I am active.
কম্পিউটার আর ইন্টারনেট জগতের সাথে একটু পরিচিতি আছে তাদের মধ্যে এমন মানুষ খুব কমই আছেন যারা ব্লগ Blogশব্দটির সাথে পরিচিত নন। ব্লগিং কথাটির সাথে আমাদের পরিচয় খুব বেশি দিনের না হলেও বর্তমানে সারা বিশ্বে এটা একটা ক্রেজ হয়ে দাড়িয়েছে। সাধারণ থেকে সেলিব্রেটি আজ সবাই মেতে উঠেছে ব্লগ দুনিয়ায়। যে ব্লগ নিয়ে এত মাতামাতি তার জন্ম কিন্তু বেশ সাদামাটা। বর্তমানের ব্লগ শব্দটির উৎপত্তি weblog শব্দ থেকে।
ব্লগ মূলত একটা ওয়েব সাইট যেখানে এক বা একাধিক ব্যক্তির লেখা ক্রমানুসারে প্রকাশিত হয়। আর যারা এখানে লেখেন তাদের বলা হয় ব্লগার। বর্তমানের প্রায় সব ব্লগেই লেখক-পাঠকের ইন্টার-অ্যাকটিভ অংশগ্রহণের সুবিধা রয়েছে। আর এই বৈশিষ্ট্যই ব্লগের শক্তির একটি বড় উৎস।
ব্লগিং কী?
ব্লগ সাধারণত টেক্সটভিত্তিক হলেও বর্তমানে এতে ছবি, শব্দ, ভিডিও, অন্যান্য ব্লগের ও ওয়েবের লিংক যোগ করে একে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।
আবার কোন কোনো ব্লগ সাইটের প্রধান বিষয় বস্তু থাকে শিল্প। সেগুলোকে বলে আর্ট ব্লগ। ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে ফটোব্লগ, স্কেচের ক্ষেত্রে স্কেচব্লগ, ভিডিওর ক্ষেত্রে ভল্গ শব্দগুলো এখন বেশ বিস্তার লাভ করেছে। আর কনটেন্ট যদি হয় মিউজিক একে বলা হয় এমপিথ্রিব্লগ, আর অডিও হলে পডকাস্টিং। মাইক্রোব্লগিং নামে এক ধরনের ব্লগিং ইদানিং চালু হয়েছে যেখানে পোস্টগুলো থাকে খুব ছোট আকারের।
আবার ব্লগারদের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে ব্লগকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হল পারসোনাল ব্লগ; যেখানে ব্লগার একজনই থাকেন এবং তিনিই তার ব্লগ সাইটটি নিয়ন্ত্রণ করেন। আর আরেক প্রকার ব্লগ হল কমিউনিটি ব্লগ। এখানে একাধিক ব্লগার একসাথে ব্লগ করতে পারেন এবং ব্লগে একজন মডারেটর থাকেন যিনি ব্লগ সাইটটিকে নিয়ন্ত্রণ করেন।
ব্লগের উৎপত্তি
জন বার্জার ১৯৯৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর weblog শব্দটির উদ্ভাবন করেন।
কিন্তু ব্লগ শব্দটির সূত্রপাত ঘটায় পিটার মারহলজ নামের এক তরুণ। তিনিই সর্বপ্রথম weblog শব্দটিকে ভেঙ্গে “we blog” করে নিজের ব্লগ সাইট peterme.com-এর সাইডবারে তা ব্যবহার করেন। এর কিছু দিন পরেই ইভান উইলিয়াম ব্লগ শব্দটির ক্রিয়া ও বিশেষ্য অর্থে শব্দটিকে ব্যবহার করেন। আর ব্লগার কথাটির প্রথম ব্যবহারকারী তিনিই।
আসলে ব্লগ ধারনার উৎপত্তি অনলাইন ডায়েরি থেকে।
জাস্টিস হল ১৯৯৪ সালে এ ধরনের একটি অনলাইন ডায়েরি লেখা শুরু করেন যেখানে তিনি তার দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের কথা লিখে রাখতেন। সে সময়কার আরো দুইজন অনলাইন ডায়েরি লেখকের নাম উল্লেখযোগ্য। তারা হলেন জেরি পারনেল ও ডেভ ওয়াইনার। ব্লগিং শুরুর আগে ডিজিটাল কমিউনিটির বিভিন্ন রূপ ছিল। প্রথম দিকের বাণিজ্যিকভাবে অনলাইন সেবাগুলোর মধ্যে জেনিক্স, কম্পুসার্ভ, ই-মেইল লিস্ট, বি.বি.এস উল্লেখযোগ্য।
যদিও আধুনিক ব্লগের সুবিধাগুলোর কিছুই সেখানে ছিল না।
বাংলাদেশে ব্লগিং
এখন আসছি আমাদের দেশের ব্লগিং এর হালচাল সম্পর্কে। আমাদের দেশে ব্লগিং চর্চা তুলনামুলক একটু দেরিতে শুরু হলেও বর্তমানে তা বেশ জনপ্রিয় রূপ নিয়েছে। ২০০৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর সামহোয়ারইন ব্লগ ডট নেট (somewhereinblog.net) বাংলা ভাষায় প্রথম কমিউনিটি ব্লগ চালু করলে বাংলায় ব্লগিং এর রূপ আরো জোরালো আকার ধারণ করে। সেই পথ ধরে বাংলা কমিউনিটি ব্লগিং -এ যোগ হয়েছে আরো বেশ কয়েকটি নাম।
prothom-aloblog.com, amarblog.com, sachalaytan.com এদের মধ্যে অন্যতম।
কীভাবে ব্লগিং করবেন?
এখন আসি কিভাবে বাংলায় ব্লগিং করা যায় তা নিয়ে। এক্ষেত্রে সবগুলো ব্লগ সাইটই প্রায় এক ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করে। ব্লগে একাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজন একটি বৈধ ইমেইল একাউন্টের। এবার নির্ধারিত সাইটে লগ অন করে সাইটের নতুন রেজিস্ট্রেশনের জন্য দেয়া লিঙ্কে ক্লিক করতে হবে।
এরপর যে ফরম আসবে চাহিদা অনুয়ায়ী নির্ধারিত স্থানে ঠিক ঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করে সাবমিট করলেই সাইটভেদে এক দিন থেকে এক সপ্তাহের মধ্যেই একাউন্টটি চালু হয়ে যাবে। কোন কোন ব্লগে তাৎক্ষণিকভাবেও চালু হতে পারে। এরপর রেজিস্ট্রেশনের সময় দেয়া ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে শুরু করা যাবে ব্লগিং। এখানে একটু বলে রাখছি, রেজিস্ট্রেশনের সময় ইউজার নেম/নিকনেম ও পাসওয়ার্ড লিখতে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ প্রতিবার লগ ইনের সময় এই নিক ও পাসওয়ার্ড প্রয়োজন হবে।
প্রয়োজনীয়তা
এখন প্রশ্ন হল ব্লগিংটা কেন প্রয়োজন। ব্লগিং এর শুরুটা অনলাইন ডাইরি দিয়ে হলেও তা আর এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সময়ের সাথে সাথে ব্লগিংয়ের গুরুত্বও বেড়েছে অনেক। কমিউনিটি ব্লগে অনেক ব্লগার একসাথে ব্লগ করে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান শেয়ার করে বলে নিয়মিত ব্লগ পড়লে জ্ঞানের পরিধি অনেক বেড়ে যায়। বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ আর সমমনা মানুষের সাথে সম্পর্কতো ব্লগে একটা কমন ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।
এছাড়াও নিজের মতাদর্শ সাধারণের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বর্তমানে ব্লগ সাইট একটি জোরালো মাধ্যম। ইদানিং কেউ কেউ কোন পণ্য বা সেবা কিংবা নিজের কর্মকা কেই বিপণন বা প্রচার করার জন্য ব্লগিং সাইটগুলোকে ব্যবহার করছে। আবার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দুর্যোগে, কারো সাহায্যে বা আর্তমানবতার সেবায় ফান্ড গঠনে ব্লগারদের স্বতস্ফূর্ত উদ্যোগ অনেক প্রাণকে বাঁচিয়ে তুলেছে। এমন সব জনসেবামূলক কাজের জন্য?ই ধীরে ধীরে ব্লগিং ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
আবার ধরুন, অনেক সময় মিডিয়ার ওপর বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা নেমে আসে।
তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী রিপোর্ট করতে বাধ্য হয় সংবাদপত্রগুলো। ফলে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য হতে বঞ্চিত হয় সাধার মানুষ। এসময় ব্লগের মাধ্যমেই সঠিক তথ্য প্রকাশ হতে পারে। ইরাকযুদ্ধের সময় সেখানকার ব্লগাররাই প্রকৃত তথ্য বিশ্ববাসীর মাধ্যমে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিল।
অনেকে দুয়েকটি লেখা পত্রিকায় পাঠিয়ে ছাপা না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন।
ছেড়ে দেন অনেক সাধের লেখালেখি। তাদের জন্য ব্লগ একটি চমৎকার মাধ্যম হতে পারে। এখানে আপনি ইচ্ছামত লিখতে পারবেন, কেউ বাধা দেবে না। আর আপনার লেখাগুলো থেকে যাবে চিরকালের জন্য আন্তঃজালের ক্যানভাসে। ১০০ বছর পরে আপনি হয়তো থাকবেন না এ পৃথিবীতে।
কিন্তু আপনার লেখাগুলো পাঠ করে মানুষ উপকৃত হবে শতাব্দী থেকে শতাব্দী। সুতরাং এ সুযোগ কেন হারাবেন? ভেবে দেখুনতো একবার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।