আমি বিস্মরণ...আমি অন্ধকার...আমি নৈঃশব্দ্য
ভুলক্রমে একদিন কবে যেন যাত্রা শুরু করি স্বর্গের পথ ধরে; মনে নেই। মনে আছে শুধু সর্পকর্মশালা আর দীর্ঘ-দুর্গম মরু-গিরিসংক্রান্ত্র বাস্তবতা। স্বর্গবাস সত্যিই এক কষ্টসাধ্য ফলাফল। অবিলম্বে ভয়সহ বিপরীত পথ নিয়ে ফিরে আসি পৃথিবীর ধ্বংসাবশেষে। ফিরে পাই শুদ্ধ সবুজ, ব্রহ্মপুত্র-ঝরাপাতা-বন্ধ্যা বাতাস...
“বিশ্বজনের পায়ের তলে ধূলিময় যে ভূমি,
সেই তো স্বর্গভূমি”
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২
সমাজতন্ত্রকে ঊর্ধ্বে রেখে গণমৌলতন্ত্র করতাম আমি।
অর্থাৎ গণতন্ত্র ও মৌলতন্ত্র পাশাপাশি। ওসব ছেড়ে আজ আমি সংশয়ীদের সঙ্গী। সংশয়তন্ত্র হলো অনিশ্চয়তায় বিশ্বাস স্থাপন। আজ আমার প্রায় সবকিছুতেই সন্দেহ জাগে খুব। বিশেষত কালো সানগ্লাসধারী মানুষ।
আমি জানি, কালো চোখে আলো দেখা বড়োই বিপজ্জনক। ভূগোলবিষাদ ঘণ্টা দিলে শুরু বিবর্ণ প্রহর। একদিন মানুষের প্রজননক্ষমতা শেষ হয়ে যাবে জেনে দূর-আসন্ন পূজারীসংকট বুঝে নেয় মর্ত্যের ভাস্কর। শ্রবণেই গাঢ় হবে পাথরসঙ্গমধ্বনি...
আমি একটা ছবি আঁকছিলাম। ক্যানভাসে রঙের স্রোতে অর্থ গড়িয়ে আসে না।
টাকার ছবি আঁকছি। রঙ শেষ হয়ে গেলে, অবশিষ্ট কালি মেখে হাতদুটো কালো করে ফেলি। অতঃপর সারারাত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ঘুম ঘুমিয়ে থেকে কালো কালো কাকডাকা ভোরে জেগে দেখি তখনও শূন্য রয়ে গেছে কালোবাজারির হাত। যখন যে পথে এগোই, ক্ষণে ক্ষণে মাথার ভিতরে বাধার মতো বিধে যায় ওইসব আমিকেন্দ্রিক ধ্বনিসংযোগ
“মৃত নদী শ্যাওলার বন রুগ্ণ সরোবর
বড় হয়ে যখন আমি ধারণ করবো
নার্সিসাসের রূপ,
তখন আমি আয়নার ওপর সেঁটে দেবো
ভেঁড়ার পালের ছবি!”
অভাব-অধ্যূষিত ঘুমশহর, আমি বাণিজ্য বুঝি না। অপভোজেই হয় অর্থনীতির উদরপূর্তি।
শস্যের অভাব এলে অধিক ফলনশীল দাড়ি আর টুপি খেয়ে সমান করে নেবো নাভিচক্র। আমি একাত্তর নং ব্রিজে থাকতাম। তার নিচে ছিলো প্রশস্ত রাজাকার চ্যানেল। কেন তার স্রোত আজ স্ফীত হয়ে ধেয়ে এসে ঠেকে একবিংশে? ক্ষুদ্র-দরিদ্র রাষ্ট্রে ধর্মের পুঁজিতে এ বৃহৎ মুনাফা দেখে বড়ো নাস্তানাবুদ লাগে...
কোনো এক হরতালমুখর উত্তাপদিনে এসেছিলো পাখি। তারপর বারবার অপসৃয়মাণ
মানুষের হাতে আছে চার দশকের
মুষ্ঠিবদ্ধ দাবি, সেইসব হাতে লেখা
কতো চিঠি কতো নক্ষত্র অভিমুখে
ছোঁড়ে হিলিয়াম ফ্লো...
জানি তবু সেইসব বরাহের
রঙিন দাড়ির কোনা রামদার ফলা;
গোধূলিও ছিলো না বিরান, সেইক্ষণে তাই
কি ভীষণ জাগরণধ্বনি দেয় অঢেল জনতা...
আমার জাতীয় ফলটি ফলে না পাতার অভাবে!
গাছে গাছে এমন দীনতা তবু এখনও দুর্নিবার?
আমি জানি, ছাগলের নৈরাজ্য সত্ত্বেও একদিন
অভিজাত সেতুর ওপর দিয়ে পার হতে হবে পদ্মা...
(এইসব শাহবাগ)
সুফল মেলে না।
কথাগুলি ডুবে যায় চাপা পড়ে যায় মর্ত্যের গভীরে। কেউ জানতেও পারে না। আমি জানি। কারণ, ভূগর্ভ থেকে প্রত্যহ আমাকে জ্যামিতি শেখাতে আসেন ভূরঞ্জন ভূস্বামী...
এইভাবে আমার কথাগুলো ডুবে ডুবে যায়, আর বিজ্ঞজনের বাক্যের জোরে আন্দোলিত হয় পৃথিবীর এই বৃহৎ সম্মেলন। আগুনে বাতাস ঘষে নাগরিক রিকশার প্রতিসম চাকা নিয়ে ধীরলয়ে লিখে যাওয়া সামান্য ব্যাপার, আমি বুঝে গেছি...
আমি স্বার্বভৌম নই; হলে পরে রাষ্ট্রেরই চোখ অভিমু্খে করতাম শাঁই শাঁই বেয়োনেট চার্জ...
৩
ব্রঙ্কাইওটিস থেকে উদ্ধার পেয়ে দেখি আমার সমীপে এসে প্রত্যহ সেবা দেন স্যানাটোরিয়ামের বৃদ্ধ বালিকারা।
আমি চোখদুটো মদ্যে ডুবিয়ে রাখি। নিকাশঘর থেকে ভেসে আসে নিদারুণ নৈশগীতি। কেবা কারা যেন অ্যাকোস্টিকের সাউন্ডহোল থেকে শুঁষে নিচ্ছে চন্দ্রকণ্ঠী নকটার্ন। শেষ বুঝে আমি এইসব সুররিয়াল নোট চাঁদের আগুনে পুড়িয়ে একটা নিশাচর তক্ষকের পিঠে চড়ে বসি। তক্ষক আমাকে এক শিশুতোষ রাজ্যে নিয়ে আসে
এদিকে রোজ সন্ধ্যায় শীৎকার দেয় গ্যাব্রিয়েলের ঘোড়া
নিত্য পাহারা দিচ্ছে প্রিন্স প্যানুয়েলের বিশ্বস্ত ভেঁড়াগুলি
আর আরাকানি পানিপথে ফতোয়া দিয়ে বেড়ান জামিল হিজাযী...
এখন আমাকে আর টানে না ছেঁড়া ছেঁড়া ছোটগল্পের ব্যক্তিগত অক্ষর, দীর্ঘায়িত কাব্য কিংবা চাঁদের আগুনে ছন্দপোড়ানো লিরিক।
কুয়াশার অনুবাদে আমি অপারগ বটে। যাঁর মস্তকের দীর্ঘ আয়তনজুড়ে অজস্র সিন্যাপ্স-জাংশনে শব্দের আগ্রাসন তাঁকে আমি আজ এড়িয়ে চলি খুব। পাছে যদি খুলে বসে প্রভাব কর্মশালা। আমি জানি, সমতলভূমির সাপের ছোবল অধিক মারাত্বক...
৪
অচিরেই যদি বোধগম্য হয় শালিকের শ্লোক খুঁজে দেখো, তার সৃষ্টির শাখায় ঝুলে আছে অমিত্রাক্ষর। যখন যেদিকে তাকাই, দেখি গুঁইসাপ নতজানু হয়ে আছে জলপ্রপাতের দিকে।
এমন দৃশ্য দেখার পর আমি একটা অবিবাহিত ফুলকে ঈশ্বর ভেবে ভ্রম করি। একদিন নাকি জলঘোটকের পিঠে চড়েই যাওয়া যাবে মায়াদ্বীপ থেকে মানসসরোবর তখন হয়তো ভুলে যাবো ডুবসাঁতারের দিন। ষোড়শী উটের পিঠে বহমান যে জলধারা তাকে নীলনদ বলা যায় না। তা আমারই সলিলসমাধি স্বপ্নে সারাৎসার...
মাথার ওপর পাল তুলে বসে আছে অনড় প্রতিভা
শব্দের নির্দেশ ধেয়ে আসে মানসসরোবর থেকে
ফোর্স দিলে পালে, ধাবমান হয় মায়াদ্বীপ অভিমুখে...
অতঃপর এই; এই থেকে বোঝা গেল এই ঘোটকসমাজের সেবা নিয়ে আমার পোষাবে না। তার থেকে বরং বৃদ্ধ বালিকারা আসুক রিক্ত হাতে।
ওইসব ডোরাকাটা চোখ থেকে নেমে আসে পিন-ড্রপ সাইলেন্স। আমি তাদের উৎপাদিত নীরবতা একটা অ্যামপ্লিফায়ারে সেট করে রাখি। তড়িৎ-সংকেত হোক যতো ক্ষুদ্র মানুষের দুঃশ্চিন্তার ডোজ হয়ে যাবে বেশি, যদি বুঝে নিতে পারে এই বালিকাকুলের ডোরাকাটা চোখের প্রগাঢ় সংকেত। ঝিঁঝিঁপোকারা বোঝে, তাই তারা নিভৃতেই ভালোবেসে ফেলে আমার প্রশ্নবিদ্ধ ঘুম...
আমি বুঝি না! আমি তবু করেছি এইসব বুনো সংকেতের গাণিতিক ব্যাখ্যা, যা আজ প্রশংসিত অভাব-অধ্যূষিত ঘুমশহরের বাণিজ্যিক খাতে। তা হোক।
ওই দেখো হেমন্তের মৃদু শিশিরাক্রান্ত আকাশ। শাদা মেঘের ভেলায় অধঃক্ষেপ পড়ে। আমি ঘাসের দিকে তাকিয়ে দেখি ঘাসকুমারীর নৃত্য
মেঘের ওপর
বায়বীয় হালচাল,
ঘাসের ওপর
ঘাসফড়িঙের
অবাধ নাচের
তাল...
৫
দৃশ্যত আমি ওই শালিকের প্রেমে পড়ে গেলাম খণ্ডাতে পারি নাই যার দুর্বোধ্য শ্লোক। তার থেকে চোখ সরিয়ে নিতেই দেখি লেখক ফড়িং হাওয়া হয়ে গেছে। আমি হাওয়ার ছায়া থেকে তুলে আনি রোদের পিপাসা আর বৃষ্টির রংবাজি...
আমার প্রলাপ শুনে ‘খামোশ’ বলে ওঠে ধড়িবাজ দাঁড়কাক।
বলে বৃষ্টি নয়, গিরগিটি রংবাজ হয়। আমি বলি কাকেরা জ্ঞানহীন হয়। গিরগিটিদের রংবাজ বলা যায় না, ওরা বর্ণচোরা। আর তোরা নাগরিক কাক, নগরের শ্রেষ্ঠ আবর্জনা খেয়ে হয়ে উঠেছিস ‘জ্ঞানপাপী’। স্তম্ভিত কাক অভিধান খুলে নত করে রাখে মাথা...
গলিত মেঘের বর্ষায় ধুয়ে গেছে হাইবারনেশনের দিন।
এইতো সে রাতে চন্দ্রবোড়া চক্রবর্তী দেখে ফেলে চাঁদের গন্ধে ঘুমিয়ে পড়েছে মৈথুনরত ব্যাঙ। এইসব লৌকিক বৃষ্টিফোঁটাকে অবিশ্বাস করে রৌদ্রদগ্ধ মিত্র কারণ এখানে বর্ষাকালে হয়নি সর্পপ্রজনন। জাহাজমাস্তুল সরকার জানে না, তার ডাকবাক্সে গতিময় সিনহা এসে রেখে গেছে তন্দ্রা ঘোষের চিঠি। অতঃপর জাহজী দেখে প্রেমিকার চিঠির ভেতর কোনো অক্ষর মেলে না। সেঁটে দেওয়া ছোট ছোট সবুজ তারা, আর অ্যারো দিয়ে আঁকা আছে ফিনিশীয় পথ...
একটা শীতঘুমে আমি আলফা-থিটা-ডেলটা পার করে চোখ মেলে দেখি এক অস্বচ্ছ ভোর।
কানসহ মন খুলে শুনি বিহঙ্গকোরাস। আমি ভুলে গেছি উষ্ণদিনের ঝঞ্ঝাট চা-পিপাসু ঘর্মক্লান্ত শূন্য দুপুর। আমি জানি, শীতল পানীয় তপ্তদিনে ক্লান্তি-পিপাসা উভয়ই বাড়ায়। প্লাসে মাইনাসে মাইনাস...
৬
আমি একটা পশু হাসপাতালের মানবিক তেজস্ক্রিয়তায় আবিষ্কার করেছি সামুদ্রিক প্রশাসন। অ্যাটমিক কালচার তুচ্ছজ্ঞান করে জীবাশ্ম জ্বালানী।
আসলে মানুষের কাছে বাকি সবকিছু তুচ্ছ হয়ে গেছে। এখন মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী জীব। আমি জানি, এখন সমগ্র পৃথিবী ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে ব্যাটারিচালিত মানুষ। মানুষকে ব্যাটারিচালিত বলছি, এর পেছনে হয়তো অনেকে যুক্তি প্রত্যাশা করবেন। এ বাবদে আমি একটা ছোটখাটো লেকচার হাজির করছি
“ব্যাটারি এক প্রকার ড্রাই সেল অর্থাৎ কোনোরকম শক্তির উৎসের সাথে যার সরাসরি কানেকশান নাই।
মানুষের উৎস নিয়ে বিতর্ক আছে মানুষ কিংবা ঈশ্বর। যাহোক, মানুষের ব্যাটারি তথা হৃৎপিণ্ড একটা ড্রাই সেল। সুতরাং সকল প্রাণীই ব্যাটারিচালিত। মানুষ উদাহরণমাত্র। আর হ্যাঁ, জ্যাক স্প্যারো’র হাত করাত দিয়ে কাটা হয়নি, হয়েছে দাঁত দিয়ে।
এইবার বু্ঝে নিন। “
ধ্যানলব্ধ ধীবলয়ে ধূর্জটীর ধ্বজভঙ্গ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।