অনেক কিছুই আছে, কিন্তু লিখবনা কিছুই! (লিখতে ইচ্ছে করছে অনেক কিছুই, কিন্তু নেই যে কিছুই!) আমরা জানতে পারলাম, শাহবাগের আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ব্লগার রাজিব হায়দার, আজকে তিনি নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। ঢাকা শহরে প্রতিদিন-ই অনেক খুন হয়, তবে তার খুনটা আমাদের কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারন তিনি আমাদের এই আন্দোলনের সাথে বিশেষভাবে জড়িত।
এই নির্মম খুনটার কারনেই কিন্তু আমাদের আন্দোলনের যে পরিবর্তিত পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছিল টা আবার বাতিল করা হয়েছে। ভালো কথা, হয়তোবা ৩-১০ টার আন্দোলনে আমাদের মাঝে ঢিলেমি চলে আসতো। তাই বলা যায়, খুনটার মাধ্যমে খুনি আমাদেরকে আর বেশি সংঘবদ্ধ করে ফেললো।
এখন, আমরা শাহবাগ থেকে ঘোষণা করলাম, রাজিব সাহেবের খুনি জামায়াত-শিবির! আচ্ছা, আমরা কেউ কি দেখেছি কে খুনটা করেছে? দেখিনি। তাহলে কীভাবে বলি যে জামায়াত-শিবির-ই তাকে খুন করেছে? সহজ উত্তর হল, তিনি ওদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন তাই। এর অর্থ দাড়ায়, প্রতিহিংসা আর সবাইকে ভীত করতেই খুনটা হয়েছে।
আমরা এইবার একটু অন্য একটা দিকে দৃষ্টি ফেরাই, এমন ও তো হতে পারে যে, ব্যক্তিগত আক্রোশে কেউ খুন করে থাকতে পারে, কারন সে তো জানেই যে, রাজিব সাহেব খুন হলে কার মাথায় দোষ চাপবে!
এইবার একটু গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করি, আমরা কি ভেবে দেখেছি রাজিবের খুনে কার বা কাদের বেশি লাভ? একটু খেয়াল করি তো! আন্দোলনটা যদি এইভাবে সংগঠিত করা না যেত, তাহলে এই আন্দোলনের অধিকাংশ সময় ধরে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে বা দিচ্ছে, সেই বামেরা কোনদিন ও এমন একটি প্লাটফর্ম পেতনা। তারা অনেক সাধনা ও ত্যাগের মাধ্যমে আন্দোলনটাকে চাঙ্গা করে রেখেছে, এখন পর্যন্ত কোন ফল না পাওয়া এগারো দিন পেরিয়ে আসা উৎসবমুখর এই আন্দোলনটা কয়দিন টিকিয়ে রাখা যাবে সে বিষয়ে তাদের মনে প্রশ্ন থাকতেই পারে।
কিংবা আর বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করাটাও কি এর মাঝে থাকতে পারেনা? অথবা নেতৃত্বে কে বা কারা থাকবে এবং ফোকাস হবে সেটাও কি এর মাঝে থাকতে পারেনা?
এবার আরও একটু গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করি, বামদের থেকেও এই আন্দোলনের মাধ্যমে আরও বেশি লাভবান হতে পারে সরকারী দল বা আওয়ামীলীগ। কারন তারা এর মাধ্যমে দুইদিক পাবে, এক হল রাজাকার নিধনের দ্বারা জনগনের দাবিকে মেনে নেয়া, অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জামায়াতকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া, সাথে তাদের দোসর হিসেবে বিএনপি কে জনতার সামনে হেয় করা এবং দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জামায়াত কে রাজনীতি থেকে বের করে দেয়া। আমরা দেখেছি, এই আন্দোলনে রাজাকারদের ফাঁসি চাওয়া হলেও সেখানে আওয়ামীলীগের মাঝে যে সকল রাজাকার আছে তাদের বিরুদ্ধে কোন শ্লোগান নাই। কিন্তু কেন? কারন আন্দোলনকারীরা জানে, ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ, তাই তাদের না চটিয়ে দাবি আদায় করে নিতে হবে। এখন এই ক্ষেত্র থেকে চিন্তা করলে বলা যায়, সরকার ও চায় আন্দোলন চলুক এমনকি আর বেগবান হোক; অন্তত যতক্ষণ তাদের বিপক্ষে কেউ না যায়।
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার এমন সুবর্ণ-সুযোগ তারা হয়ত আর পাবেনা। তাই তারা তাদের বিশেষ “পেটানো বাহিনী” দ্বারা নিজেরাই এই অকর্ম ঘটিয়ে খুনের প্রতিবাদে তাদের দ্বারাই অর্থাৎ “পেটানো বাহিনী” আন্দোলনকে জোরদার করে তুলবে, অতঃপর শিবির-জামায়াতকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে তৎপর করে আন্দোলনের গতি বাড়িয়ে দিবে; জামায়াতের নিষিদ্ধকরণ ও তখন সহজ হবে।
হতে পারে এর সকল কিছুই শুধু উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা হিসেবেই লিখেছি, কিন্তু যে রাজনীতি আমাদের দেশে চলে, তাতে এর কোন সম্ভাবনাই কি উড়িয়ে দেয়া যায়? এতবড় একটি সুসংহত আন্দোলন কে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের সাধ তো আমাদের সরকারের হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর একটানা এবং এক-ই ছন্দে চলা এই আন্দোলনকে একটু অন্যপথে ঘুরাতেও তো তারা চাইতেই পারে।
দেশের ইতিহাসে জায়গা করে নেয়া এই আন্দোলনে যারা অবদান রেখেছেন তাদেরকে অসচেতন বলার মত সাহস বা দুঃসাহস কোনটাই আমার নাই, তাই বলছি, তারা রাজিব সাহেবের খুনটাকে সস্তাভাবে শুধুই জামায়াত-শিবিরের কাজ হিসেবেই ভেবে নিবেন? জামায়াত কী এতটুকুও বোঝেনা যে, এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত কারো কিছু ঘটলে তার দায়ভার তাদের ঘাড়েই পরবে? আর যদি তবুও তারা এটা করার সাহস তারা দেখায়, তাহলে তারা কেন আরও বড় পরিসরে কিছু করলনা? তাদের সন্ত্রাসীরা তো এত দুর্বল না।
সব রাজাকারের ফাঁসি চাই, হোক সে জামায়াতের কিংবা বিএনপি বা আওামীলীগ বা অন্যদল অথবা নির্দলীয়।
শিবির-ছাত্রলীগ-ছাত্রদল এই তিন “ছাত্রদের রাজনৈতিক দল” নামক সন্ত্রাসী সংগঠনের নিষিদ্ধতা ও নিষ্ক্রিয়তা চাই।
ডাকসু নির্বাচন চাই।
জয় বাংলা.....................জয় বাংলা...........................
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।