আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসভ্য বাঙালির দিন বদল

হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র

প্রবাস জীবনে একজন রেসিস্ট ব্যক্তির সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। সেছিলো আমার এক তুর্কীশ বন্ধুর খালাতো ভাই। তার মা ছিলো তুর্কীশ আর বাবা সুইজারল্যান্ডের অধিবাসী। নিজের তুর্কীশ রক্তকে সে ঘৃণা করতো আর বাবার পরিচয়ে গর্ববোধ করতো। আরব আর দক্ষিণ এশীয় লোকজনদের সে দুচোখে দেখতে পারতোনা।

তার মতে এই সব এশীয়রা অসভ্য এবং ইতর গোত্রিয়। এরা ভদ্রতা শেখে নাই, হাত দিয়া ভাত খায়। এরা যেই টেবিলে খায় সেই টেবিলেই হাগে। তার সাথে আমার মোটামুটি ধরণের ঝগড়া হয়েছিলো। আমি তাকে বলেছিলাম, আমরা ডাইল মাখা ভাত খাই, তাই হাত দিয়া খাই, কিন্তু তোমরা হাগার পরে পানি ব্যবহার করোনা কোন যুক্তিতে, তোমরা কেমনতর ভদ্র ? সে যাই হোক, ভদ্রতা-সভ্যতা আর নৈতিকতা, এই জিনিসগুলা একেক দেশে একেকরকম।

এসব জিনিসের বিশ্বজনীনতা নিয়ে আলাপ করতেও বসি নাই। আমার চিন্তা দিন বদল নিয়া। পথে, ঘাঁটে, বনে, বাদারে, স্বপ্নে, জাগরনে সব যায়গায়ই শুনি দিনবদলের গান। দিনবদল শব্দটার একসময় একটা ভার ছিলো, শব্দটার পেটেন্ট অনেকটা কিনেই নিয়ে ছিলো দেশের বাম প্রগতিশীল শ্রেণী। পেটেন্টটা মনে হয় তাদের হাত থেকে ছুটে গেছে।

আওয়ামিলীগ সরকার থেকে শুরু করে বাংলালিংক, প্রথম আলো, নব্য উপনিবেশী হেজিমনির সবগুলো ক্ষমতাশালী স্তর, দিনবদলের গানের ভাগ চায় সবাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকেই অবশ্য এই গানের শুরু, নানান সুরে গলা ছেড়ে গাওয়া শুরু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আশার পর থেকে। গানটা অবশ্য এই দেশের জনগন সবাই গাইতে চেয়েছে। তবে এই সুরে গাইতে চেয়েছে কিনা জানিনা। এদেশের জনগন অসভ্য জনগন, গানের সুর এরা দেবেইবা কোথা থেকে, সুর কিছু জানা থাকলেও ভুলে গেছে কোন আমলে, জয় আর জিন্দাবাদের লড়াই তো কিছু কম হয় নাই।

এদেশের অভদ্র-অসভ্য মানুষের মুখে বছর বছর নতুন গানের সুর তুলে দেয় রাজনীতিবীদ, মিডিয়া মুঘোল, আর নানান চেহারার সমাজকর্মি, নানান রঙের বুদ্ধিজীবীরা। সেই গানই তারা গায় আর বগল বাজায়। দুই বছর মেয়াদী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দিন বদলের গানের পেটেন্ট যাদের ছিলো তারাওযে কেনো সুর ভুলে গেলো, তা আমি জানিনা। তবে পেটেন্ট তাদের গেছে, তা এখন নিশ্চিত। বেশি কথা বলে লাভ নাই।

বেশি কথা বলা অভদ্রতার লক্ষণ। আর আমি বদলালেই না অন্যরা বদলাবে। প্রথম আলো তাই বলে। আগে আপনি বদলান, তাহলে সবাই বদলাবে। বাদামের খোসা ঠোঙায় ফেলুন, দেয়ালে পানের পিক ফেলবেন না, নারীদের বাসের সিট ছেড়ে দিন, গ্যাসের চুলা নিভিয়ে রাখুন, ভদ্রতা শিখুন, নিজেকে বদলে ফেলুন, তাহলেই দিন বদল আসবে।

অভদ্রতা-অসভ্যতাই এদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা। আর কোন সমস্যা নাই। শিক্ষা সমস্যা নাই, বেকার সমস্যা নাই, লোড-শেডিং নাই, পানির সমস্যা নাই, অস্বাভাবিক যানজট নাই, দেশের সম্পদে বিদেশী নখর নাই, দেশিয় মগজে বিদেশী গবর নাই। যা আছে তা হলো অসভ্যতা, অভদ্রতা। আসুন, আমরা সবাই ভদ্র হয়ে যাই, সভ্য হয়ে যাই।

আর যদি না হই, তাহলে দৃঢ়তার সাথে দিনবদলের পেটেন্টের নয়া ভাগিদাড়দের প্রশ্ন করি, হাগার পর পানি ব্যবহার না করেও নিজেদের তারা ভদ্র বলে কোন সাহসে। তাদের মল-মূত্রের গন্ধেই আজ এদেশের বাতাসে শ্বাস নেয়া দুষ্কর।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।