আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঐ রাঙ্গামাটির পথে লো....... (ট্রাভেলগ)

^^^^^^^^^
সেই এক যুগ আগে রাঙ্গামাটি গিয়েছিলাম, সবকিছু মনে না থাকলেও আমাদের পিকনিকের গাড়িতে জেমস এর ফাটাফাটি কিছু গান পুরোটা পথ জুড়ে বেজেছিল সেটা স্পষ্ট মনে আছে। এবার রাঙ্গামাটি যাব যাব ভাবছি কিন্তু কোন মতেই সুজোগ করতে পারছিলামনা। শুক্রবার বিকেলে হঠাৎ করে মাথায় রাঙ্গামাটির ভুত চাপে, এক বন্ধুকে বলার পর সে সানন্দে রাজি হয়ে যায়। শুরু হয় আমার প্ল্যানিং, পরদিন ক'টায় ঘুম থেকে উঠব, ক'টায় রওনা দিব ইত্যাদি ইত্যাদি….। ভোরে ঘুম থেকে উঠে একটু নাস্তা মুখে দিয়ে বেরিয়ে পড়ি, সাড়ে আটটা বাজে তবুও চারপাশ হালকা কুয়াশার চাদরে মোড়া, একটু একটু শীত করছিল।

ওহ! বলতে ভুলে গেছি, আমরা রওনা হয়েছিলাম আমাদের গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়ির আজাদী বাজার থেকে। বাহন ইন্ডিয়ান একটা ১৫০ সিসি'র মোত্রসাইকেল। সকাল বলে ২০ মিনিটের মধ্যে আমরা রাউজান ফকিরহাট পৌঁছে যাই। সেখান থেকে বাইকে পেট্রোল নিয়ে আমরা রাঙ্গামাটি রোড ধরে এগুতে থাকি, দূরত্ব মাত্র ৪০ কিলোমিটার। এর পাঁচ কিলোমিটার পর থেকেই রাঙ্গামাটি জেলা শুরু হয়েছে, সাথে পাহাড়ি উঁচুনিচু আঁকাবাঁকা পথ।

যেহেতু অচেনা রাস্তা তাই খুব সাবধানে চালাচ্ছিলাম, গড়ে ৫০-৬০ কিমি/ঘন্টা। একে একে রাণিরহাট, বেতবুনিয়া ছাড়িয়ে আমরা আস্তে আস্তে আরো উপরের দিকে উঠছিলাম আর প্রকৃতির উদারতায় মুগ্ধ হচ্ছিলাম। আরো পরে রাস্তার পাশে একটা পার্কের মত দেখে সেখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে যেই আবার রওনা হয়েছি হাতের ডানপাশে দেখি একতি উঁচু ভাস্কর্য গর্বে আকাশের মত উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। থামিনি আর, আসার সময় দেখবো ভেবে। রাঙ্গামাটি পর্যটনের ঝুলন্ত সেতুর কাছে বাইক রেখে আমরা যখন ভিতরে যাচ্ছি তখন এক ভদ্রলোককে কাউন্টারে বলতে শুনি আমি RAB এ আছি, আমাদেরকে যেতে দিন(সাথে এক মহিলা ছিল)।

আমরা উতসাহি হয়ে তার ক্ষমতা (বা অক্ষমতা!) দেখছিলাম বলে আমাদের শুনিয়ে শুনিয়ে সে বলতে থাকে, "আমার সবখানে যাওয়ার পারমিসন আছে"…… বলতে ইচ্ছে করছিল, "হালা ১০/১০ কুড়ি টাকার জন্য যে সবখানে নিজের পোশাক বিক্রি করিস, ২০০০০ টাকার জন্য যে মানুষ মেরে ফেলবিনা সেকথা কে জানে………" ক্রস্ফায়ারের ভয়ে বলিনি লিখতেছি ট্রভেলগ করছি ফালতু প্যাচাল… টিকেটওয়ালা আমাদের কাছে দ্বিগুণ দামে বোট ভাড়া দেওয়ার জন্য অনেক কশরত করেছিল, পরে ঝুলন্ত সেতুটা পার হয়ে শুভলং যাওয়ার জন্য অনেক কম দামে বোট ভাড়া করি। বোটে আমরা তিনজন। আমি, রায়হান আর আমাদের পাইলট আব্দুল কুদ্দুস। একটানা ভটভটভট শব্দে আমাদের নৌকা এগিয়ে যাচ্ছিল কাপ্তাই লেইক হয়ে। চারপাশের সৌন্দর্যে প্রায় পাগল আমি নৌকার সামনে দু'পা দু'দিকে ছড়িয়ে বসে গাইছিলাম- "লাল পাহাড়ের দেশে যা, রাঙ্গামাটির দেশে যা......" চারপাশে ছোট ছোট পাহাড়, কোনটা আবার আদিবাসীদের গ্রাম, লেইকে শত শত নৌকা।

কোনটা বড়, কোনটা মাঝারি, কোনটা আবার শুধু ডিঙ্গি নৌকা। জেলে নৌকাগুলোর মাঝি মাল্লাদের ব্যস্ততা, বাতাসের প্রতিকূলে ডিঙ্গির মাঝির সংগ্রাম দেখতে দেখতে সময় গড়িয়ে যায়। পানিতে ভাসতে থাকা পানকৌড়ি দম্পতি আমাদের কাছে আস্তে দেখে লাজে কি ভয়ে ডুবসাঁতারে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। একসময় আমাদের নৌকা ভিড়ে শুভলং ঝর্নার কাছে। অনেক উঁচু থেকে ক্ষীণ ধারায় পানি গড়িয়ে পড়ছে, দেখে মোটেও মন ভরেনি।

বান্দরবানের রুমা-বগালেক ট্রেইলে এমন অখ্যাত অনেক ঝর্ণা দেখেছি। এবার ফেরার পালা। সূর্য তখন পশ্চিমাকাশে হেলেছে মাত্র, তার প্রতিফলন লেকের পানির ঢেঊয়ে লক্ষ-কোটি মণি মুক্তার মত জ্বলজ্বল করছিল। একই দৃশ্য, আলোর পরিবর্তনে পুরো ভিন্ন মনে হচ্ছিল তখন। রায়হান মাহমুদ রাঙ্গামাটি শহর থেকে ফেরার পথে বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতি ভাস্কর্যের সামনে কিছুক্ষণ কাটিয়ে আবার বাইকে চাপি।

একটানা চালিয়ে রাউজান আসার পর আমাদের মনে পড়ে আজ দুপুরে কিছুই খাওয়া হয়নি। রাস্তার পাশের হোটেলে গরম গরম নান আর ডাল খেয়ে হেলেদুলে শেষ বিকেলে একটা সফল ভ্রমণ শেষ করে বাড়ি ফিরি
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.