আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেঁড়া পাতা (৬)

www.cameraman-blog.com/

ঘটনা ছয় এই ঘটনাটা আমাদের পরিবারের। ভদ্রলোক ছিলেন আমার কাকা। আব্বার ফুফাতো ভাই। একটি স্বায়ত্বশাসিত সংস্থায় চাকরি করতেন। তিন ছেলে, দুই মেয়ে, স্ত্রী আর বৃদ্ধা মাকে নিয়ে সংসার।

সচ্ছল না হলেও ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করিয়েছেন সাধ্যমতো। বড় ছেলে ডাক্তার, মেঝ ছেলে ইঞ্জিনিয়ার, ছোট ছেলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। মেয়েরাও মাষ্টার ডিগ্রি করা। ঢাকা কিংবা ময়মনসিংহ, যখনই কাকার বাসায় গিয়েছি আদরের কমতি হয় নাই কখনও। কাকা-কাকী, দাদী সহ সবাই খূব স্নেহ করতেন।

কিন্তু একটা ব্যাপারের জন্য প্রায়ই বিব্রত লাগতো। সেটা ছিল দাদীর প্রতি কাকীর ব্যবহার। বৃদ্ধা মানুষটিকে যেভাবে নাজেহাল হতে দেখেছি কাকীর কাছে, সেটা ভাষায় বর্ণনা করা দূঃসাধ্য। আর কাকীও এমন, সামনে কে আছে এটা দেখতেন না কখনও। আর আমার কাকা ? নিখাদ ভাল মানুষ বলে খ্যাতি ছিল তার।

তবে তিনি যে স্ত্রৈণ ও ছিলেন সেটা বলাই বাহুল্য। তখন পড়ি ইন্টারমিডিয়েটে। কাকার বাসায় সবাই জমায়েত হয়েছি। কাকার বড় ছেলের বিয়েতে বরযাত্রায় যাবো। চারিদিকে হাসি আর আনন্দ।

হঠাৎ করেই কাকীর চিৎকার। দৌড়ে গিয়ে দেখি কাকীর মূখ সমানে চলছে, লক্ষ্য দাদী। দাদী আনত মূখে বসে আছেন খাটে, মাঝে-মধ্যে চোখ মুছছেন শাড়ীর আচল দিয়ে। জানা গেল ঘটনা। বর, মানে আমার কাজিন বিয়ে উপলক্ষে বাড়ীর মহিলাদের জন্য শাড়ী কিনেছিলেন।

দাদীর জন্যও একটা কিনেছিলেন। নাতির উপহার পেয়ে দাদীও খূব খূশী ছিলেন। গোল বেধেছে শাড়ী পড়ার সময়। নতুন শাড়ীর সাথে পড়ার মতো কোন ব্লাউজ নেই দাদীর। এই কথা যখন কাকীর কানে গিয়েছে .... সেদিন ঠিক কিভাবে এই সমস্যার সমাধান হয়েছিল, আমার জানা নেই।

তবে সবাই খূব ব্যথিত হয়েছিলেন এটা বলা চলে। বেশ কয়েক বছর পরের কথা। এরমধ্যে দাদী মারা গেছেন। কাকাও একসময় চলে গেলেন। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে।

ছেলেরাও যে যার কর্মক্ষেত্রে। কাকী চলে গেছেন গ্রামের বাড়ীতে। একাই থাকেন সেখানে। একবার ঢাকায় কি একটা কাজে এসে বিকালে আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছেন। দেখা-সাক্ষাৎ হওয়ার পর কাকী আব্বা-আম্মার রুমে গেলেন।

সেখানে কিছুক্ষণ পর শুরু হলো তার বিলাপ। তিনি ভীষণ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছেন, অথচ কোন ছেলেই তার খোজখবর নেয় না ঠিকমতো। বড় ছেলে বিয়ের সময় সেই যে একটা শাড়ী কিনে দিয়েছিল এরপর এখন পর্ঙন্ত এক টুকরা সুতাও কিনে দেয় নাই। এরকম হাজারো অভিযোগ। রাত্রে খাওয়ার সময় আব্বা আমাদের সব ভাই বোনকে বললেন এটা হলো আল্লাহর বিচার।

যে যেমন কাজ করবে সে তেমন প্রতিফল পাবে এই দুনিয়ায়। কাকী এর কিছুদিন পর মারা যান নির্বান্ধব অবস্থায়। =========================================== [এখন যখন এতো বছর পর ঘটনাটা লিখছি সা. ইন ব্লগে হঠাৎ করে মাথায় এলো আসলেই কি এটা আল্লাহর বিচার নাকি অন্য কিছূ। আমার নিজের ব্যাখ্যাটা এরকম - আমরা সবকিছু কিন্তু স্কুল কলেজে গিয়ে শিখি না। কিছু শিক্ষা আসে পারিপাশ্বিক পরিবেশ, পরিবার সর্বোপরি বাবা-মায়ের আচার ব্যবহার থেকে।

আমার কাজিনরা জন্ম থেকেই দাদীর প্রতি তাদের মায়ের ব্যবহার দেখে অভ্যস্থ। সেই সাথে দেখেছেন বাবার ভালমানুষী মার্কা নির্লিপ্ত ভাব। এই ব্যাপারগুলি তাদের অবচেতন মনে গেঁথে গিয়েছিল সবার অজান্তেই। নিজেরা যখন বিয়ে করলেন সেটারই প্রতিফলন ঘটেছে মাত্র। ]


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।