আস সালাম - আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক
বাংলা ব্লগ এখনও তার শৈশব কাটায় নি। আমাদের ব্লগারদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। তিন বছর আগের সেই ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম এবং আজকের ব্লগিং প্লাটফর্মের মধ্যে রয়েছে আকাশ পাতাল দূরত্ব। এবং সেটাই নির্দেশ করছে বাংলা ব্লগিং এর সাফল্য।
বাংলা ব্লগকে সাধারন বাংগালীর কাছে জনপ্রিয় করতে যে প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দিতেই হয়, তা হল সামহোয়ার ইন।
ব্লগিং প্লাটফর্মের সমস্ত সীমাবদ্ধতাকে ধীরে ধীরে জয় করে সামহোয়ার এখন মোটামুটি স্থায়ীত্ব লাভ করেছে। এছাড়াও প্রথম আলো ব্লগ ও আমার ব্লগও মোটামুটি মানের জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে ব্লগ জগতকে একটি বিকল্প মিডিয়া হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে আরো বহু সময় দিতে হবে। কিছুদিন আগে আমি আমার একটি লেখায় ব্লগের এই প্রাথমিক সাফল্যকে স্বীকৃতি জানিয়ে লিখেছিলাম:
"তবে আশার কথা এই যে প্লাটফর্মের সংখ্যা বাড়ছে। চাইলেও কারো কন্ঠরোধ করা আর সম্ভবপর হবে না।
ইন্টারনেট এক বিশাল সমুদ্র। সেখানে "যে লড়ে সে টেকে" বা "survival of the fittest" মতবাদের সার্থক রূপ প্রতিফলিত হয়। আর এই "লড়া"টা হতে হবে বুদ্ধিভিত্তিক, নোংরামি ভিত্তিক নয়। প্লাটফর্মের সংখ্যা বেড়ে গেল আপনা আপনিই বুদ্ধি ভিত্তিক প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরী হবে, নোংরামী দিয়ে তা বন্ধ করা যাবে না। "
ব্লগিং এর একটি চ্যালেন্জ্ঞ হচ্ছে ব্যান।
ব্লগ একটি হালকা মেজাজের প্লাটফর্ম বিধায় এখানে অনেক সময় অনেকেই অনেক কথাবার্তা লিখে থাকেন। যার ফলে শুধু অস্থির মেজাজের নয়, বরং অনেক ভাল ভাল ব্লগারদের উপরেও ব্যানের তলোয়ার নেমে এসেছে। ব্লগের মূল প্রান হল তার ব্লগাররা। ডিসিপ্লিনারী একশনের তোড়ে যদি ব্লগাররাই ব্লগিং এর পরিবেশ না পায়, তাহলে ব্লগ আর জেলখানার মধ্যে কোন তফাৎ থাকে না। ব্লগিং এর ডিসিপ্লিনারী একশন হিসেবে ব্যান তাই খুব পছন্দনীয় কোন ডিসিপ্লিনারী একশন নয়।
তা সত্ত্বেও "ব্যান" এখনও ব্লগিং প্লাটফর্মগুলোর মূল ডিসিপ্লিনারী একশন। কিছু দিন আগে প্রথম আলো ব্লগে ম্যাভেরিক ভাই ব্যান পরবর্তী উল্লাস জাতীয় কথাবার্তা নিরুৎসাহিত করতে অনুরোধ জানিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। কথা হচ্ছে, যাকে ব্যান করা হয়েছে সে কোন ভাবেই আর আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারছে না। যে ব্যান হয়, সে অনেকের কাছে অপ্রিয়, তবে কারো কারো কাছে সে প্রিয়। তাই, এ জাতীয় উল্লাস সূচক কথাবার্তা স্বভাবতই অনেককে আহত করে থাকে।
সুতরাং এ বিষয়টির দিকে ব্লগ কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া জরূরী।
দ্বিতীয় ইস্যুটি হল "স্থায়ী ব্যান" কিংবা "লগ ইন" ব্যান। ক্রমাগত ব্লগ রুল ভংগ করা, কিংবা নিশ্চিত ভাবে ব্লগ পরিবেশকে বার বার উস্কানীর চেষ্টা ব্যতীরেকে কারো উপর এ ধরনের চূড়ান্ত শাস্তি না প্রয়োগ করাই ভাল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও দেখা গেছে, যাদের বিরুদ্ধে সেরকম কোন অভিযোগ নেই, তাদের বিরুদ্ধেও এরকম শাস্তির খাড়া নেমে এসেছে। এই বিষয়টির নিয়েও কর্তৃপক্ষ নজর দেবেন আশা করি।
এটি একজন "ভিকটিম" ব্লগার শুধু নয়, বরং পুরো ব্লগ কমিউনিটিকে এক ধরনের অনিশ্চয়তায় ফেলে দেয়। ব্লগ রুল ভংগ করা যে ব্লগারের স্বভাব কৌশল নয়, তার ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে "চূড়ান্ত ব্যান" কাম্য নয়। প্রতিপক্ষ ব্লগাররা হয়ত এতে সাময়িক আনন্দ লাভ করতে পারে, তবে এর প্রতিক্রিয়া সুদূর প্রসারী। যার ফলশ্রূতিতে ব্লগিং প্লাটফর্মগুলো এখনও তাদের পুরোনো ব্লগারদের ধরে রাখতে ব্যর্থ। এই ব্যর্থতা ব্লগিং প্লাটফর্মের ব্যর্থতা, যার মুখোমুখি হওয়া জরূরী।
শেষ কথা হল, ব্লগারের লেখার ক্ষমতা, তার ব্লগ বয়স - এগুলোও ব্যানের ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। তিন বছরের পুরোনো ব্লগার যে ইতিমধ্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, আর তিন দিনের ব্লগার যে এখনও প্রতিষ্ঠিত হয় নি -ব্লগ নীতিমালা দুজনের ক্ষেত্রে সমান ভাবে প্রযুক্ত হওয়া অন্তত আমি সমর্থন করতে পারছি না। পুরোনো ব্লগারদের স্বীকৃতি দিয়ে তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা কাম্য। তেমনি ভাবে, যেসব ব্লগারের লেখা সার্বিকভাবে সবার গ্রহনযোগ্যতা পায়, তাদের ক্ষেত্রেও কিছুটা শিথিলতা দেয়া হোক।
পরিশেষে সবার উদ্দেশ্যে শেষ একটি কথা বলে আজ ইতি টানছি।
ব্যান বিষয়ে আমাদের মনোভাব হোক নীচের পংক্তি গুলোর মত:
দন্ডিতের সাথে দন্ডদাতা কাদে যবে সমান আঘাতে
সর্ব শ্রেষ্ঠ সে বিচার
(আমার এই লেখাটি সামহোয়ারে সদ্য ব্যান হওয়া নাহিদকে উৎসর্গ করে। তার ব্যানই আমাকে এ লেখাটি লিখতে উৎসাহী করেছে। তার আনব্যানের বিষয়টি সম্পূর্নভাবে কর্তৃপক্ষের বিবেচনার বিষয়, তবে তাকে "আনব্যান" দেখলে আমি খুশী হই। )
হ্যাপি ব্লগিং।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।