মিয়া মুস্তাফিজ
হাড়ের সঙ্গে চামড়া জড়ানো জরাগ্রস্ত শরীর নিয়ে ফাদার বেনুয়ার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল আরতি। ৫০ বছর বয়স হবে হয়তো,তবে বয়স অনুমান করা কঠিন। বাচ্চা ছেলের মতো অনুযোগের সুরে বললে, ফাদার তুমি কাল আসলে না কেন ? আমি তোমার জন্য কেঁদেছি। ফাদার তার হাতটা ধরলেন। বললেন, কাল যে জরুরি কাজ ছিল তাই আসতে পারিনি, আজ তো এসেছি।
হেসে উঠল আরতি, তুমি কিন্তু প্রতিদিন আসবে নইলে আমি কাঁদব।
শহরের মসজিদগুলো থেকে আজান ভেসে আসছিল। ফাদার বেনুয়ার ঘুম ভাঙল। ৭১ বছরের বৃদ্ধ শরীরটা নিয়ে তিনি দাঁড়ালেন। নিজেকে প্রস্তুত করলেন।
৩০ বছরের সঙ্গী ৫০ সিসি হোন্ডাটি চালু করলেন। ডিসি হিলের সামনে কুয়াশার চাদর জড়ানো ঠান্ডায় ছেঁড়া কাগজে আগুন জ্বালিয়ে উত্তাপ নিচ্ছিল দুই পাহারাদার। মোটরসাইকেলের হেড লাইট জ্বালিয়ে ফাঁকা রাস্তা দিয়ে ফাদার বেনুয়া আসলেন। বললেন গুড মর্নিং। আমি তাঁর পেছনে উঠলাম।
শীতের ঠান্ডা বাতাস গায়ে জড়িয়ে আমরা লাভ লেইন ধরে এগিয়ে চললাম পাহাড়তলীর দিকে।
প্রতিদিন ভোরে পাথরঘাটা থেকে মোটরসাইকেলটি নিয়ে টাইগার পাস হয়ে পাহাড়তলী যান ফাদার। পাহাড়ের ওপরেই Home of Destitute. অর্থ দাঁড়ায় অভাবগ্রস্তদের বাড়ি। কিন্তু সবাই বলে মাদার থেরেজা আশ্রম। তার আগমনে আশ্রমের জরাগ্রস্ত মানুষগুলো প্রাণ ফিরে পান।
হেঁসে ওঠেন। একজন মানুষের উপস্থিতি মানুষগুলোকে জাদুমন্ত্রের মতো কেমন করে এমন প্রাণবন্ত করে তোলে না দেখলে বিশ্বাস হবে না কারও। ফাদার তাদের নিয়ে সকালের এক ঘণ্টা প্রার্থনা করেন। যতদিন বেঁচে থাকি মানুষকে যেন মাদার থেরেজার মতো ভালোবাসতে পারেন, এ মন্ত্রে প্রাণময় হয়ে ওঠেন। ফাদারের মুখ দিয়ে বের হওয়া শব্দগুলো তাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
তারা হেসে ওঠেন। তাদের মন ভালো হয়ে যায়।
( মাদার থেরেজা আশ্রমের অসুস্থ এক বৃদ্ধার খবর নিচ্ছেন ফাদার বেনুয়া )
৪২ বছর ধরে ফাদার বেনুয়া বাংলাদেশে। এ দেশই তাঁর ঘর। এ দেশের মাটি, আলো বাতাস, পাখি, গাছ সবই তাঁর আত্মীয়।
আর এ দেশের মানুষ তাঁর সন্তান।
ফাদার বেনুয়ার জন্ম ১৯৩৮ সালের ৩০ জুলাই কানাডার মন্ট্রিলে। পরের বছর সেপ্টেম্বর শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। পুরো ইউরোপে যুদ্ধের ভয়াবহতা,নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শান্তিকামী মানুষের জীবনকে বিভীষিকাময় করে তুলে। এর ভেতর দিয়ে তাঁর বেড়ে উঠা।
তাঁর ডাকনাম ছিল Pierre- পিয়ের কিন্তু ফ্রেঞ্জ ভাষায় উচ্চারিত হয় পিয়েরু। পুরো নাম Pierre Benoit. পিয়ের মানে পাথর, তবে পরশপাথর বললে ভালো হয়, আর বেনুয়া মানে কল্যাণ। মা-বাবার দুই মেয়ে এবং একমাত্র ছেলে তিনি। ছোট্টবেলায় হকি,বেইজ বল এবং কলেজজীবনে আমেরিকান ফুটবল খেলতেন। তাই স্বপ্ন দেখতেন খেলোয়াড় হবেন।
আবার আইন বিষয়ে পড়ালেখা করা এবং আইন পেশায় জড়িয়ে পড়ারও স্বপ্ন ছিল। ফাদার বেনুয়ার বাবা Gaston Benoit ছিলেন একজন কেমিস্ট, মা Therese Lefebvre ছিলেন স্কুলশিক্ষিকা। বাবার কাছ থেকে তিনি জীবনের অনেক কিছু শিখেছেন যা এখনো তাঁর চলার পথের পাথেয় হয়ে আছে। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে মা-বাবার তেমন কোনো স্বপ্ন ছিল না, কিন্তু মা মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন ছেলে উচ্চশিতি হবে। প্রাইমারি ও হাইস্কুল এবং কলেজের পড়ালেখা মন্ট্রিলে।
হলিক্রস কলেজে পড়ার সময় স্কাউটিংয়ে জড়িয়ে পড়েন। কলেজে স্কাইট মাস্টার এবং পরবর্তিতে কলেজ প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন লিডারশিপ তৈরি হয় তাঁর ভেতর। অনেক ছাত্রের মধ্যে তিনি হয়ে ওঠেন দলনেতা। নানারকম সামাজিক কর্মকাণ্ডে, মানুষের সাহায্যে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। কানাডা অনেক বড় একটি দেশ।
সেই কানাডা, আমেরিকা এবং মেক্সিকো ভ্রমণ করেছেন দলবল নিয়ে হিচ হাইক করে। হকি এবং আমেরিকান ফুটবল খেলতেন কলেজ দলের হয়ে। মন্ট্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ে থিঅলজি এবং আমেরিকার নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে পড়ালেখা করেছেন। ১৯৬১ সালে ১৫ আগস্ট হলিক্রস নবিশিয়েট হিসেবে যাজকজীবনের শুরু। জীবনকে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত করার শপথ নেওয়া।
এতে অবশ্য বাল্যকালের একটি দুর্ঘটনাকে এ জীবনে আসার অনুপ্রেরণাদানকারী বলে আঁচ করতে পারেন ফাদার। তবে এত দিন পরে এসেও সেই ঘটনার কথা তিনি ভুলতে পারেন না। ৭ বছর বয়সে স্কুল থেকে আসার পথে একটি কারের চাকায় পিষ্ট হন ফাদার। কারের চালক ছিলেন একজন ডাক্তার। তিনি চাকার নিচ থেকে ছোট্ট লিকলিকে শরীরটি উদ্ধার করেন এবং এমন দুর্ঘটনার পরও তার বেঁচে যাওয়া দেখে অবাক হন।
কিন্তু বাড়ি ফেরার পর তিনি পায়ের হাড়ে ব্যথা অনুভব করেন। প্রায় তিন মাস তাঁকে হাসপাতলে থাকতে হয়। ওই সময় নার্সদের সেবা করার আগ্রহ, মানুষের জন্য নার্সদের সেবার মনোভাব তাঁর মনে একটা প্রভাব ফেলে। এখন তিনি বলছেন তিনি হয়তো নার্স হতে পারেননি কিন্তু তিনিও তো মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। মানুষের মুখে হাসি ফোটানো তাঁর মহান ব্রত।
সেই কাজটি তিনি করে যাচ্ছেন সারাটি জীবন। তবে স্কাউটজীবন তাঁকে যাজকজীবনের দিকে নিয়ে এসেছে বলেও তিনি মনে করেন। স্কাউটিং মানেও তো মানবসেবায় আত্মনিবেদন করা।
ফাদার বাংলাদেশে আসেন ১৯৬৭ সালে। বরিশালের সাগরদাড়িতে।
সেখানে তিনি আট মাস বাংলা ভাষা শেখেন। ১৯৬৮ সালে তিনি নোয়াখালী আসেন। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন নোয়াখালী ও বরিশালে । ১৯৭০ সালে নোয়াখালীতে দেখা সাইকোন তাঁর জীবনে এক মর্মান্তিক ঘটনা। সেই সাইকোনে তিন লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল।
মানুষের লাশ, বেঁচে থাকা মানুষের হাহাকার তাঁর হৃদয়কে এমন নাড়া দিয়েছিল যে সেই স্মৃতি কখনো ভোলার নয়। তখন অনেক বিদেশি সাংবাদিক, সংগঠন নোয়াখালী এসেছিল মানুষকে সাহায্য করতে। ফাদার বেনুয়া সেই বিদেশিদের থাকতে দিয়েছেন সোনাপুরের তাঁর মিশনে। তাদের নিয়ে নোয়াখালীর উপদ্রুত এলাকায় ঘুরেছেন। মানুষের কথা শুনেছেন।
বিখ্যাত লাইফ ম্যাগাজিনে নোয়াখালীর মানুষের আর্তচিত্র ছাপা হয়েছিল যা সারা পৃথিবীতে সাড়া ফেলে দেয়। আজকের কারিতাস সংগঠনটির তখনকার নাম ছিল CORR- Christian Organization for Relief and Rehabilitation. ফাদার বেনুয়া এবং আরও কয়েকজন মিলে নোয়াখালীর মানুষকে পুনর্বাসন করতে ওই সংগঠনের সৃষ্টি করেছিলেন। পরবর্তীতে CORR এর নাম হলো কারিতাস এবং এর পরিধি,কর্মকান্ড বেড়ে যায়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়েও তিনি নোয়াখালীতে ছিলেন। তিনি কখনো পাকিস্তানিদের বর্বর হামলা মেনে নিতে পারেন নি।
স্বশরীরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিলেও অনেক মানুষের প্রাণ রা করেছিলেন তিনি তাঁর মিশনে লুকিয়ে রেখে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কানাডায় থাকেন এক বছর। নোবাস্কসিয়া কুডি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে পড়ালেখা করেন। তিনি মনে করেছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশেকে আবার তৈরি করতে হবে। এতে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টের ওপর জ্ঞান খুব কাজ দেবে।
আবার ফিরে আসেন বাংলাদেশে । নারিকেল বাড়ি উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তখন স্কুল পরিচালনা কমিটির মধ্যে নানান ঝামেলা হয়। ফাদার বেনুয়া এগিয়ে এলেন স্কুল পরিচালনায়। চট্টগ্রামে আসেন ১৯৮১ সালে।
এরপর থেকে তিনি চট্টগ্রামেই আছেন। সারাদিনই ব্যস্ত থাকেন ফাদার। ৭১ বছর বয়সেও ফাদার বেনুয়া চট্টগ্রাম মহানগরীর গাড়ি এবং মানুষের ব্যস্ত সড়কে সেই মোটরসাইকেলটি নিয়ে বের হন প্রতিদিন। খুব ভোরেই ঘুম থেকে ওঠেন। পাহাড়তলীর পাহাড়ের ওপর অবস্থিত মাদার থেরেজা আশ্রমে জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত যাঁদের ঠিকানা হয়েছে সেখানে।
সেই মানুষগুলো কেউ সুখে নেই। কেউ অসুস্থ শারীরিকভাবে কেউবা মানসিকভাবে। সংসার, ছেলে সন্তান স্বামী আত্মীয় থেকে বিচ্যুত হয়ে কে বা সুখী হতে পারে। সেই অসুখী মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটানো সকাল উপহার দিতেই তিনি ছুটে যান প্রতিদিন। আশ্রম থেকে বের হয়ে পাশের সেন্ট জেবিয়ার স্কুলে যান ফাদার।
স্কুলটির পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে তদারকি করতে হয় তাঁকে। এ ছাড়া ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের সন্তানেরা এখানে পড়তে আসে। ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেন। মানবসেবার পাঠ শেখান। মাদার থেরেজায় বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দুস্থদের ওষুধ বিতরণ করেন প্রতি সোমবার।
সুষ্ঠুভাবে ওষুধ বিতরণ হচ্ছে কিনা তা-ও দেখতে হয় ফাদারকে। সেখান থেকে আসেন পাথরঘাটা । আরএনডিএইচ নবিশিয়েট স্কুলে প্রতি মঙ্গলবার। শিক্ষা দেন অধ্যাত্মিক জীবন এবং যাজকজীবনের মাধ্যমে কীভাবে মানুষের সেবা করা যায়। একটি সুখী সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে একজন মানুষের ভূমিকা কী।
চট্টগ্রাম মহানগরীর পাথরঘাটার বিশপ হাউজের পরিধি অনেক বড়। পরিচালক হিসেবে তাঁর দায়িত্ব কিন্তু কম নয়। অফিসিয়াল কাজ ছাড়া প্রতিদিন অনেক লোক আসে নানান ব্যক্তি ও পারিবারিক সমস্যা নিয়ে। ফাদার যথাসম্ভব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। ফাদার মানুষকে বলেন, ‘আমরা এ জগতে এসেছি একটি সুখী সুন্দর আনন্দময় জীবন উপভোগ করার জন্য।
সেই জীবনে আমাদের এত না পাওয়ার হা হুতাশ করলে চলবে না। ’ পাথরঘাটার সেন্ট পিটার অনাথ আশ্রমের শিশুদের সময় দেন মাঝে মাঝে। আলিয়ঁস ফ্রঁসেসেও যেতে হয় তাঁকে। ফ্রান্সের চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সেন্টারটির ব্যবস্থাপনা কমিটির একজন সদস্য হিসেবে হাজির থাকতে হয় প্রায় জরুরি সভাগুলোতে। চট্টগ্রাম শহরে অনেক সামাজিক, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানে অতিথি হতে হয় তাঁকে।
কিছু বলতে হয়। ঢাকা এবং দেশের নানা প্রান্তে ভ্রমণ করতে হয় প্রায় সময়। ঢাকার পবিত্র ক্রুসের সংঘের তিনি পরিচালক। আর্থিক হিসাব তাঁকেই দেখতে হয়। এ বয়সেও তিনি অনেক কর্মম এবং প্রাণবন্ত।
( সেন্ট পিটার অনাথ আশ্রমের শিশুদের মুখে হাসির উপলক্ষ ফাদার বেনুয়ার উপস্থিতি )
বাংলাদেশকে খুব ভালোবাসেন ফাদার। বিদেশিরা এ দেশকে গরিব বললে তাঁর খুব খারাপ লাগে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি সম্পদশালী দেশ। তবে একটি সুন্দর ব্যবস্থাপনা দরকার। যা নেই বলে দেশটি এখনো অবহেলায় পড়ে আছে।
তিনি বিশ্বাস করেন বাংলাদেশিরা অনেক বেশি পরিশ্রমী, বুদ্ধিসম্পন্ন। তবে তাঁরা যা জানে তার চর্চা করতে পারছে না। পত্রিকায়, টেলিভিশনে যারা সুন্দর সুন্দর কথা বলে যদি বাস্তবে এর চর্চা করত তাহলে এ দেশ আরও অনেক বেশি এগিয়ে যেত। চার দশকের বাংলাদেশকে নিজের চোখে দেখেছেন ফাদার। আজকের দিনে এসে তিনি বলতে পারেন বাংলাদেশ অনেক বেশি এগিয়ে গেছে।
দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তাঁর মতে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে শিক্ষাক্ষেত্রে। প্রথম যখন তিনি বাংলাদেশে আসেন তখনকার বাংলাদেশের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের অনেক ফারাক। এখন মানুষ অনেক বেশি উচ্চশিতি হয়েছে এবং হচ্ছে। পৃথিবীর নানা প্রান্তে বাংলাদেশি উচ্চশিতি মানুষের বিচরণ সত্যিই গর্ব করার মতো।
তাঁর খুব ভালো লাগে প্রায় অনেকেই তাঁর সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলে যখন। যদিও তিনি বাংলায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এ দেশের কৃষিতেও অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তিনি মনে করেন, কৃষিই পারে এ দেশকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিতে।
পুরোটা জীবনজুড়ে তিনি একটি সুখী সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন।
ধার্মিকতা এবং অধ্যাত্মিকতার ভেতর দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পাঠ দিয়েছেন অনুসারীদের। তিনি বলেছেন, মানুষের মাঝে থেকে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত থাকার মধ্যেই সুখ।
বাংলাদেশের মানুষগুলো নিয়ে তিনি খুবই আশাবাদী । তিনি দেখেন দেশের সব মানুষের অনেক বেশি ধন সম্পদ নেই। উন্নত জীবনযাপন নেই।
আধুনিক প্রযুক্তি নেই। তারপরেও তারা কীভাবে হাসিখুশিতে থাকেন, একসাথে, পারিবারিক, সামজিক জীবন উপভোগ করেন এটা দেখে তাঁর খুব আনন্দ লাগে। জাপানে মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। তাদের অনেক আছে, তবুও না পাওয়ার হতাশা জীবনকে দুর্বিষহ করেছে। ফাদার জাপানের একটি গ্রুপকে বাংলাদেশে আসতে আমন্ত্রণ জানান।
তারা এ দেশে এসে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। সাধারণ মানুষের আনন্দঘন পারিবারিক জীবন দেখে অভিভূত হন। তারা মানুষকে প্রশ্ন করেন, তোমাদের ল্যাপটপ আছে? আই মোবাইল আছে? টেলিভিশন আছে? উত্তরে ‘না’ শোনার পর বলে তার পরেও তোমরা এত সুখে আছ! ফাদার তাদের বলেন, বাংলাদেশের মানুষের অনেক কিছু নেই কিন্তু তাদের অনেক সুখ আছে।
ফাদার বেনুয়া একজন ধর্মযাজক, একজন শিক্ষক, একজন সুখী সমাজ বিনির্মাণের কারিগর। কানাডার উন্নতজীবন ছেড়ে এই বাংলার ধুলোবালি গায়ে মেখে এ দেশের মানুষকে ভালোবেসে এ দেশের আলো বাতাসকে আপন করে নিয়ে জীবনের সোনালি অধ্যায় শেষ করেছেন তিনি।
জীবনের শেষ সময়ে এসে তিনি একটি ছোট্ট স্বপ্ন দেখেন। যেন পরবর্তী জীবনটাও এ বাংলার মানুষকে ভালোবেসে কাটাতে পারেন, মানুষকে তিনি তেমন কিছু দিতে পারেন না। কিন্তু তাঁর সাক্ষাত পেলে, তাঁর মুখের কখা শুনলে মানুষগুলো হেসে ওঠে, সেই হাসিটাই যেন তিনি সবার মাঝে বিলিয়ে বেড়াতে পারেন আজীবন- এ তাঁর স্বপ্ন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।