলা নিয়ে হাজির।
এবার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে লোকটি বলল- আচ্ছা কওতো মা কই যাইবা?
জানিনা, মেয়েটির জবাব
সবাই যেন বাকরুদ্ধ! এত বড় (বয়স আনুমানিক ১৮-২০) মেয়ে এত রাতে কোথায় যাবে তাও জানে না! সবাই এম ভাবে তাকাল যেন চিড়িয়াখানার কোন জন্তুকে দেখছে।
আবার লোকটি বলল মা তুমি আমারে তোমার বাপ মনে করতে পার, আমারে কও কী হইছে তোমার। লোকটি ধীরে ধীরে মেয়েটিকে প্রশ্ন করছে, মেয়েটি কান্নাজড়িত কন্ঠে অল্প করে তার উত্তর দিচ্ছে। আর পলাশ ভীড় ঠেলে বাইরে দাড়িয়ে আকাশ দেখছে।
তিন
রাত আনুমানিক তিনটা পলাশ, মুরব্বি লোকটি ও তার সাথের একজন বাদে বাকী সবাই যে যার মত চলে গেছে।
এবার মেয়েটা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বসে আছে
আচ্ছা, আপনি কোথায় থাকেন? আপনার বাবার নাম কি? আপনার এ অবস্থা কি করে হল? এখানে কি করে এলেন? এক নাগারে প্রশ্ন গুলো ছুড়ে দিল পলাশ।
এমন সময় লোকটি বল
= দুর মিয়া দেখতাছ না মাইয়াডা অসুস্থ, এত কি জিগাও? পারলে অর থাকার ব্যবস্থা কর রাইত কম অয় নাই।
পলাশ আবার লজ্জিত বোধ করল
=মিয়া কি ভাবতাছ?
-না কিছু না, আচ্ছা চাচা, আপনার বাড়ীতে রাখা যাবে?
০ আমার জন্য আপনাদের ভাবতে হবে না, আমি সকাল হলে চলে যাব, রাত প্রায় শেষ।
সবাই যেন চমকিত হল, এত ক্ষণে মেয়েটি কথা বলল
= তুমার কতায় ত শিক্ষিত মনে হয়, তুমার এই অবস্থা……….
০ কিছু হয় নি। আপনার আমার জন্য অনেক ক্ষণ ধরে এখনে আছেন, আমি সুস্থ আছি, আপনাদের ধন্যবাদ।
আমি চলি।
= তাইলে তুমার গায়ে রক্ত কিসের? এত রাইতে কই যাইবা?
০ বাসষ্ট্যান্ড, সকালে ফাস্ট ট্রিপেই ঢাকা চলে যাব, আমি ঢাকাতেই থাকি।
- এখানে এসেছিলেক কেন? জিজ্ঞাসু দৃষ্টতে তাকায় পলাশ
০ এমনি, বাসা রাগ করে।
= রাস্তায় গাড়ি একসিডেন করছে?
মেয়েটি কোন জবাব দেয় না।
চার
ফযরের আযান দিতে অল্প কিছুক্ষন বাকী, লোকটা মসজিদে যাবার আগে মেয়েটির উদ্দ্যেশে
= মা, তুমার কাছে টেকা আছে গাড়ী ভাড়া? না দিমু কিছু? না মানে দরকার হইলে ধার নেও পরে এইদিকে আইলে ফেরৎ দিও?
০ জ্বি না চাচা মিয়া লাগবে না, আপনাকে ধন্যবাদ
- আমার বাসা থেকে ফ্রেশ হয়ে নিন কাছেই, মুখে রক্তের দাগ লেগে আছে তাই বললাম।
অনুযোগের সুরে বলল পলাশ
০ লাগবে না। (বেশ ধারালো কন্ঠে এবার বলল কথাটি)।
আপনি সারা রাত জেগে ছিলেন এখন বাড়ীতে গিয়ে একটু ঘুম দিন। এখন কেউ নেই, দু’জনকে এভাবে দেখলে আপনাকে খারাপ ভাববে। আসি।
এই বলে সে বাস স্ট্যান্ডের দিকে হাটতে লাগল।
পাঁচ
পর দিন সকালে, বেশ দেরী করেই ঘুম থেকে উঠল পলাশ, নাস্তা সেরে দোকানে গেল চা খেতে। দোকান বলল
: ভাইজান খরব হুনছেন?
- কি?
: কাইল রাইতে যে মাইয়াডা রাস্তায় বইয়া আছিল হেয় মইরা গেছে
কথাটা শুনেই পলাশ কেমন যেন হয়ে গেল, আবার নিজেকে সামলে বলল কিভাবে?
: সকালে নদীত ঝাপ দিয়া মরছে, পুলিশ আইয়া লাশ লইয়া গেছে।
পলাশ কোন কথা না বলে বাড়ীর দিকে হাটতে থাকে।
বাসায় এসে কারো সাথে কোন কথা না বলে চুপ করে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে শুয়ে রইল।
ছয়
তিন দিনপর..
দুই দিন ধরে পলাশ নিরুদ্দেশ, অনেক খোঁজা খুঁজি করেও কোন লাভ হয়নি।
সকাল বেলা পলাশের মা ওর ঘরে পড়ার টেবিলের ড্রয়ারে একটি ভাজ করা কাগজ পেলেন, সেটা ছিল চিঠি, চিঠিটা পড়তে লাগলেন তিনি………..
মা,
আমি চলে যাচ্ছি, আর আসব না, কালরাতে যে মেয়েটা সারা রাত রাস্তায় বসে ছিল, সে আমার কাছেই এসেছিল ও আমাকে ভালবাসে আমিও তাই। ওর নাম নাদিয়া। নাদিয়ার বাবা ওকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছিল তাই সেদিন ও পালিয়ে আমার কাছে আসছিল আর আমি রখন তোমাকে নিয় হাসপাতালে ছিলাম। নাদিয়ার আসতে আসতে রাত প্রায় ১১টা বেজে গিয়েছিল কিন্তু আমি তখনো সেখানে পৌছাতে পারি নাই, ওকে একা পেয়ে কিছু জানোয়ার ওকে………..।
আমি যখন বাসষ্ট্যান্ড গেলাম তখন দেখি নাদিয়া চুপ করে এক কোণে বসে কাদঁছে, জিজ্ঞেস করতেই ও সব কিছু আমাকে বলল…..
আমি ব্যাপারটা সহজ ভাবে নিতে পারলাম না। নাদিয়কে ফিরে যেতে বললাম। নাদিয়া স্বর্গে ফিরে গেছে এই নিষ্ঠুর পৃথিবী ছেড়ে। ওর মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী। আমি অপরাধী, তাই একজন অপরাধীর মত জীবন থেকে পালিয়ে বেড়ানো জন্যই, আমি চলে যাচ্ছি …।
কোন নির্দিষ্ট গন্তব্যে নয়।
তোমার অপরধী ছেলে..
পলাশ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।