এই কি ভাবছ ?
ভাবছি কেমন করে ডিম থেকে মশার জন্ম হয় . . . .আমি হো হো হাসলাম অনিমার দিকে তাকিয়ে।
তুমি কি কোন দিন মানুষ হবে না। আমার অন্য বান্ধবীরা কতশত গল্প করে তাদের প্রেমিকদের নিয়ে। আর আমি ?
তুমি কি ? একটা গাধাকে ভালবাসলে তাই কিছু বলতে পারো না!
আমি কি তাই বলেছি নাকি? একটু অভিমানের সুরে অনিমা আমার দিকে তাকাল।
আমি হাসলাম. . . কি করব বল... তুমি তো জানো আমি এমনই... একটু বেখেয়ালি. . .ভুলোমনা।
অনিমা আমার হাত ধরে বলল, তুমি এমন বলেই তোমাকে ভালোবাসি। বুঝলে হাঁদারাম।
আমি গদগদ হয়ে অনিমার মোমের মত হাতে হাত বুলাই।
চারুকলার ঠিক এখানটানতেই আমরা বসতাম। আমি আর আমার অনিমা।
অনিমা প্রতিদিন আমার জন্যে এটা সেটা বানিয়ে নিয়ে আসত। আমি খেতে খুব ভালোবাসি তাই।
আমি ওকে চমকে দেওয়ার জন্যে কত মজার কান্ড যে করতাম ! একবার রাস্তায় সবার সামনে ওর মুখটা দু হাতে ধরে আলতো করে চুমু খেলাম হঠাৎ করে।
ওর কি লজ্জা ! এক দৌড়ে সেই রোকেয়া হল । আরেকবার ডেটিং করতে গিয়েছি সোহরাওয়ারর্দী উদ্যানে ।
সাথে নিলাম মশার কয়েল। অনিমা হেসেই খুন । কত যে বৃষ্টি আর রোদ একসাথে গায়ে মেখেছি তার হিসেব নেই।
ও ফুল খুব পছন্দ করত। আমি শাহবাগের ফুলের দোকান খুঁজে খুঁজে কালচে লাল গোলাপ কিনতাম।
আমি জানি কালচে লাল রঙের গোলাপের একটা সুগন্ধ আছে যা অনিমার খুব পছন্দের।
দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আগের দিন অনিমা আসল আমার কাছে। পরনে হলুদ শাড়ি। কালো ব্লাউজ। হলুদ রং টা সবাইকে মানায় না ।
কিন্তু অনিমাকে খুব সুন্দর লাগছিল । একটা হলদে পরী যেন ।
আমি হলদে পরীর হাত ধরে বললাম, গ্যাঁদার মা, তুমি চলে গেলে আমি কেমন করে থাকব ? আমাকে কে গাধা বলে ডাকবে ? কে আমাকে খাওয়াবে ? কাকে কালচে লাল গোলাপ দেব আমি ?
অনিমা দাঁতে তার নিচের ঠোঁট চেপে ধরে । বলে, বোকা ছেলে , আমিতো পড়তে যাচ্ছি । স্কলারশিপ নিয়ে ।
তুমি চাওনা ? তোমার অনিমা আরো পড়াশোনা করুক।
আমি কিছুই শুনছি না। আমার চোখ তখন মাটির দিকে । টপ টপ করে আমার চোখের জল স্যান্ডেলে পড়ে। আমি চুপ করে থাকি।
অনিমাকে কালচে গোলাপ কিনে দিই । ওকে ওর খালার বাসায় দিয়ে আসি। ওর কাছ থেকে আসার সময় একটা বারের জন্যেও পিছন ফিরে তাকাই নি। কারণ আমি জানি আমার হৃদয়ের জোর খুব কম।
ও চলে যাওয়ার দুদিন পর. . .নাটকের রিহার্সেলে ব্যস্ত আমি।
পরশু জাতীয় জাদুঘরে শো । মাথায় বিশাল চাপ । যে করেই হোক অভিনয় করে ফাটাইয়া দিতে হবে। এমন সময় ফোন । ফোনটা অনিমার খালার ।
যা শুনলাম তাতে আমার মাথা কাজ করছিল না।
লন্ডন পৌঁছেই অনিমা আমায় ফোন দেয় । সব ভালোই ছিল । কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায়ই অনিমা রোড অ্যাক্সিডেন্টে গুরুতর আহত হয়। এখন সে সেন্সলেস অবস্থায আছে।
ডাক্তাররা এখনও কিছুই বলতে পারছে না.. . . . . . . .
আমি মনটাকে শক্ত করি. . সৃষ্টিকর্তার কাছে হাঁটুগেড়ে ওকে চাই । নিজের বিনিময়ে হলেও চাই ।
জাতীয় জাদুঘরে শো শুরু হবে একটু পর । হাতে আর ২০ মিনিটের মত আছে। আমি মুখে মেকআপ নিচ্ছি।
হাতে স্ক্রিপ্ট। শেষবারের মত সব সংলাপ ঝালাই করে নিচ্ছি । হঠাৎ ফোনে মেসেজ আসার রিং টোন বেজে উঠল ।
আমি মেসেজটা না রেখেই ফোনটা অফ করে দিলাম ।
ফাটাফাটি অভিনয় করেছি আজ ।
দর্শকদের হাততালি আর শুভাকাক্সখীদের শুভকামনা ভাল লাগছিল। গ্রীনরুমে পৌঁছে সেলফোনটা অন করলাম । সাথে সাথে অনেকের ফোন পেলাম। নিজেকে খুব বড় কিছু মনে হচ্ছিল।
বাসায় ফিরে শাওয়ার নিলাম।
খাওয়া দাওয়া সেরে বিছানায় শুতে গেলাম।
সেলফোনটা হাতে নিয়ে টিপাটিপি শুরু করতে যাব। এমন সময় নিউ মেসেজটা চোখে পড়ল। ইনবক্সে গিয়ে দেখলাম. . অনিমার খালার মেসেজ...ধহরসধ রং ফবধফ..ঢ়ষং ঢ়ৎধু ভড়ৎ যবৎ...
মাথাটা ফাঁকা লাগছিল। মনে হচ্ছিল আমি ভুল দেখছি।
দৌঁড়ে গিয়ে অনিমার দেয়া টেডি বিয়ারটা আঁকড়ে ধরি। আশ্চর্য !!! ভীষণ আবেগী এই আমি একটুও কাঁদছি না। কাঁদব কেন ? আমার চোখের পানি মুছিয়ে দেবার মানুষটাযে হারিয়ে গেছে !!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।