প্রকৃতিকে করো তব দাস-চে দ্য আইডল (ব্লগার নং - ৩১৩৩৯)
হলদে আগুন মেয়ে .......... আগের পর্ব
জ্যোতির বাড়ি দেশের উত্তরে। মা মারা যাবার পর প্রচলিত নিয়মের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে বাবা আরেকটি বিয়ে করলে জ্যোতির কপাল প্রায়োগিকভাবেই ভেঙে পড়ে। সৎমা নামক অদ্ভুত মানুষটির দৈনন্দিন অত্যাচার আর ঈশ্বর নামক অদ্ভুত সত্তার খেলার অনুসঙ্গ মঙ্গার কষ্ট সইতে না পেরে কোন দিন থানাসদরেও পা না ফেলা জ্যোতি পাশের বাড়ির খালার হাত ধরে চলে আসে চট্টগ্রাম। জ্যোতির দেখা অত্যল্পসংখ্যক ভালো মানুষের অন্যতম খালা টি কাজ জুটিয়ে দেয় এক গার্মেন্টসে। মাসে আটশ' টাকা বেতন।
কোন রকমে মাথার উপর একটি ছাদ আর দু'বেলা শাক ভাত জোটে।
জ্যোতি এতেই খুশি।
সমস্যা দেখা দেয় অন্য জায়গায়। দেখতে ভালো কিংবা পুরুষতান্ত্রিক সংজ্ঞায় সুন্দরী হওয়ায় গার্মেন্টেসের অনেকেই ঘেঁষাঘেঁষি শুরু করে। সবাই কে এড়িয়ে চলতে চলতে একসময় হেরে যায় ছিমছাম লম্বা এক ছেলের কাছে।
ছেলেটার বাড়িতে শুধু মা আছেন। জ্যোতির কেউ নেই। একটা নিরাপত্তা কিংবা আশ্রয়ের খোঁজেই প্রেমে পড়ে জ্যোতি।
ছেলেটার সাথে ছুটির পর অনেকক্ষণ হাঁটে সে। ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়ালেখা করা জ্যোতি নজরুল কে চেনে।
নজরুলের ছবি ঝুলানো পার্কে কিংবা খ্রীষ্টানদের কবরস্থানে বসে ওরা প্রায়ই। মাঝে মাঝে আলমাসে ছবি দেখে। একদিন পতেঙ্গায় সমুদ্রের জলে পা ভিজিয়েও আসে। জীবনের কঠিন পিঠ দেখে অভ্যস্থ জ্যোতির এই দিন গুলো কাটে স্বপ্নের মত!!
মাস দুই পরে ছেলেটা বিয়ের কথা তোলে। পতেঙ্গার পাথরের ফাঁকে ছেলেটার জোর করে চুমু খাওয়ার অনুভূতি জ্যোতি কে লজ্জায় ফেলে দেয়।
সে টের পায়,কান আর গাল লাল হয়ে উঠছে।
জ্যোতির না বলার কোন কারণ ছিলো না। সেদিন বিকেলেই বিয়ে করে ওরা। গলির মসজিদের ইমাম বিয়ে পড়ান।
ছেলেটা জ্যোতির ঘরে এসে উঠে।
সেইরাত জ্যোতির চোখে এখনো জ্বলজ্বল। বুভুক্ষের মত ছেলেটার হামলে পড়া-তাড়াহুড়োয় জ্যোতির ব্লাউজ ছিঁড়ে ফেলা-ঠোঁট কামড়ে রক্তাক্ত করে ফেলা সব কিছুতেই জ্যোতি একটা অদ্ভুত ভালোলাগা খুঁজে পেতে থাকে। একটা অন্যরকম সুখ,যা সৎমার নির্যাতনের হাতিয়ার হয়ে উঠা জ্যোতির হলুদাভ দেহ আগে কখনো পায় নি।
ছেলেটা একসময় ক্লান্ত হয়ে পাশে শুয়ে পড়লেও জ্যোতি চোখ বন্ধ করেছিলো। জ্যোতির দেহে তখনো আগুনের ফুলকি-একটু জলের তরে ভেতরটা পুড়ে অঙ্গার হয়ে উঠলেও চোখে কোন অভিযোগ ছিলো না।
হপ্তাখানেক পার না হতেই জ্যোতির সব নির্ভরতা আর ভালোলাগা কে পায়ে দলে ছেলেটা উধাও হয়ে যায়। দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে সে। দিশেহারা জ্যোতির জন্য আশার বাণী নিয়ে সামনে দাঁড়ায় ছেলেটার বন্ধুরা। বলে,ছেলেটার ঠিকানা জানে ওরা।
কিছু না ভেবেই উতলা জ্যোতি ওদের সাথে উপস্থিত হয় এক নির্জন বাড়ি তে।
ঝাপটে ধরে সবাই মিলে। নিমেষেই সালোয়ার-কামিজ হারিয়ে মেঝেতে সমস্ত বিশ্বাস নিয়ে নগ্ন হয়ে পড়ে জ্যোতি। বুকে পিঠে আঁচড় আর খামচির অত্যাচারে জ্যোতির চিৎকাররত কন্ঠ নিভে আসে। সমস্ত শক্তি দিয়েও আটকাতে পারে না ওদের সম্মিলিত রতিক্রিয়া!অসহায় জ্যোতি অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
রক্তাক্ত অজ্ঞান দেহ টা কে তুলে এনে চমেক হাসপাতালের বারান্দায় কে ফেলে আসে,তাও জ্যোতির জানা হয় না।
তবে জানা হয়ে যায়,এ হাসপাতালও নিরাপদ নয়।
গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেলে দেখে,এক লোক তার সালোয়ার ধরে টানছে!!
কষে লাথি মারতে গিয়ে পা ই নাড়াতে পারে না সে। জোরে কেঁদে উঠে। লোকটা সরে যায়।
সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে সকালে কোনরকমে হাতে অল্পবয়েসী ডাক্তার আপার কিনে দেয়া অষুধ নিয়ে ঘরে ফেরে সে।
ক্ষুধা,ঘৃণা আর দৈহিক কষ্ট ঠোঁট বুঝে সহ্য করে দিনদশেক পরে জীর্ণ শীর্ণ জ্যোতি কাজে গিয়ে শোনে,চাকরী টা আর নেই। পাওনা টাকা চাইতে গেলে উল্টো গালিগালাজ করে বের করে দেয়া হয় জ্যোতি কে।
পাশের বাসার মেয়েটার দেয়া আধপ্যাকেট রুটি আর পানি খেয়ে দুদিন ধরে ঘুরেও কোথাও কোন কাজ পায় না সে।
ক্ষুধার কাছে আজন্ম অসহায় জ্যোতি দাঁড়াতে শুরু করে রাস্তার মোড়ে। ইনকাম ভালোই হয়।
পুরুষদের চোখ ধাঁধাঁনোর মত একটা শরীর দেয়ার জন্য এই প্রথম সে আল্লাহর প্রতি অভিযোগের বদলে কৃতজ্ঞতা জানায় সে!!
জ্যোতি ঢুকরে কেঁদে উঠে। আমি চমকে উঠি। আমার ইচ্ছে করে,তার ফুলে ফুলে উঠা পিঠে হাত রাখি। কিন্তু ভয় হয়!
ওখানে যতগুলো পুরুষের হাত পড়েছে,সবই কামনার। আমার টা যে তা নয়,জ্যোতি কি বুঝবে?না বোঝারই কথা।
মানিব্যাগের চিপায় রাখা সিকিউরিটি মানির নোট টা তার পায়ের কাছে রেখে নিঃশব্দে সরে আসি।
বাইরে সুন্দর গোল চাঁদ উঠেছে। কিন্তু চাঁদ এত ঝাপসা কেন?না। চাঁদ নয়। চোখ ঝাপসা।
পুরুষালী লজ্জায় দ্রুত চোখ মুছে ফেলি।
আজন্ম চন্দ্রাহত আমি। জ্যোতি কে ডাকতে ইচ্ছে করছে। তার হলদে আভা গালে জমা শাদা শাদা অশ্রু মুছে দিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে,চলো,আজ সারারাত আমরা হাঁত ধরে হাঁটবো। অলি-গলি-রাস্তা পেরিয়ে একসময় পৌঁছে যাবো লালখান বাজার।
ওখানে একটা চায়ের দোকান সারারাত খোলা থাকে।
কিন্তু জ্যোতি কে ডাকা হয় না আমার। হয় না কিছু বলাও। তার কান্নার শব্দের মুখোমুখি দাঁড়াবার সাহস কিংবা সামাজিক বন্দীত্বের দেয়াল ভাঙার শক্তি কোনটাই আমার নেই।
পা বাড়াই।
পেছনে ক্রমে ক্রমে অস্পষ্ট হতে থাকে জ্যোতির কান্না। চাঁদের দিকে তাকাই। চাঁদ টাকে হলুদ মনে হচ্ছে। চারপাশে হলুদ জোছনা।
মনে হচ্ছে চাঁদ নয়,জ্যোতির মুখ আকাশের গায়ে ঝুলছে।
আর তা থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসছে হলুদ ঘৃণার আগুন!!
নিকৃষ্ট ক্ষুদ্র আমি পুড়ে যাচ্ছি সেই হলদে আগুনে!!!
{সমাপ্তি}
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।