পরাঞ্জয়ী...
Click This Link
এখন মাত্র রাত ১০টা, রাত পোহাবার অনেক দেরী। দেরী কেন বলছি, যত বেশি দেরী তত বেশি সময় এবং সূযোগ আমার হাতে, হয় পালিয়ে যাবার, নয়ত এই বুকে মুখ লুকিয়ে থাকার! পালিয়ে কেন যাব? বাঁচার জন্য? দূর, আমি কি এমনিতেই বেঁচে আছি নাকি?! তার চেয়ে বরং এই ভালো। এই বুকটাতে মাথা রেখেই বাকি রাত টা কাটিয়ে দেই!
হঠাৎ মনে হল একটা হাত আমার পিঠের উপর দিয়ে জড়িয়ে ধরলো আমায়, যেন এখনি আমার গালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াবে! চমকাই নি তবে অবাক হলাম। নাহ! মনের বিভ্রাট!
------------------------------------------------------------------
এভাবেই একদিন ওর বুকে মাথা রেখে শুয়ে ছিলাম। আমি নিশ্চিত সেদিন ৩০ মিনিটে এক ঘন্টা হচ্ছিল।
নয়ত ৪/৫টি ঘন্টা এত দ্রূত চলে গেল কিভাবে?! "আচ্ছা, আজ ও আবার ফিরে আসতে চাইছিলো কেন? তবে কি ধর্ষিতা মেয়ে যেমন কূমারীত্ব হরনের গ্লানি লুকাতে ধর্ষককে জীবন সাথী করতে চায়, তেমনি ওকেও কি তখন কৌমার্যের ভাবনায় পেয়ে বসেছিলো হঠাৎ করে? ধ্যাৎ! তা কি করে হয়? ও তো নিজ ইচ্ছেতেই..........................আর পুরুষ তো পুরুষই,অসতীত্বের ভাবনা ভাবার সময় কই তাদের?! কিন্তু ও কে কি পুরুষও বলা যায়? পুরুষ ও তো মানুষ। মানুষ মাত্রই সত্য,সুন্দরের মানে বোঝে, ও তো বোঝেনি। তাহলে ও পুরুষও নয়! ও তবে কি???!!
তবে এই বুকটাতে শুয়েই বা আছি কেন? না না এই বুকটাতে আর কোন পাপ নেই, নেই কোন বিশ্বাসঘাতকতা! যা কিছু অসুন্দর, যা কিছু পাপ ওর ছিল আমি তাদের বিষ দিয়ে মেরে ফেলেছি একটু আগেই! আমি ভয় পাচ্ছিনা কেন? চিৎকার করছি না কেন? কেন? কেন?.......।
--------------------------------------------------------------------
:নিশি? আমার নিশু টা কি করে? কাঁদছে?
চমকে তাকালাম। দাঁড়িয়ে আছে আমার শাওন!
:তুমি? তুমি না.............?
: কি আমি?(একটা মায়া ভরা মুচকি হাসি) তুমি আমাকে মারলে কেন? এখন তুমি বাঁচবে কি করে?
:কি আর করতাম বলো?! যে বুকটায় মাথা রেখে আমি ভাবতাম আমার ভবিষ্যৎ কে, যে হাতটি ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতেও এত টুকু ক্লান্তি ছিলো না আমার সে অন্য কারও হবে তা কি ভাবতে পারি আমি, তুমিই বলো?! যে ঠোঁটে আমার ঠোঁটে ঝড় তুলতো তা ছুঁবে অন্য কোন নারীর ঠোঁটে,ছি!! কি ভীষণ! ভাবা যায়!
:কিন্তু এপারে বসে আমিই বা কি করি বলতো? তুমি নেই, কে কাকভোরে ঘুম থেকে ফোন করে তুলে দিয়ে বলবে"ওঠো,অফিস যাবে না?"
হাসি পেল আমার,"দূর বোকা, ওখানে বুঝি নেটওয়ার্ক আছে? আমি ফোন কি করে দেব?"
:তুমি তো দেখি আমার চেয়েও বোকা।
এখানে কি আমার অফিস আছে নাকি?
:হ্যা তাও তো ঠিক। আমি আসলেই পাগলী,তুমি পাগলী যে বলতে আমায় সে বড় সত্যি কথা ছিল!
:বলতাম কি গো, এখনও বলবো!
আমার পাশে এসে বসলো শাওন। হাতটি ধরে, কি মনে করে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। বললো" নিশি?"
:হুমম, বলো
:নাহ কিছু না
দেখলাম ওর ঠোঁট দু'টি নীলচে কালো হয়ে আছে।
:ঠোঁট দুটো এমন ভীষন নীল কেন হয়েছে তোমার?
:হয়ত, বিষের জন্য।
বড্ড খাসা ছিল জিনিসটা, কোথা থেকে নিয়ে এসেছো বলোতো?
একটা দীর্ঘশ্বাস পড়লো আমার। কি জবাব দেব আমি?!আমার হাত টা ধরলো আবার, বললো "দুঃখ করোনা,বিষেই বিষ কাটে। আমার ভেতরকার সমস্ত বিষ তোমার দেয়া বিষে অমৃত হয়েছে। আমি তোমাকে ভালবাসি, সত্যিই ভালবাসি এখন"
ঢং.............ঢং...................রাত ৩ টা.................
::কেন এমন করলে শানু? আমরা তো ভালই ছিলাম।
আমার দু'গাল বেয়ে ঝর ঝর করে ঝরছিল স্মৃতির বিন্দু গুলো।
চোখের সামনে ভাসছে রিকশা করে ঝড়ো বাতাসে বেড়ীবাঁধের রাস্তায় ঘোরার দৃশ্য, নীলক্ষেতে আমার কাঁধে ওর হাত রেখে চুপচাপ হেঁটে চলার দৃশ্য, চোরাপথে চুপটি করে আলতো চুমু এঁকে দৌড়ে পালানোর দৃশ্য, কানে ভাসছে সেই মধুর সম্মোধন "বউ, পেত্নী, সোনা, জান কিংবা মাঝে মাঝে পাগলী"। কত দিনের কত জমিয়ে রাখা অভিমান!
হঠাৎ কি যেন হল আমার! ফুঁসে উঠলাম।
:শানু, আমি পারবোনা, আমি পারবো না শানু। তোমাকে ছাড়া কিভাবে বাঁচবো আমি?!
: তবে এসো আমার কাছে। নিজে থেকে জোর করে নিয়ে আসবো সে অধিকার তো হারিয়েছি।
আমি বুক পেতেই তো আছি,এসো জান!
:কিভাবে শানু?কেমন করে যেতে হয় ওখানটাতে?
মুচকি হেসে চোখের ইশারায় দেখালো খালি পানির গ্লাসটা। আমি দৌড়ে গেলাম। "কোথায় যেন রেখেছিলাম শিশিটা?" আবার উদ্ভ্রান্তের মত ছুটলাম ঘরের আরেক প্রান্তে। সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলছি, তবুও সেই শিশিটা খুঁজতেই হবে আমাকে। হ্যা পেয়েছি।
"শানু পেয়েছি শানু, আমি আসছি......" হঠাৎ কিসে যেন ধাক্কা খেলাম, হয়ত টেবিল বা অন্য কিছু। তারপর জানিনা আর কিছুই।
----------------------------------------------------------------
চোখ মেলে দেখলাম সাদা কাপড়ে মোড়া একটি দেহ নিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন উর্দী পরা লোক, দুজন মহিলা পরখ করছে আমার মুখ, ঘাড়, গলায় গত রাতের সেই নীলচে জমাট ভালবাসার চিহ্নগুলো! আমি থমকে গেছি। ঐ লাশটি আর আমার মধ্যে পার্থক্য এতটুকু সে সোজা হয়ে বসতে বা দাঁড়াতে পারেনা, আর আমি পারি। কেউ একজন বলছে "মেয়েটিকে মানসিক ভাবে সূস্থ মনে হচ্ছেনা"।
মাঝে বেশ খানিকটা সময় পার হল..........................
তারপর............
হ্যা, একটা লাশ আমি। জিবন্ত লাশ। আমার এই ছোট্ট ঘরটিতে মাঝে মাঝে দু'একজন নার্স আর ডাক্তার ছাড়া কেউ আসেনা। অনেক সময় তাদের বলতে শুনি "পুরা হাসপাতালে এর মত শান্ত পাগল আর একটিও নেই!" আমি পাগল??? না আমিও পাগল নই। আমার শানুও মরেনি।
সে আসে রোজ রাতে। আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়, গল্প করে, আমি অভিমান করলে দুষ্টামি করে গেয়ে ওঠে "তবু কেনে রাগ দেখালি দেব আমি গলায় ফাঁসি................"
তবে কেন আমি শান্ত থাকবো না? কেন বিরক্ত করবো তোমাদের? তোমাদের ভাষায় কি যেন বলে, হ্যা "ভায়োলেন্ট" হব??
নিশি রাতের শাওন ধারা যে আছে আমার কাছে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।