আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্কুলের পাঠ্য আমার বই... মনে পড়ে গেল

I am what I am and that's how I would be. No I am not stubborn. I just want to be myself.

প্রথম কবিতাটা কোন ক্লাসে পড়েছিলাম? আমার বই প্রথম ভাগ? সিংহ মামা, সিংহ মামা, করছো তুমি কী? এই দেখ না কেমন তোমার ছবি এঁকেছি!! কিংবা ভোর হল দোর খোল খুকুমণি ওঠো রে... জানিনা সবার এমন হয় কিনা, আমি প্রতিটা কবিতা পড়ার সময় নিজেকে কবিতার বিষয়বস্তুর মাঝখানে কল্পনা করে নিতাম। একেবারেই পড়ুয়া ছিলাম না, পড়তে ভাল লাগতোই না। কিন্তু সেই ছোটবেলার ছড়াগুলো বড়বেলায় অনেকবার আউড়ে গেছি। যে বছর খোকা ঘুমাল পাড়া জুড়ালো পড়লাম সেবছরই একটা কবিতা ছিল এরকম একদা এক বাঘের গলায় হাড় ফুটিয়াছিল...না না না গান না খোকন, গল্প তুমি বল... আরেকটা তো আমরা ভাইবোনেরা ট্রেনে উঠলেই বলতাম মামুদ মিয়া বেকার তাই বলে কি সাধ নাই তার বিশ্ব ঘুরে দেখার? আসলে পরে চেকার বললো হেসে মামুদ মিয়া "ট্রেন কি তোমার একার?" একই বইয়েই ছিল ক্রিং ক্রিং টেলিফোন হ্যালো হ্যালো হ্যালো কে তুমি, কাকে চাও, বলো বলো বলো। আমি ম্যাও, হুলো ক্যাট, ইঁদুরকে চাই।

জরুরী আলাপ আছে, তুমি কে হে ভাই? আমিই ইঁদুর, তবে কথা হলো এই আমি গেছি মার্কেটে, বাড়িতেই নেই! ক্রিং ক্রিং টেলিফোন, শোন হে ইঁদুর... শুনবোনা, শুনবোনা, দূর-দূর-দূর!! সেই কাজলা দিদির কবিতাটা পড়ে খুব মন খারাপ হতো। আমার বড়বোনের বিয়ে হয়েছিল সদ্য, কবিতা টা পড়লে ওর কথা মনে পড়তো খুব। বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই- মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই? পুকুর পাড়ে, নেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই। মাগো, আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই? সেদিন হতে দিদিকে আর কেনই বা না ডাকো দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো? খাবার খেতে আমি যখন দিদি বলে ডাকি তখন- ও ঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো, আমি ডাকি, তুমি কেন চুপটি করে থাকো? বল্ মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে? কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুলবিয়ে হবে! দিদির মত ফাঁকি দিয়ে আমিও যদি লুকাই গিয়ে তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে র'বে? আমিও নাই, দিদিও নাই- কেমন মজা হবে! ভুঁইচাঁপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল মাড়াসনে মা, পুকুর থেকে আনবি যখন জল ডালিম গাছের ডালের ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে, দিস না তারে উড়িয়ে মাগো, ছিঁড়তে গিয়ে ফল- দিদি এসে শুনবে যখন, বলবে কি মা বল? বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই- এমন সময় মাগো, আমার কাজলা দিদি কই? বেড়ার ধারে, পুকুরপাড়ে ঝিঁ-ঝিঁ ডাকে ঝোপে- ঝাড়ে নেবুর গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতো জেগে রই- রাত যে হল, মাগো, আমার কাজলা দিদি কই? ক্লাস টু-তে মনে আছে পিকনিক নিয়ে একটা ছড়া ছিল যেটা আমরা নিজেরা চড়ুইভাতি করতে গেলে বলতাম... নুরু, পুসি, আয়শা, শফি সবাই এসেছে আমবাগিচার তলে যেন তারা হেসেছে। রাঁধুনীদের সখের রাঁধার পড়ে গেছে ধুম... বোশেখ মাসের এই দুপুরে নাইকো কারো ঘুম।

বাপ মা তাদের ঘুমিয়ে আছে এই সুবিধা পেয়ে বন ভোজনে মিলেছে আজ দুষ্টু কটি মেয়ে। কেউ বা রাঁধে কোর্মা পোলাও কেউবা রাঁধে ভাত, কেউ বা বলে "দুত্তরি ছাই পুড়েই গেল হাত" ...। ছিল মজার কবিতা, যতবার পড়তাম, নিজেই হেসে কুটোপাটি!! হাসতে নাকি জানেনা কেউ কে বলেছে ভাই? এই শোন না, কত হাসির খবর বলে যাই। খোকন হাসে ফোকলা দাঁতে চাঁদ হাসে তার সাথে সাথে। কাজল বিলের শাপলা হাসে, হাসে সবুজ ঘাস... এখন মনে করতে গেলে দেখি যত বড় হয়েছি, ততো ভুলেছি।

অনেক বাচ্চা ক্লাসের ছড়াগুলো যত সহজে মনে পড়ে, ওপরের ক্লাসের গুলো মনে পড়লেও খুবই কম। নিচের ক্লাসের শিক্ষণীয় ছড়াগুলো যেমন অনেক সহজবোধ্য ছিল, তেমনি যত উপরের দিকে উঠেছি, ছড়া হয়ে গিয়েছে কবিতা, আর সেই কবিতার ভিতরে লুকিয়ে থাকা মানে বের করতে দাঁতে কলম কামড়াতে হতো। কিছু কিছু কবিতা চরম বোরিং ছিল আবার তারমধ্যে শেখারও অনেক কিছু ছিল। আপনারে বড় বলে বড় সেই নয়, লোকে যারে বড় বলে, বড় সেই হয় মনে আছে এই পদ্যটা কেন জানি মুখস্থ করতে কষ্ট হয়েছিল, যেমন কঠিন মনে হতো মা কথাটি ছোট্ট অতি, কিন্তু জেনো ভাই, ইহার চেয়ে নামটি মধুর তিনভূবনে নাই। যেবছর থেকে কবিতা মুখস্থ লিখা ও তার মধ্যে আমার ঘন ঘন বানান ভুল করা শুরু হলো, সেবছর থেকে আগ্রহ কমতে থাকলো।

এর মধ্যেই ক্লাস ফাইভে এক গদ্য পেয়ে গেলাম যেটা কিনা ছড়ার ছন্দে লেখা!! আমার এত পছন্দ হলো যে আমি অনেক কষ্টে সেই গদ্য মুখস্ত করলাম। বেশিদিন মনে রাখতে পারিনাই। তাই ছোটভাইয়ের বইয়ে যখন খুঁজতে গেলাম দেখি ওটা পাঠ্যবই থেকে মুছে ফেলেছে। এক ছোট ছেলে মাহবুব সারাজীবন তার মনিবের হাতে মার খেত, আর মনিব কে ভীষণ ভয় পেত। একদিন সে কিভাবে প্রতিবাদ করে বদলে গেল তারই কাহিনি।

সবাই অবাক, সবাই ভাবে, ব্যাপারখানা কী? ভয়কাতুরে মাহবুব আজ এমন সাহসী? কাঁপুনি নেই, কঁকানি নেই, হেঁট করে নেই মাথা দুটি চোখে ভীরুতা নেই, জড়ানো নয় কথা। ...তাকে কেঁচোই বলা যেতো-রাতারাতি মানুষ হলো সে, আহা, মানুষ মানে ছেলেমানুষ, তার তো বয়স বেশী নয়- কিন্তু কেঁচো ছেলে কোন সাহসে বদলে পরিচয় শক্ত মেরুদন্ড সহ মানুষ ছেলে হয়? সেই কাহিনিই বলি। তখন গোধুলি। সূয্যি গেছে ডুবে। আঁধার নামে পূবে... গল্পটার শেষের কথাটা ফাটাফাটি অত্যাচারী চিরকালই ভীরু।

যতই মোটা হোক না দেহ, সাহস বেজায় সরু। এভাবেই বুঝি সাহিত্যপ্রেম হয়। কতশত ছড়া, কত কবিতা, কত প্রবন্ধ পড়া হলো ক্লাস টেন অব্দি। যে কয়বছর মা হাতে ধরে পড়িয়েছেন সে কয়বছর মনে হয় আদ্যোপান্ত মনে আছে। লাগামে ঢিল পড়ার পর মনে হয় মন সরে গিয়েছে সেবা প্রকাশনী, সাথে অন্যান্য যা হাতের কাছে পাই।

ক্লাস নাইন থেকে চালাচালি শুরু করলাম mills & boon...সে অন্য কাহিনী, আরেকদিন নাহয় লিখব। আমার জায়গায় নুশেরাপু হলে এই নিয়ে আরো অনেক ক্যাচাল পাড়তে পারতো, কিন্তু আমার আবার অত লম্বা লেখা আসেনা। নিজেই খেই হারিয়ে ফেলি। তবে একটা আফসোস এখন হয়। ক্লাস ফাইভ অব্দি আমার বই গুলো সব জমিয়ে রাখা উচিত ছিল।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.