বাংলাদেশ আমার দেশ
একদিন একটা ছোট ছেলে তার স্কুলের ব্যাগ বগলে নিয়ে দোকানে ঢুকল। দোকানটায় সংসারের খাদ্যদ্রব্যই বিক্রি হয়।
দোকানে তখন বেশ ভিড়। সে দোকানের মাঝামাঝি একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে ঘাড় ফিরিয়ে ফিরিয়ে সব দেখতে লাগল। আর নানা রকম আওয়াজ তার কানে আসতে লাগল:
−এই যে, মাংসটা নিন।
হেরিং মাছ পাবেন সামনের কাউন্টারে। সবাই যদি চর্বি না চান, তাহলে তো মুশকিল−ইত্যাদি সব কথা।
খানিক পরে ছেলেটা সামনের একটা কাউন্টারের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। কাউন্টারের কাচের ভেতর দিয়ে দেখল সেলসম্যান বা দোকানি লোকটা আস্তিন গুটিয়ে কাজে খুব ব্যস্ত। ছেলেটা একদৃষ্টে দেখতে লাগল দোকানিকে।
দোকানি বেশ চটপট সসেজ (এক রকমের শুয়োরের মাংস) ওজন করে খদ্দেরদের দিচ্ছে।
দোকানি হঠাৎ দেখল, একটা ছেলে তার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে আছে। তাকে ডেকে বলল, কী চাই খোকা? খদ্দেরদের বলল, একটু সরে গিয়ে বাচ্চাটাকে আসতে দিন তো।
ছেলেটা তার খাতা দেখে বলল, পিওতরকে বলা হলো ১০০ গ্রাম সসেজ আনতে দুই রুবল ২০ কোপেক কিলো হিসাবে।
দোকানি শুনেই একটা কাগজে লিখে নিল, ১০০ গ্রাম সসেজ।
−আর কি চাই, খোকা?
−দেড় শ গ্রাম মাখন তিন রুবল ৬০ কোপেক হিসাবে। ছেলেটা তার খাতা দেখে বলল আবার।
দোকানি বলল, হ্যাঁ, লিখে নিই। ১০০ গ্রাম মাখনের দাম ৩৬ কোপেক, কাজেই আর পঞ্চাশের দাম হচ্ছে ১৮ কোপেক, মোট হচ্ছে ৫৪ কোপেক। আর?
−আর ২০০ গ্রাম মাংস তিন রুবল ৭০ কোপেক কিলো হিসাবে।
তা ছাড়া সাতটা লেবু ২৫ কোপেক করে।
−বেশ, ২০০ গ্রাম মাংস, সাতটা লেবু। আর?
−আর কিছু নয়। তাহলে পিওতরকে কত দিতে হবে?
−বলছি, দাঁড়াও। দোকানি কাগজের ফর্দে যোগ দিয়ে বলল, মোট হচ্ছে চার রুবল ১৬ কোপেক।
জিনিসগুলো ওজন করে দেব?
−না না। আমি শুধু হিসাবটা জানতে চাইছিলাম। ছেলেটা দিব্যি সরলভাবেই বলল কথাটা: মানে, ব্যাপারটা কি জানো, স্কুলে অঙ্কটা দিয়েছে, বেশ শক্ত অঙ্ক। তাই না?
ছেলেটা হিসাবের যোগফলটা তার খাতায় লিখে নিয়ে চলে গেল।
এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরই এক মহিলা হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন ওই দোকানে।
গায়ে কমলা রঙের স্কার্ফ, মাথায় ওড়না আর শক্তহাতে ধরা সেই ছেলেটা।
−কোথায় সেই লোক? মহিলা চেঁচিয়ে বলতে বলতে খদ্দেরের ভিড় ঠেলেঠুলে ঢুকতে লাগলেন, কোথায়, তাকে দেখা!
−ওই যে কাউন্টারে। ছেলেটা ভয়ে ভয়ে দেখিয়ে দিল মাকে।
মহিলা কনুইয়ের গুতো মেরে মেরে সেই দোকানির কাউন্টারের সামনে হাজির হলেন। বললেন, ওহে, তোমাদের কমপ্লেন-বইটা দাও।
একটা বাচ্চা ছেলের সঙ্গে ইয়ার্কি করার মজা বুঝিয়ে দেব তোমাকে।
−কেন, কী হয়েছে ম্যাডাম? দোকানি অবাক হলো। আমি তো আপনাকে চিনতে পারছিনে?
−আমাকে চেনার দরকার নেই। বলি, এই ছেলেটাকে চেন? ছেলেটাকে ঠেলে এগিয়ে দিলেন মহিলা। ছেলেটা স্কুলের অঙ্কের খাতায় একটা গোল্লা পেয়েছে, জানো? এই স্তেপান, দেখা তোর খাতাটা! বলেই মহিলাই খাতাটা ছিনিয়ে নিয়ে দোকানির নাকের সামনে ধরলেন, দেখলে, দেখলে ভালো করে?
দোকানি হকচকিয়ে বলল, দেখলাম তো! তা আমি কী করেছি?
−তার মানে? তুমিই তো করেছ! মহিলা বললেন, তুমিই তো হিসাব করে বলেছ চার রুবল ১৬ কোপেক।
কিন্তু অঙ্কটা কষে দেখ তো, হবে ৩ রুবল ২৫ কোপেক!
এতক্ষণে দোকানি ব্যাপারটা বুঝল।
ঝাঁজ দেখিয়ে বলল, আপনার ছেলের স্কুলের অঙ্ক দিয়ে আমি কী করব ম্যাডাম? আমি দোকানের জিনিসের বর্তমান দর হিসেবেই যা লাগবে তাই বলেছি। এটা দোকান ম্যাডাম, স্কুল নয়।
নাউম ল্যাবকোভস্কি: রাশিয়ান রম্যলেখক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।