পাখির সুর সহজেই আমাদের আকৃষ্ট করে। বাংলাদেশে অনেক গায়ক পাখির দেখা মেলে। সে রকম একটি গায়ক পাখির সুর শুনতে ও দেখতে দেশের উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ায় বছরে অন্তত একবার যাওয়া হয়। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখিটিকে উঁচু ঝোপের মাথায় ও লম্বা ঘাসের ডগায় বসে বেশ জোর গলায় গান গাইতে দেখেছি। মধুর সে ডাক! টুয়ি-টুয়ি-টুয়ি-টা-হুয়িট-চু...স্বরে সে ডেকে ডেকে সঙ্গিনীকে আকৃষ্ট করে।
তেঁতুলিয়ায় দুর্লভ ও বিরল পাখির দেখা মেলে। জানামতে, বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি শেখ ফরিদ বা কালা তিতিরের শেষ প্রাকৃতিক আবাসস্থলও এ জনপদের কৃষিখেত, ঝোপজঙ্গল ও চা-বাগান। প্রতিবছর কোনো না-কোনো বিরল পাখি দেখা যায় এ জনপদে। হলদে চোখ ছাতারে এ রকমই বিরল আবাসিক পাখি।
সাধারণত উঁচু ঘাস, ঝোপ, তৃণময় পাহাড়ের ঢাল, মাঝারি গুল্মলতা, বাঁশবন, চাষের জমির কাছে ও আখখেতে বিচরণ করে এ পাখি।
২০০৯ সালে তেঁতুলিয়ায় গিয়ে তিন জোড়া ও ২০১৩ সালে গিয়ে এক জোড়া হলদে চোখ ছাতারে দেখেছি। সুরেলা কণ্ঠে আখের বনে উড়ে বেড়াচ্ছিল এক জোড়া পাখি। তারপর আমবনের দিকে উড়ে গেল গান গাইতে গাইতে। এক জায়গায় স্থির হয়ে বেশিক্ষণ ওরা বসে না। ঝোপঝাড়ের মধ্যে পোকা খুঁজে বেড়ায়।
এ পাখি ভীরু স্বভাবের, হঠাৎ ভয় পেলে এ ঝোপ থেকে ও ঝোপে লাফ দিয়ে পালায় এবং দেখতে দেখতে ঝোপের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে যায়। ভয়ে পালানোর সময় কর্কশ স্বরে কিচিরমিচির করে ডাকে।
এ পাখির খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকামাকড়, যেমন শুঁয়াপোকা, ফড়িং ও মাকড়সা। রসাল ফল ও ফুলের মধুও ওদের খুব প্রিয়। মধুর লোভে এরা লাল টুকটুকে ফুলে ভরা মাদার ও শিমুল ফুলে বিচরণ করে।
সচরাচর পরিষ্কার গলায় ডাকে। জুন-নভেম্বর মাসে ঘাসের গোড়ায় কিংবা ভূমির খুব কাছে অন্য উদ্ভিদের ঘাস দিয়ে মোচাকার কিংবা বাটির মতো বাসা বানায়। বাসার বাইরের দিকে দেয় মাকড়সার জালের প্রলেপ। মাটি থেকে প্রায় দুই মিটার উঁচুতে ঝোপের দুই ডালের সংযোগস্থলে বা দুটি ঘাসের ডাঁটার মধ্যে দোলনার মতো করে বাসা বাঁধে ও ডিম পাড়ে। ডিম পাটকিলে সাদা।
সংখ্যায় তিন-পাঁচটি। ডিম ফোটে ১৫-১৬ দিনে। মা-বাবা উভয় মিলে সংসারের কাজ করে।
হলদে চোখ ছাতারে লালচে-বাদামি পাখি। দেহের দৈর্ঘ্য ১৮ সেন্টিমিটার, ওজন ১৮ দশমিক ৩ গ্রাম।
প্রাপ্তবয়স্ক পাখির কান-ঢাকনিসহ পিঠ পুরোপুরি লালচে-বাদামি। ছোট সাদা ভ্রুরেখা হলুদ চোখ ঘিরে রাখে। চোখের বেড় কমলা-হলুদ, থুতনি, গলা ও বুক সাদা, বগল ও তলপেটে রয়েছে হালকা পীত রঙের আভা। ঠোঁট কালো, খাটো, মোটা ও শক্ত। পা ও পায়ের পাতা হলুদ।
কমলা ও বাদামি মুখ প্রজনন মৌসুমে কালোতে রূপ নেয়। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারা অভিন্ন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।