কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...
ভক্তিবাদের আছর মনে হয় চাকমা প্রজাতির সকলের মধ্যেই প্রবল ভাবে আছে...যেই কারনে শেখ মুজিবের বাঙ্গালী হইয়া যাওনের অপমানজনক আহ্বানের পরেও এমএন লারমার বাকশালে যোগদানরে জায়েজ করতে চাইলেন বিজয় বাবু বৃহত্তর পাহাড়ি স্বার্থে...তার সাথে আমার এই বিষয়ে তর্ক হওনের পর তিনি মানলেন পদ্ধতির সমর্থনে থাইকা পদ্ধতি পরিবর্তন খুব সহজ বিষয় না...কিন্তু তিনি অনড় থাকলেন এমএন লারমার সততা নিয়া। বিশ্বাসকেন্দ্রীক বাস্তবতা আসলেই মনে হইলো সততাকেন্দ্রীক একরম মানদন্ড হাজির করে...যাতে অনেক সময় অনেক হঠকারী সিদ্ধান্তেও আমরা যৌক্তিকতা খুঁজি। সততার পার্সেন্টেজগত মাপকাঠি বানাই।
কাপ্তাই বাঁধ হওনের কাল থেইকাই পার্বত্য এলাকায় মিলিটারী নিবাস শুরু হয়। মিলিটারী সিস্টেমে যেহেতু বিশ্বাস আর অবিশ্বাস উভয় অবস্থানই বহুত জরুরী হয় তাই নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলো বেশ ভালো সংখ্যক সেনাবাহিনী।
আওয়ামি রাজনীতিতে আস্থাশীল মানবেন্দ্র লারমা এতো কিছুর পরেও শেখ মুজিবের প্রতি আস্থাশীল ছিলেন, তিনি হয়তো ভাবছিলেন উদারতার ধ্বজাধারী এই রাজনৈতিক নেতারে তিনি পার্বত্য এলাকার জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্বের সংকট বুঝাইতে সক্ষম হইবেন। শেখ মুজিব হয়তো প্রায়োগিকতা হেতু সমাজতান্ত্রিকতায় আবদ্ধ হইছিলেন আরো ভালোমতোন কওয়া যায় পরিচিত হইছিলেন...অপরপক্ষে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার ছিলো মার্ক্সীয় অনুধাবন। ক্ষুদ্র জাতি সত্ত্বার অধিকার প্রসঙ্গে লেনিনের রচনাও নাকি পঠিত ছিলো তার।
কিন্তু পঁচাত্তুরের শেখ মুজিব হত্যাকান্ড পাল্টাইয়া দিলো সব।
মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা'র অতীতের সামরিক শাসকগো সম্পর্কে জ্ঞান ছিলো...সামরিকতার দর্শন বিষয়ে তার ধারণা ছিলো...অতএব তিনি খুব স্পষ্টতঃ'ই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন...আর রাজনৈতিক আলোচনা নয়...প্রতিরোধ আর প্রতিরোধ'ই হইতে পারে অধিকার আদায়ের একমাত্র কৌশল।
গেরুয়া পরিহিত সন্ন্যাসীরা ব্যক্তিসুখের অনুভূতি নিতে পারে, কিন্তু বৃহত্তর শান্তির জন্য একটা ন্যায় যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী। তিনি প্রকাশ্য অবস্থান ছাড়লেন...গইড়া তুললেন শান্তিবাহিনী...
৭৭ থেইকাই সরকারী বাজেটে সামরিক খাতের ব্যয় অন্য যেই কোন খরচের চাইতে অধিক গুরুত্ব পাইতে শুরু করে। আর এই সামরিক ব্যয়ের একটা বড় অংশ পার্বত্য এলাকায় সেনাক্যাম্পের পিছনে বরাদ্দ হইতো। সেনাসদস্যরা নাকি জীবনের ঝুঁকি নিয়া পার্বত্য এলাকায় অবস্থান নেয় আর তাই তারা থাকবো রাজার হালে...৭৯ তে সামরিক সরকার প্রধান জিয়াউর রহমানের কূটকৌশল শুরু হইলো প্রথম...পাহাড়ি এলাকায় বাঙালী রপ্তানীর প্রক্রিয়া শুরু হইলো...শোনা কথা দেশের বিভিন্ন এলাকার ছিচকে অপরাধীগো পূনর্বাসনের প্রক্রিয়া হিসাবেও অনেকে দেখতেন ঐ সময় এই পুরা ব্যাপারটারে। যেইখানেই সেনাক্যাম্প সেইখানেই মানববসতি গইড়া তুলতে হইবো এইরম কৌশলে গেলো সরকার।
একটা ভালো নাম আছে এই সব মানব বসতির...মানব ঢাল...
বৃটিশ সরকারের পাহাড়ি অ্যাক্টে পাহাড়ি সম্প্রদায়গত সম্পদের নীতিমালা থাকলেও পাহাড়ের বনজসম্পদরে চালাকি কইরা মূলতঃ রাষ্ট্রের সম্পদ বানাইয়া ফেলা হইছিলো...রিজার্ভ ফরেস্ট, ডিস্ট্রিক্ট ফরেস্ট আর অশ্রেণীভূক্ত রাষ্ট্রীয় ফরেস্ট এই তিনভাগে ভাগ কইরা পাহাড়িগো ভোগদখলের ক্ষমতা কুক্ষীগত করা হইছিলো...পাকিস্তানী মিলিটারী জান্তা আর গণতান্ত্রিক সরকার, পরবর্তী বাংলাদেশী গণতান্ত্রিক সরকার আর মিলিটারী জান্তা একই উদ্দেশ্যে পাহাড়িগো বঞ্চিত করনের কৌশল খুঁজছে। রিজার্ভ ফরেস্টগুলি তা'ও দেশীয় বৃহত্তর স্বার্থে ব্যবহৃত হইতো, বাংলাদেশের রেলপথের স্লিপারের প্রায় ৯০ভাগ পার্বত্য এলাকার সরবরাহতেই সমৃদ্ধ হইছে। কিন্তু জিয়া সরকার তার কূটকৌশলের প্রয়োগ ঘটাইতে গিয়া রিজার্ভ ফরেস্টগুলিতেও বাঙালী বসতি স্থাপন করতে শুরু করলো...পাহাড়িগো গুচ্ছগ্রামের পাশেই জোর কইরা বাঙালী আবাসন প্রক্রিয়া শুরু করলো।
বৈষম্যের কারনে বাংলাদেশে যেমন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হইছিলো...পার্বত্য এলাকাতেও একইভাবে প্রতিরোধ শুরু হইলো। যুদ্ধটা মূলতঃ পার্বত্য জনগোষ্ঠীর সাথে দেশীয় সামরিক বাহিনীর(প্রকারান্তরে যা রাষ্ট্রের), কিন্তু মানব ঢাল পার হইয়া গিয়া সেনাক্যাম্পের সাথে সংঘর্ষ হইতে হইবো।
আর পরদিন তার মিডিয়াতে প্রচার পাহাড়ি বাঙালী সংঘর্ষে ২৩ জন নিহত...
তয় ঐ সময়টা ছিলো চোরাগোপ্তা হামলা আর গেরিলা যুদ্ধের। এরশাদ আমলে সেইটা পর্যবসিত হইলো বৃহৎ জাতিগোষ্ঠীর লাঠিয়াল দিয়া চরদখলের খেলায়...৮৯ থেইকাই ছোট পরিসরে পাহাড়ি গুচ্ছগ্রাম ভাইঙ্গা দেওয়া, পাহাড়িগো গতিবিধি সীমিত করা, হেনস্তা করা এই সব শুরু হইলো।
কিন্তু নব্বইতে লংগদু, তিরানব্বইয়ে নানিয়ার চরে যা হইলো সেইটা এক্কেরেই মধ্যযূগীয় যুদ্ধকৌশল। দুইটা গ্রামই সেনা আর অভিবাসী বেষ্টনী দিয়া আগুণ লাগাইয়া দেওয়া হইছিলো সেই সময়। পাহাড়ি কোন শিশুও পালাইতে পারছে কি না সেইটা কওনের স্মৃতিও বিজয় কেতন চাকমা মনে করতে পারলেন না।
গণহত্যা'র এই প্রক্রিয়ার পর শান্তিবাহিনী আরো সশস্ত্র হইলো...তারা সম্ভবতঃ আন্তর্জাতিক বন্ধুপ্রতীম স্বার্থান্বেষী রাষ্ট্রও পাইলো সাথে। কিন্তু সাধারন পাহাড়িরা, যাগো তখন বাঙালীগো সাথে চলতে হয়...মিলিটারীরা পাহাড়ি নারীগো পর্দা কইরা চলতে হইবো বইলো বিধান জারী করছে...তাগো পথে-ঘাটে নিরাপদ থাকতে হইবো...
তবুও কল্পনা চাকমা হারাইয়া যায়!
একজন বিজয় কেতন চাকমা তখন অনেকজন হয়! তার প্রকাশ্য প্রচেষ্টায় গঠিত হয় পাহাড়ি গণ পরিষদ...বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে সারাদেশের চিন্তক মহলরে একভাবে সংগঠিত করনের চেষ্টা চালান...সমান্তরালে জাইগা উঠে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ...হিল উইমেন ফেডারেশন। সেই আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বিজয় কেতন চাকমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা হয়, তার স্ত্রী নীলিমা চাকমা একাই যেনো প্রীতিলতার ভূমিকায় অবতীর্ন হ'ন। সাড়ে চাইর বছর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা লইড়া মুক্ত করেন স্বামীরে।
পার্বত্য শান্তি চূক্তির পর সন্তু লারমা এবং বাকী সবাইর ভূমিকা নিয়া প্রশ্ন তৈরী হওনে বিজয় বাবু এখন প্রায় নিভৃত জীবন যাপন করেন।
তার কল্পতরুর চৌহদ্দীর প্রায় ৩৭০ বর্গফুট জমি জেলসুপারের বাসভবনের উন্নয়ন কল্পে কোনরম তথ্য ব্যতিরেকেই হুকুম দখল করছে সরকার...কিন্তু তিনি নিশ্চুপ থাকেন...গতো সাত বছর ধইরা হাতীর দাঁতের সরবরাহ নাই...কিন্তু তিনি নীরব থাকেন...তার জগত এখন তার তিন ছেলে-মেয়ে আর দুই ভাইগ্না চমক আর হিমেলরে নিয়াই থমকাইয়া থাকে।
আলোচনার ফাকে আমি আর রাকেশ রিজার্ভ বাজারে যাই মিষ্টি কিনতে...রিজার্ভ বাজার নামটা আসছে রিজার্ভ ফরেস্টের অনুগামী হইয়া...আমরা সেইসব ভুইলা বাঙালী ভদ্রলোকের মিষ্টির দোকান থেইকা মিষ্টি কিনি...তারপর আবার বিজয় বাবুর বাড়িতে গিয়া শুয়োরের মাংস...আদা ফুল...হলুদ ফুলের তরকারী দিয়া ভাত খাই। অপেক্ষায় থাকি শ্যামলী পরিবহনের ঢাকাগামী বাসের জন্য...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।