আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুদ্ধিজীবী হত্যা:১৯৭২ সালের ৩০ শে জানুয়ারি জহির রায়হান মারা যাননি।



মহান মুক্তিযুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে দেশের নেতৃস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। গত ৩৮ বছরেও হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটিত হয় নি। বিজয়লগ্নে কে বা কারা বিশ্ব মানচিত্রের নতুন দেশটিকে মেধাশূণ্য করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে গেছে তার কোন স্পষ্ট তথ্য বের হয়নি। তেমনি এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কয়েকজন চিহ্নিত অভিযুক্ত ধরা ছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে । একইভাবে বর্তমান সময়েও বাংলাদেশকে মেধাশূণ্য করতে একটি ঘাতক চক্র সক্রিয় রয়েছে।

তারা মূলত স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব,স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান,অধ্যাপক ড.হুমায়ুন আজা ও অধ্যাপক আফতাবসহ বুদ্ধিজীবি ও রাজনৈতিক নেতাদেরকে এখনো হত্যা করে যাচ্ছে। এ কাজে সব সময় দেশীয় দালালদেরকে ব্যবহার করছে তারা। ৭১ ও বর্তমান সময়ের ঘাতকদের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে বলেও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে এদেশের নাগরিক মহলে। বাংলাদেশকে মেধাশূণ্য করে দেয়ার চক্রান্ত আরও অনেক গভীর। এ ব্যাপারে ১৯৭২ সালে ভারতের দি নিউ এইজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘গণহত্যা তদন্ত কমিটির সভাপতি চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হান আমাদের জানিয়েছেন, আল বদরদের কার্যকলাপ অনুসন্ধান করতে যেয়ে আমরা এক সাথেই অপরাধীদের প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝবার জন্য নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি।

স্বাধীনতা পরবর্তীকালে যখন নিহত বাবা ও ভাইয়ের দেহের অবশেষ ঢাকার বধ্যভূমিতে খুঁজে ফিরছিলেন তখন আমাদের ধারণা ছিল যে দখলদার পাকিস্তানী শাসকদের নিশ্চিত পরাজয় উপলব্ধি করে পশুরা ক্রোধান্ধিত হয়ে হত্যাকান্ডের মাধ্যমে প্রতিহিংসা বৃত্তি চরিতার্থ করেছে। কিন্তু পরে বুঝেছি ঘটনা তা ছিল না। কেননা এই হত্যাকান্ডের শিকার যারা হয়েছেন তারা বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবীদের প্রতিনিধি। স্থানীয় এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মনোভাবের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। আল বদর বাহিনীর লোকদের কাছে সব্ লেখক ও অধ্যাপকই এক রকম ছিলেন।

জহির রায়হান বলেছিলেন এরা নির্ভূলভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা বুদ্ধিজীবীদের বাছাই করে আঘাত হেনেছে। ’ অন্যদিকে পুরো ঘটনা বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে,্আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে দু’ধারা ছিলো। এ দের একটি রুশ পন্থি,অন্যটি চীন পন্থি। ঐদিন গণ হত্যার শিকার হয়েছিলো শুধু চীন পন্থি বুদ্ধিজীবিরা। জহির রায়হানের এই মূল্যায়নের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, ‘বুদ্ধিজীবী হত্যার নায়ক পাকিস্তানী জেনারেল রাও ফরমান আলীর ডায়েরীতে পাওয়া গেছে যে, ‘দু’ জন আমেরিকান নাগরিক ঢাকা সফরে এলেন।

এরা হলেন হেইট ও ডুসপিক । এদের নামের পাশে ছোট ছোট অরে ইউএসএ ও ডি জি আই এস অর্থাৎ ডিরেক্টর জেনারেল অব ইন্টারন্যাশনাল। অপর এক জায়গায় লেখা ছিলো এ দু’জন আমেরিকান পি-আই-এ’র বিশেষ বিমানে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। হেইট ও ডুসপিক-এর পরিচয় খুঁজতে গিয়ে দৈনিকা বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হেইট ১৯২৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। জানা গেছে, জহির রায়হান নিখোজ হয়ে যান ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি।

তিনি মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে তার ভাই শহিদুলাহ কায়সারের খুনের ব্যাপারে খোঁজ করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান। এরপর তার হদিস সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কিছুই জানা যায় নি। তবে ১৯৯২ সালের ১ মে বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় ও বিশিষ্ট সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী শাহরিয়ার কবিরের এক সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, ১৯৭২ সালের ৩০ শে জানুয়ারি দুর্ঘটনায় জিহির রায়হান হয়তো মারা যাননি। তারপরও দীর্ঘদিন তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল। মিরপুরে দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হলে গভীর ষড়যন্ত্র মনে করার কোন কারণ ছিল না।

বুদ্ধিজীবীদের হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে তিনি এমন কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন যা অনেক রথী মহারথীর জন্যই বিপজ্জনক ছিল। যে জন্য তাকে সরিয়ে ফেলার প্রয়োজন হয়েছিল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.