আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অতঃপর প্রমানিত হইলো - ইহার নাম কুত্তা দৌড়ানী

এই ব্লগের সব লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
ছোট বেলার বেশীরভাগ আনন্দের স্মৃতিই আমার নানা বাড়ির, কারন শীতকালে কয়েক দিনের জন্য সব মামারা, খালামনি আর আমরা নানাবাড়ী বেড়াতে যেতাম... শহুরে শৃংখলাবদ্ধ জীবন থেকে ২ - ৩ দিনের মুক্তি সেই সাথে যা খুশী, যখন খুশী কর এর একটা অলিখিত লাইসেন্স পাওয়া যেত ... তাই সারা বছরের আনন্দ যেন সেই সময়গুলোতেই পেতাম ... তেমনই এক শীতের সকালে ....... আমি আর আমার খালাত ভাই দুজনে ভোর বেলা উঠে খেজুরের রস খাবো বলে বড় মামির আশে পাশে ঘুর ঘুর করছি কিন্তু তখনো পেড়ে আনা হয়নি বলে খেতে পারছিলাম না ... নানা বাড়ীর এক কাজের লোক কেবল বাইরে থেকে এসেছে সে জানালো ... গ্রামে আজকাল মাছ চুরি হচ্ছিলো তাই উনারা কাউকে কিছু না জানিয়ে কয়েকজন মিলে রাতে পাহারা দিতো, কাল রাতে এক পুকুরে মাছ ধরার শব্দ পেয়ে ছুটে গিয়ে চোরদের নাকি কুত্তা দৌড়ানী দিয়ে এসেছে ... আমরা দুই খালাত ভাই এই কথা শুনে একজন আরেকজনের দিকে তাকাই ... এর পরে নিজেদের কে জিজ্ঞেস করি -- কুত্তা দৌড়ানী জিনিস টা কেমন ? ... কিন্তু কোন সহজ উত্তর না পেয়ে বড় মামীকে জিজ্ঞেস করলাম ... মামী ও যে কি উত্তর দিলেন, তার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না , এর পরে অমল দা (ঐ কাজের লোক) কে জিজ্ঞেস করার পরে উনি যে কি বুঝালো তা বুঝতে না পেরে খালি এট্টুক বুঝলাম --- কুকুর যেমন দৌড়ায় তার নাম কুত্তা দৌড়ানী, তবে এমনি এমনি দৌড়ালে হবে না ঝেড়ে দৌড় না দিলে তাকে সঠিক কুত্তা দৌড়ানী বলা চলে না ..... এইবার আমরা তো পড়ে গেলাম মহা চিন্তায়, কুকুরের ঝেড়ে দৌড় দেয়া না দেখতে পেলে আমাদের তো কোনোদিন জানা হবে না এইটা কেমন দৌড় ... সুতরাং একটা উপায় তো বের করা ই লাগে .... সারাদিন চিন্তার পরে সন্ধ্যাবেলা স্কুলের মাঠের পাশে দোকানে বসে চকলেট খাচ্ছিলাম আর ফুটবল খেলা দেখছিলাম, আর পাশে নানাবাড়ীর ভুলু ঘুর ঘুর করছিলো... ওকেও ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিস্কুট খেতে দিচ্ছিলাম ... হঠাৎ আমার কাজিন বলে , অন্তু ভুলুর লেজ কখনো সোজা হবে না তাই না ? ... আমি বললাম -- মনে হয় না ... এর পরে দুজনে কিছুক্ষন ভুলুর লেজ ধরে টেনে টুনে সোজা করার চেষ্টা করলাম, কাজ হলো না ... তবে ওটা করতে করতে দুজনের মাথায় আরেকটা প্ল্যান চলে আসলো ... এর পরে নতুন কিছু আবিষ্কারের অদম্য ইচ্ছায় হাস্যজ্জল মুখে ভুলুকে নিয়ে নানাবাড়ী ফিরলাম দুজন ... রান্নাঘরে গিয়ে দেখি বড় মামী রান্না করছে, আমরা জিজ্ঞেস করলাম ভাতের ফ্যান আছে নাকি মামী, ভুলুর ক্ষিদে পেয়েছে মনে হয় ... মামী বললেন - কেবল নামিয়েছি, এখনো অনেক গরম ... এর পরে ভুলুর খাবারের পাত্রে ওটা আর ভুলুকে নিয়ে আমরা দুভাই চলে এলাম বাগানের দিকে ... কিছুক্ষন পরে সেখানে গিয়ে আমি ভুলুর পিঠে চড়ে ওর ঘাড় ধরে ভাতের ফ্যানের মধ্যে ওর মুখ দেওয়াচ্ছি আর পিছনে আমার কাজিন সুতা দিয়ে ওর লেজে কেবল কিনে আনা দুটো তারাবাজি বাধছে ... আর বেচারা ভুলু মনে আনন্দে ভাতের ফ্যান খেয়ে চলেছে ... একটু পরে, কাজিনের কাজ শেষ হলে পরে আমকে বললো -- কাজ শেষ, এইবার ? ... আমি বললাম -- শুরু হয়ে যাক তাইলে এক্সপেরিমেন্ট ? ও বললো -- কাউন্ট করো ... এর পরে দুজনে একসাথে ওয়ান, টু, থ্রী ... তারাবাজিতে আগুন লাগানোর সাথে সাথে চমকে উঠে ভুলু একবার খালি পিছন ফিরে দেখে উর্ধ্বশ্বাসে তীর বেগে নাক বরাবর দৌড় দিল ... অতঃপর আমরা দু কাজিন একসাথে বিজয়ী হাসি দিয়ে কাধ ঝাকিয়ে বললাম -- এর নাম তাইলে কুত্তা দৌড়ানী
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।