ফজলুল করিমের ভাইয়ের ছেলেদের সঙ্গে তার পরিবারের সম্পর্ক যে ভাল ছিল না, আরেক আত্মীয়র কথা থেকেও তা উঠে এসেছে।
২০০৭ সালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইড) থেকে অবসরে যাওয়া ফজলুল করিম (৬০) বৃহস্পতিবার সকালে তার বাসায় খুন হন।
অতিরিক্ত উপ কমিশনার মেহেদী হাসান জানান, পশ্চিম রামপুরার ওয়াপদা রোডে নিজের পাঁচতলা বাড়ির তৃতীয় তলায় পরিবার নিয়ে থাকতেন ফজলুল করিম। সকাল ১০টার দিকে কয়েকজন সন্ত্রাসী বাসায় ঢুকে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
নিহতের শ্যালক তৌহিদ কাশেম খান প্রিন্সের বর্ণনা অনুযায়ী, ফজলুল করিমের স্ত্রী স্বপ্না করিম বৃহস্পতিবার সকালে গুলশানে মেয়ের বাসায় যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বেরিয়েই তৃতীয় তলার সিঁড়িতে অস্ত্র হাতে এক যুবককে দেখতে পান।
আতঙ্কিত স্বপ্না ওই যুবকের কাছে জানতে চান, সে কাকে খুঁজছে। তখন সে অস্ত্রের মুখে স্বপ্নাকে আবার বাসায় ঢুকতে বাধ্য করে এবং তার ডাকে নিচ থেকে আরো দুই যুবক তৃতীয় তলায় উঠে আসে।
তারা স্বপ্নাকে একটি ঘরে আটকে রেখে ফজলুল করিমকে গুলি করে পালিয়ে যায় বলে প্রিন্স জানান।
ওই পরিবারের গাড়ি চালক লিটন ও ভাড়াটিয়ারা মিলে ফজলুল করিমকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফজলুল করিমের বাসা ঘুরে দেখে মতিঝিল পুলিশের উপ কমিশনার মো. আশরাফুজ্জআমান সাংবাদিকদের বলেন, “সিআইডি ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করছেন।
এখনই মোটিফ বলা সম্ভব হচ্ছে না। ”
ফজলুল করিমের মেয়ে ফারজানা করিম বাঁধন
ফজলুল করিমের মেয়ে ফারজানা করিম বাঁধন
তবে নিহতের মেয়ে ফারজানা করিম বাঁধন ঢাকা মেডিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের রামকৃষ্ণদি গ্রামে তাদের গ্রামের বাড়ি। সেখানে চাচার পরিবারের সঙ্গে একটি বাড়ি নিয়ে তাদের বিরোধ চলছিল।
তার বাবাকে কেন হত্যা করা হয়েছে জানতে চাইলে ফারজানা বলেন, “ওদের ধরুন। তাহলেই কারণ জানা যাবে।
”
সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার দূর সম্পর্কের ভাতিজা সাজিদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ফজলুল করিমের ভাই বজলুল করিম বেশ কিছুদিন আগে মারা গেছেন। তার দুই ছেলে শান্ত ও রুবেলের সঙ্গে ফারজানাদের পরিবারের সম্পর্ক ভাল ছিল না।
এর কারণ জানতে চাইলে সাজিদ বলেন, “ছেলেগুলো বখাটে, পড়ালেখা করেনি। এই কারণে চাচাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল না। ”
গ্রামের বাড়িতে ফজলুল করিম রামকৃষ্ণদি কওমি মাদ্রাসা নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালাতেন বলেও সাজিদ জানান।
তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে একটি টেলিভিশনে টক শো করেন চাচা। তারপর থেকে তাকে কয়েকবার হুমকি দেয়া হয় বলে শুনেছি। ”
তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেননি তিনি।
কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি ফজলুল করিমের প্রতিবেশীরাও।
বাড়ির এক শিশু গৃহকর্মীর বরাত দিয়ে নিহতের শ্যালক প্রিন্স বলছেন, অন্তত তিনটি গুলির শব্দ সে পেয়েছে।
যদিও ফজলুল করিমের মাথায় একটি গুলির চিহ্ন পেয়েছে পুলিশ।
ফজলুল ও স্বপ্না করিম ছাড়া দুই শিশু গৃহকর্মী সে সময় ওই বাসায় ছিল বলে প্রিন্স জানান।
সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলুল করিম
সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলুল করিম
পাঁচ তলা ওই বাড়ির তিন তলায় পরিবার নিয়ে থাকতেন বাড়ির মালিক ফজলুল করিম। আর বাতি চারটি তলায় থাকে মোট আটটি পরিবার।
বাড়ির সামনে তিন কাঠার মতো খালি জায়গায় একটি গ্যারেজ ও ড্রাইভারের থাকার ঘর।
ড্রাইভার লিটন ওই ঘরেই থাকেন।
নিচ তলার ভাড়াটিয়া সাইদুর রহমান জানান, তারা এই বাসায় আছেন দশ বছর ধরে। সন্দেহ করার মতো কারো নাম বলতে পারেননি তিনি। এমনকি গুলির শব্দও তিনি শোনেননি বলে দাবি করেছেন।
সাইদুর বলেন, “ড্রাইভার লিটন সকালে হঠাৎ এসে দড়জা ধাক্কাতে শুরু করে।
সে জানায়, কারা যেন বাড়িওয়ালাকে গুলি করেছে। পরে তার সঙ্গে উপরে গিয়ে দেখি এই অবস্থা। ”
প্রতিবেশীদের সহযোগিতা নিয়ে লিটনই পরে ফজলুল করিমকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
ওই বাড়ির ঠিক বাইরেই মায়ের দোয়া জেনারেল স্টোরের মালিক মো. শাকিল হোসেন বলেন, যে সময় ঘটনা ঘটেছে বলা হচ্ছে, তখন তিনি দোকানেই ছিলেন। কিন্তু সন্দেহজনক কাউকে ওই বাড়িতে ঢুকতে বা বের হতে দেখেননি।
ফজলুল করিম নিহত হওয়ার খবরে মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতালে ছুটে যান।
সিআইডির বিশেষ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ঊনিশশ আশির দশকে কয়েকটি আলোচিত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ফজলুল করিম।
এর মধ্যে ১৯৮৮ সালের ট্রাক ড্রাইভার ও দুই হেলপার হত্যা এবং পরের বছর গ্রিন্ডলেজ বাংকের ৫০ লাখ টাকা ডাকাতির মামলাও রয়েছে।
এর মধ্যে প্রথম মামলায় চালক ও সহকারীদের হত্যা করে টিনবোঝাই ট্রাক ডাকাতির ঘটনায় কেরানীগঞ্জের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। আর দ্বিতীয় মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হয় যাত্রাবাড়ীর দুই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।