কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...
এইবার পরিকল্পনা ছিলো রাঙ্গামাটি জেলার প্রত্যন্ত কিছু থানায় যামু। আগে মাইন্যামুখ পর্যন্ত যাওনের অভিজ্ঞতা থেইকা জানি প্রকৃতির ধারেকাছে থাকা মানুষেরা সংগ্রামী হয়। এইবার আরেকটু দূরে মারিশ্যায় যাওনের খায়েশ তৈরী হইছিলো একবন্ধুর বর্ণনা শুইনা। হ্রদের পাড়ে নাকি গুচ্ছগ্রামের শহর গইড়া উঠনের প্রক্রিয়ায় আছে বেশ কয়েক বছর ধইরাই। কিন্তু বিধিবাম...পর্যটন মোটেলে পৌছাইয়া দেখি কর্মকর্তা-কর্মচারী সব নিরাশার চেহারা নিয়া কেরম উদাস-উদাস ঘোরাফিরা করে।
পর্যটনের গুটিকয়েক আকর্ষণের প্রধান যেই ঝুলন্ত সেতু, তার উপর দিয়াই তারা ছোট্ট সাম্পানে কইরা পাশের পাহাড়ে যায়। জাহিদ নামের যেই লোক আমাগো কটেজের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন তিনি মজা কইরা কইলেন ডুবন্ত সেতু দেখতে এইবার আর পর্যটকরা আসবো না...কিন্তু তার মুখের রেখায় দুঃখ।
যদিও বিজয় বাবুরে বলা পাহাড়ের দুঃখের সাথে এই দুঃখের কোন সম্পর্ক নাই। পর্যটনগুলি চলে সম্পূর্ণ নিজেগো আয় দিয়া...যে কোন উন্নয়নে তাই পর্যটকরাই ভরসা হয় পর্যটন পরিবারের...আর তাই পর্যটক হ্রাসের সাথে জড়িত জাহিদ সাহেবগো রুটি রুজিও। ঝুলন্ত সেতু যেইরমই হোক, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এইটার প্রচার বেশ ভালোমতোই করে রাঙ্গামাটি পর্যটন কর্তৃপক্ষ।
লেইকের পানি এইবার গত বছর দশেকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাড়ছে...জলের ধারায় অন্য সকলের মতোই বাঙালী অভিবাসীগো আনন্দ বেশ কিছুটা যে ম্লান হইছে তা বুঝন যাইতেছিলো স্পষ্ট।
যাই হোক ১২ অক্টোবর রাঙ্গামাটি পৌছাইয়া দুই বেডরুমের কটেজে উইঠা রাকেশ-তপতী আর মৌসুমের চেহারায় মুগ্ধতার ছোঁয়া। আমার অতীত অভিজ্ঞতা থেইকা খানিকটা মলিন অনুভূতি। আমার কাছে "সেই পুরনো রাঙ্গামাটি!" (দীর্ঘশ্বাস)। পর্যটনের মূল ভবনের থেইকা বেশ খানিকটা দূরে কটেজ এলাকা।
প্রায় শখানেক মিটার হাইটা তারপর রেস্তোরায় পৌছাইয়া সকালের নাস্তা। যেহেতু রোজার মাস, শহরের কোন রেস্তোরাই নাকি ইফতারের আগে খুলে না। মুসলমান বাঙালী সেটলারগো নিয়মেই এখন রাঙ্গামাটি শহর চালিত হয় সেইটাও জানলাম। আর তাই খাওনদাওনের আমাগো শেষ ভরসা পর্যটন রেস্তোরাঁ, যার মূল্যতালিকা মোটামুটি ভয় ধরানো। এমন সময়েই মৌসুম জানাইলো তার এক বন্ধুর বন্ধু'র একটা স্থানীয় রেস্তোরাঁ আছে স্টেডিয়াম পাড়ায়।
সেই সাবারাঙ রেস্তোরা'র দিকে অটোরিক্সায় চইড়া ধাবিত হইলাম আমরা।
মজাটা হইলো গন্তব্যস্থলে পৌছানের পর...সাবারাঙের বিশাল সাইনবোর্ড, তার এক্সটেরিয়র সব দেইখা অনেক ভালো লাগলেও...প্রবেশদ্বারের মলিন অবস্থা কেমন সন্দেহের উদ্রেক করলো। মূল ফটক বন্ধ...বাঁশের জানালাগুলিও...আমরা মনে হয় পুরা দুপুরটাই কাটাইয়া দিতাম রহস্য উদ্ধারে যদি না কলসী কাখে এক গ্রাম্য মহিলা আমাগো দেইখা উৎসুক হইয়া আগাইয়া আসতেন...তিনি জানাইলেন বেশকিছুদিন আগেই এই রেস্তোরাঁ মালিকানার দ্বন্দ্বে বন্ধ হইয়া গেছে। এই তথ্যের পর আমাদের চোখে পড়লো লনের সকল পাহাড়ী ঘাস অনেক বড় হইয়া গেছে...অযত্নে শুকাইছে পাহাড়ি ফুল।
এরপর কি আর করা।
খাওনের জন্য শহরের অন্য প্রান্তে আইসা ফিরা যাওনের অভিজ্ঞতা নিশ্চিত উপাদেয় না! পাশেই মেজাঙ নামের আরেকটা ছোট ফাস্টফুড এন্ড রেস্তোরাঁ পাইলাম। যেইখানে নাপ্পি সহকারে বাঁশের কোড়ল, ইচা শুটকি সহকারে সব্জী আর চাপিলা মাছ সহকারে আদা এই তিন পদেই সন্তুষ্ট থাকতে হইলো। নাপ্পি খাওনে আমার নিজের আগ্রহ চিরকাল...কিন্তু রাকেশ-তপতী-মৌসুম তিনজনেই এর গন্ধের সাথে তাল না মিলাইতে পারনে তাগো দুপুরের আহার খুব জুইতের হইলো না। তয় খাওনের এই বিপর্যয়ই য্যান আমাগো আসলে বিজয় বাবুর সাথে দেখা হওনের সুযোগটারে শক্তিশালী করলো। কটেজে পৌছাইয়াই রাকেশ ফোন দিলো ঈষিতার বাড়িতে আর দাওয়াত আদায় কইরা ছাড়লো একদিন।
আমরা পাহাড়ি খাদ্য খাইতে চাই! ঈষিতা দে'র বাড়ি মানে তার পিসেমশাইয়ের বাড়ি...মানে বিজয় কেতন চাঙমার ছোট্ট পাহাড়...কল্পতরু...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।