কাজী আবেদ হোসেন [এ.ডি.সি রেভিনিউ,কিশোরগঞ্জ]এর সাথে নতুন করে পরিচয়ের সম্ভবত দরকার হবে না কেননা তাকে নিয়ে আমি ধারাবাহিকভাবে লিখছি। ইতি মধ্যে তাকে নিয়ে লেখা তিন পর্ব ব্লগে প্রকাশ হয়েছে। আজ সবার দোয়া নিয়ে আল্লাহ পাকের অশেষ কৃপায় তাকে নিয়ে লেখা আমার ৪র্থ পর্বের যাত্রা শুরু করছি। কাজী আবেদ হোসেন যদিও”মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের সুযোগ পাননি তথাপি তিনি সব সময় ভাবতেন দেশের কথা,দেশের মানুষের কথা যা আমার পূর্বের ৩ পর্বের লেখণীতে প্রতিভাত হয়েছে। ”তিনি সব সময় ভেবেছেন যুদ্ধে যাবার সুযোগ হয়নি তাতে কি?যে সব বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাই বোনের প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতার সাধ গ্রহণ করছি,স্বাধীনভাবে বাংলার বুকে বাস করছি তাদের জন্য দেশের জন্য আমার অনেক কিছু করার আছে।
তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ে ভাবলেন এমন কিছু করতে হবে যাতে শহীদদের আত্মা শান্তি পায় এবং দেশের মানুষের জন্য কালজয়ী কিছু সৃষ্টি হয় যার প্রাপ্তি দেশের মানুষই ভোগ করবে যুগ যুগ ধরে। তার এই দৃঢ় ভাবনা দৃঢ় পদক্ষেপে আত্মপ্রকাশ করে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার “একুশে দিঘী”। মোহনগঞ্জ হাওড় এলাকা। শুকনো মৌসুমে হাওড় শুকিয়ে যায়। এমনভাবে শুকিয়ে যায় যে ফেটে চৌচির হয়ে যায়।
১৬ বর্গ কি.মি. এলাকার কোথাও বিন্দুমাত্র পানি থাকে না। জনজীবন যেন থমকে যায়। পানির অভাবে তৃষ্ণায় মারা যায় মানুষসহ গৃহপালিত পশু পাখি যা তার মনে বেদনার ক্ষত সৃষ্টি করে। তিনি আরো প্রত্যয়ী হয়ে ওঠেন আর আপন মনে বলে ফেলেন এখনি সময় কিছু করার। তিনি তার শাণিত ভাবনা দিয়ে উপলব্ধি করলেন স্বাধীনতা দিবস,বিজয় দিবস আর ভাষা দিবসের কথা।
এসব দিবসে আমরা বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার শান্তির জন্য ফুল দেই ,শ্র্দ্ধা জানাই এমন কি খালি পায়ে শহীদ মিনারে যাই। কন্ঠ ছেড়ে সমবেতভাবে গাই “এক নদী রক্ত পেরিয়ে, এক সাগর ও রক্তের বিনিময়ে কিংবা আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী। শুধু তাই নয় কে কার আগে ফুল দিব এ নিয়ে করি প্রতিযোগীতা এমন কি মারামারি পর্যন্ত করি কিন্তু দু:খের বিষয় দিবস গুলোর নির্দিষ্ট দিন পেরিয়ে গেলে আমরা সব ভুলে যাই এবং স্বাভাবিক নিয়মে যে যার কর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু আবেদ হোসেন ভাবলেন যুগান্তকারী এক সুদূর প্রসারী ভাবনা। তিনি ভাবলেন শুধু ফুল দিয়ে নয়,কোন একটি দৃশ্যমান কর্মদিয়ে জাতীয় দিবসকে পালন করার কথা।
যা দিয়ে মনের ইচ্ছেটুকু মেটানো যায়,শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো যায়। সর্বোপরি কিছুটা হলেও দেশের ঋণ শোধ করা যায়। তিনি তার এই মনের বাসনা পূরণের লক্ষ্যে গ্রামবাসীকে একত্রিত করে সভার পর সভা করেন,প্রতি জুম্মাবারে ভিন্ন ভিন্ন মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করেন আর হাওড় পাড়ের মানুষদেরকে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেন। এরই ফলশ্রুতিতে ২০০৯ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে ৪০,০০০ হাজার মানুষ নিয়ে ডিঙ্গাপোতা হাওড়ের মাঝে জেলা প্রশাসক মহোদয় ও পুলিশ সুপার মহোদয়ের উপস্থিতিতে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমে ১দিনে সাড়ে ৩ একরের ১টি দিঘী খনন করেন । দিঘীটির নাম করণ করা হয় “একুশে দিঘী”।
এই দিঘীর ব্যাপারে তিনি মানুষকে এই ভাবে দীক্ষিত করেন যে,মসজিদে-মন্দিরে আমরা যেমন জুতো ছাড়া প্রবেশ করি অনুরূপভাবে এই দিঘীতে আমরা কেউ--ই যেন বরশি ফেলে মাছ না ধরি। পুরো মোহনগঞ্জবাসী তার এ কথা মন্ত্রমুগ্ধের মত আজও পালন করে আসছে।
এই “একুশে দিঘী”তার এমন ই সৃষ্টি যে,শুকনো মৌসুমে মোহনগঞ্জ উপজেলার পুরো ২০বর্গ কি.মি. এলাকা যখন শুকিয়ে ঠনঠন করে তখন ডিঙ্গাপোতা হাওড়ের মাঝখানে একুশে দিঘী যেন ভরা যৌবন নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে অকৃপনভাবে। মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী পায় বাঁচার নির্ভরতা। মনের সুখে নির্ভয়ে তারা বিচরণ করে সারা দিঘীময়।
দিঘী যেন তাদের “মা” তাই তো তারা তাদের মায়ের কোল জুড়ে ইচ্ছেমত ডিম পাড়ে। দিঘীও সন্তান স্নেহে মাছেদের আশ্বাস দেয় “ভয় নেই তোমরা তোমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়াও তোমাদের রক্ষাকল্পে আমি বাড়িয়ে দিয়েছি আমার বুক। এ যেন মাছেদের সাথে “একুশে দিঘীর” জনম জনমের আত্মার টান।
মোহনগঞ্জ উপজেলার ডিঙ্গাপোতা হাওড়ের মাঝে “একুশে দিঘী”পুরো মোহনগঞ্জের ৪ লক্ষ মানুষের স্বাধীনতার স্বাধ গ্রহনের কালজয়ী দৃশ্যপটের এক অনবদ্য প্রতিচ্ছবি।
সম্রাট শাহজাহানের ভালবাসার অমর কীর্তি যেমন আগ্রার “ তাজমহল” আমার কাছে তেমনি বাংলার মানুষের জন্য ভালবাসার অমর কীর্তি কাজী আবেদ হোসেনের”একুশে দিঘী”।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।