আমি একজন কার্টুন প্রিয় মানুষ। কার্টুন আকঁতে ভালবাসি। পড়তে ভালবাসি।
দিনক্ষণ ঠিকঠাক মনে নেই, তবুও ঘটনাই বলি আর দুর্ঘটনাই বলি আজো মনে পরলে চোখের সামনে সচিত্র প্রতিবেদনের মতো হাজির হয়ে যায়। শুনেছি আমাবর্ষা আর পূর্ণিমা এলেই পুলিশের পেদানীর ব্যাথা ঘরের দড়জায় এসে ঘন্টা বাজায় তাই প্রতি আমাবর্ষা আর পূর্ণিমায় অধির আগ্রহে অপেক্ষা করি কখন আমার দরজায় আসবে তাকে আমি মালা দিয়ে বরণ করব।
যাকাই হোক কথায় আছে “মামা ভাগ্নে যেখানে বিপদ নাই সেখানে” আমার ক্ষেত্রে তার উল্টো............”মামা ভাগ্নে যেখানে, জেনে-শুনে বিপদে পর সেখানে”। হ্যা, যে ভাগ্নের কথা বলছিলাম ওর নাম রেজা। দেখতে শুনতে চিকন-চাকন, লম্বা..... ও দৌড়ে আমার অনেক আগেই গন্তব্যে পৌছাতে পারে।
রেজা আর আমি গিয়েছিলাম আব্বুর ব্যাংক লোন এর কিস্তি দিতে সাভার ই.পি.জেড এর বলিভদ্র বাজার। কাজকম্ম শেষ করে ফিরছিলাম তখন শুনতে পাচ্ছিলাম কোথাও গোলাগুলি হচ্ছে।
বাঙ্গালীরা সভাবেই হয়ে থাকে কোন ব্যাপার বা ঘটনা দেখার প্রতি আগ্রহী, আমরা তার ব্যতিক্রম হলাম না অর্থাত আমরা দুজনও মিশে গেলাম উতসুক জনাতার ভিড়ে। কাছে যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম গার্মেন্টস কর্মীরা বকেয়া বেতন আদায়ের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে আর পুলিশ মামারা পুরান ই.পি.জেড এলাকার ভেতর থেকে রাবার বুলেট আর টিয়ার সেল নিক্ষেপ করছে। শ্রমিকরাই বা কম কিসে তারাও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছে। প্রথম প্রথম দেখে খুব মজা পাচ্ছিলাম কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম পুলিশ মামারা গোল্লাসুট খেলার জন্য বের হয়েছে তখন কি আর করা, সবাই যা করলো আমিও তাই করলাম অর্থাত দে ভো-দৌড়। রেজা আমাকে অনেক পিছনে ফেলে দৌড়াচ্ছে, ওকে দেখে মনে হচ্ছিল অলিম্পিক এর ১০০ মিটার দৌড় -এ ওর স্বর্ণ পদকটা চাই চাই।
আমি ভাবলাম আমি বরং রৌপ্য পদকটাই জিতে নেই কিন্তু ভুলেই গিয়েছিলাম যে দৌড় আর প্রেম আমার কাছে একই রকম কারণ কোনটাই আমার দ্বারা হবে না। রেজাকে বললাম ‘ওরে আমাকে ফেলে যাসনে’ কিন্তু কে শোনে কার কথা..........। কথায় আছে “চাঁচা আপন প্রাণ বাঁচা” সত্যি বলতে কথাটি হওয়া উচিত ছিল “মামা আপন প্রাণ বাঁচা”। তখন জেমস্ গুরুর ১টা গান চিতকার করে গাইতে ইচ্ছে করছিল....“উত্তরে যেতে মানা, দক্ষিণে আনাগোনা, পূর্বে হাতে লাঠি পশ্চিমে দে দৌড়.......”, গুরু ক্ষমা করে দাও শেষ পর্যন্ত তোমার এই দৌড়ের উপদেশ আমি পালন করতে পারিনি। তাই বলে হাল ছেড়ে দেব!!! বেটা মিতুল জলদি কোন উপায় বের কর।
কোন উপায়ন্ত না দেখে মনে মনে ঠিক করলাম পুলিশের সামনে জ্ঞান হারানোর অভিনয় করব কিন্তু জ্ঞান হারানোর অভিনয় আমি করতে পারি না, শুধু হাসি পায়। অবশেষে রাস্তার পাশে থামানো একটা ট্রাকের উপর উঠে সটান হয়ে শুয়ে পরলাম। আমার দেখা-দেখি এক মফিজও আমাকে অনুসরণ করলো। যদিও আমি জানতাম না সে মফিজ কিনা তবুও মফিজ বললাম কারণ কথায় আছে “বৃক্ষ তোমার নাম কি, ফলে পরিচয়”, ঐ নিতান্ত মফিজ প্রকৃতির ভদ্রলোকটিও তার কাজ-কারবারে প্রমাণ করে দিলো সে সত্যি উতকৃষ্ট মানের মফিজ। সে কথা নেই বার্তা নেই হঠাত উঠে দাড়ালো, তাকে দেখে মনে হলো, তিনি কবি নজরুলের বিদ্রোহী কবিতার বিদ্রোহী.........
“বল বীর-
বল উন্নত মম শির,
শির নেহারি’ আমারি নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির !”
পুলিশ মামারা আমাদের দেখে মহা আনন্দিত হলো, তাদের দেখে মনে হলো অনেকদিন পর শ্বশুরবাড়ির মেহমান পেয়েছে।
তাদের মধ্যে থেকে একজন পুলিশ আমার দিকে ছুটে এলো........ তাকে দেখে আমার খুব পরিচিত মনে হচ্ছিল। পরে বুঝতে পারলাম বাঙলা মুভিতে দেখতে-শুনতে এমন জল্লাদ দ্বারা খুব দক্ষতার সাথে ফাঁসির কার্য সম্পন্ন করা হয়। সে আমার সামনে আসা মাত্র তাকে আমি সালাম দিলাম কিন্তু কি সৌভাগ্য আমার সে আমার সালামের উত্তর না নিয়েই খুব শৈল্পিক ভঙ্গিমার পেদাতে শুরু করলেন। তার পেদানোর ভেতর অনেক শৈল্পিকতা লুকিয়ে ছিলো। উনি খুব ছন্দে ছন্দে পেদাতে জানেন।
প্রথমে ভেবেছিলাম উনি প্রতি সেকেন্ড কয়বার পেদাতে পারে তার সঠিক পরিসংখ্যান আজ নিয়েই ছাড়বো কিন্তু আশে পাশে অবস্থানরত পুলিশ মামাদেরও যে শিল্পি হতে ইচ্ছে করে ভুলেই গিয়েছিলাম। যখন সকল পুলিশ একত্রে শিল্পি হয়ে গেল তখন আমি চিতকার করে বলতে লাগলাম “আমি স্টুডেন্ট”.......... সে যাত্রায় বেঁচে গেলাম। ভাগ্যিস পুলিশ মামারা আমাকে কোন অপমান করেনি।
তবে আজ গর্ব করে বলতে পারি, পুলিশ মামারা তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমার মতো অনেক লেখকের জন্ম দিতে পারে। কেন তারা বাংলা একাডেমি অথবা শিল্পোকলা একাডেমি থেকে কোন রূপ এ্যাওয়ার্ড পায় না, সে ব্যাপারে আমি খুব চিন্তিত।
আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন - “আমরা কি পুলিশ মামাদের শিল্পি মনের অমর্যাদা করে তাদের শিল্পি মনটাকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছি না?”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।