রায়হান রাইন
অরুণ কোলাৎকারের কবিতা
[অরুণ কোলাৎকারের (১৯৩২--২০০৪ খ্রী.) জন্ম ভারতের মহারাষ্ট্রে। মারাঠি ও ইংরেজি উভয় ভাষাতেই কবিতা লিখেছেন। ইংরেজি ভাষায় লেখা তাঁর কাব্যগ্রন্থ জেজুরি (১৯৭৬) কমনওয়েল্থ কবিতা পুরস্কার পায় ১৯৭৭ সালে। জেজুরি ৩১ টি অংশে বিভক্ত একটি দীর্ঘ কবিতা। পশ্চিম মহারাষ্ট্রের একটি ছোট শহর জেজুরি।
সেখানে খাণ্ডব মন্দিরে ভ্রমণের কাব্যিক দিনপঞ্জী এই কবিতাটি। জেজুরি থেকে ৬ টি সহ আ গেম অফ টাইগারস এন্ড শিপ নামের আরেকটি কবিতার অনুবাদ এখানে পোস্ট করা হলো। ]
বাঘ ও ভেড়ার খেলা
কে বাঘ আর কে ভেড়া নিয়েছে
মনে হয় না তাতে কখনো পার্থক্য হয়েছে।
ফলাফল সব সময়ে একই:
সে জেতে,
আমি হারি।
তবে কোনো কোনো সময় যখন তার বাঘেরা
হুঙ্কার ছেড়ে ছুটছে
আমার ভেড়ার দলের অর্ধেকটা নিঃশেষ,
সাহায্য আসে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে:
উপরের দিক থেকে।
জংধরা বর্মধারী
তখনো পর্যন্ত যে নিরপেক্ষ,
জয়পুস্প ছুঁড়ে দেয় নিচে
ফুটপাতে কাঠকয়লায় আঁকা চৌখুপি ছকের উপর--
হলুদ এবং অপ্রাসঙ্গিক,
একটি বাঘের আরামকে নাশ করে দিয়ে,
এবং আরেকটিকে হুমকির মুখে ফেলে;
এবং শীঘ্রই নেমে আসে
আরেকটি ফুল--
হলুদটির মতোই
আর একই রকমভাবে অপ্রাসঙ্গিক-- কেবল
এইটুকু ছাড়া যে এটি নেমে আসে এমনকি আরো ধীরগতিতে;
কোনোরকম তল্লাশির পরোয়ানা ছাড়া একটি ফুল
তার কানের লতিকে ঢেকে দিয়ে
গণ্ডদেশ চারণ করে
অদৃশ্য হয়ে যায়
নিচু করে কাটা তার ব্লাউজের আড়ালে--
সচরাচর যেখানে সে লুকিয়ে রাখে
টুকরা টাকরা গোপন জিনিস--
কিছুটা চেতনা অসাড় করা
কিন্তু অতিশয় হতবিহ্বলকর গন্ধে
তাকে এমনকি আরো বেশি বিভ্রান্ত করে দিয়ে।
জেজুরি থেকে
মাকারান্দ
শার্ট খুলে রেখে
ভেতরে যাব পূজা করতে?
না, ঠিক আছে।
আমি না।
বরং তুমি যাও
যদি সেটাই তুমি চাও।
যাবার আগে
আমাকে কি একটা ম্যাচবক্স
দিয়ে যাবে?
আমি বাইরে এই উঠানেই থাকছি
যেখানে কেউ কিছু মনে করবে না
যদি আমি সিগারেট ধরাই।
মনোহর
দরজা খোলা ছিল
মনোহর ভাবল
এটা বুঝি আরও একটা মন্দির।
সে ভেতরে তাকাল।
কোন্ দেবতাকে
না জানি দেখতে পাওয়া যায়।
ত্বরিৎ ঘুরে দাঁড়াল সে
যখন আয়ত চোখ এক বাছুর
ফিরে তাকাল তার দিকে।
অন্য কোনো মন্দির তো এটা নয়।
সে বলল,
এ তো স্রেফ একটা গোয়ালঘর।
চৈতন্য
আঙুরের মতো মিস্টি
জেজুরির পাথর
বলেছিলেন চৈতন্য।
তিনি অকস্মাৎ মুখে পুরেছিলেন
একটা পাথর
আর থুক করে বের করেছিলেন দেবতাদের।
আঁচড়
দেবতা কী
আর পাথর কী
তার ভেদরেখা
যদি থাকেও
তবে তা খুবই সূক্ষ্ম
এই জেজুরিতে
আর অন্যসব পাথরই
হয় দেবতা নয়তো তার কোনো জ্ঞাতি
দেবতা ছাড়া
এখানে কোনো শস্য নাই
এবং দেবতারই চাষ হয় এখানে
সমস্ত বছর ধরে
এবং প্রতি প্রহরে
অনুর্বর মাটি
আর কঠিন পাথর থেকে
ঐ বিশাল প্রস্তর খণ্ড
শোবার ঘরের মতো আকার
ওটা হলো পাথরে রূপান্তরিত খাণ্ডবের স্ত্রী
গায়ে যে ফাটল
একদা তিনি ক্রোধবশত আঘাত হেনেছিলেন
খড়গ দিয়ে
ওটা তারই ক্ষতচিহ্ণ
আঁচড় দাও কোনো শিলাখণ্ডে
ঠিকরে বেরুবে কীংবদন্তি
স্টেশন কুকুর
স্থানটির আত্মা বাস করে
ঘেয়ো স্টেশন কুকুরটির
দেহের ভেতর
প্রায়শ্চিত্ত করছে সে
গত তিনশো বছর ধরে
আসবার ও যাবার গাছটির নিচে
কুকুরটি তার ডান চোখ খোলে
বেশ বড় করে যাতে দেখতে পায়
তুমি কোনো মানুষ নাকি উপদেবতা
নাকি অষ্টভূজা রেলওয়ে টাইমটেবলটি
বাড়ি মারতে আসে মাথায়
তার নিরাময়ের হাত দিয়ে
এবং তাকে স্বর্গে নিয়ে যেতে
কুকুরটি মনস্থ করে
সেইদিন এখনো আসে নাই।
এক বৃদ্ধা
এক বৃদ্ধা তোমার
জামার হাতা আঁকড়ে ধরে
আর চলতে থাকে পেছন পেছন।
সে চায় পঞ্চাশ পয়সার একটা মূদ্রা।
সে বলে তোমাকে দেখিয়ে দেবে
অশ্বক্ষুর মন্দিরে যাবার পথ।
তুমি সেটা ইতোমধ্যে দেখে ফেলেছ।
তবু সে খুঁড়িয়ে চলে তোমার পেছনে
এবং আরও শক্ত করে এঁটে ধরে তোমার জামা
যেতে সে দেবে না তোমাকে।
তুমি জানো বৃদ্ধারা কী রকমের হয়।
তারা আটকে থাকে চোরকাঁটার মতো।
তুমি ঘুরে দাঁড়িয়ে মুখোমুখি হও তার
একটা এস্পার ওস্পার করতে।
তুমি চাও এই প্রহসনের ইতি ঘটুক।
তুমি যখন তাকে বলতে শুনলে,
’এই অভিশপ্ত পাহাড়ে
একটা বুড়ো মানুষ কী আর করতে পারে তোমার?’
তুমি সোজা তাকালে আকাশের দিকে।
তার চোখে যে বুলেট কোটর ছিল
তার স্বচ্ছতার ভেতর দিয়ে।
আর তুমি তাকিয়ে আছো যখন
যে ফাটল ধরা শুরু হয়েছে তার চোখের চারিদিকে
সেটা ছড়িয়ে গেল তার চামড়ার বাইরে।
এবং চৌচির হলো পাহাড়গুলো।
এবং ফাটল ধরল মন্দিরগুলোতে।
এবং ভেঙে পড়ল আকাশ
প্লেট-গ্লাস ভাঙার ঠনঠন শব্দে
অবিচল বুড়িটির চতুর্দিকে
যে দাঁড়িয়ে আছে একা
আর তার হাতের ভেতর
তোমার বদল ঘটল
খুব অল্পই।
ব্যবহৃত ছবির লিংক
http://en.wikipedia.org/wiki/Arun_Kolatkar
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।