আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাথরে স্বাধীনতা সংগ্রামঃ ভাস্কর্য্যে মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।-১

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

পাথরে স্বাধীনতা সংগ্রামঃ ভাস্কর্য্যে মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ, কালজয়ী ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি সময় ও কালের বিপরীত স্রোতে টিকিয়ে রাখার জন্য যুগে যুগে ভাস্কর্য এবং স্থাপত্য শিল্পের সাহায্য নিয়ে সৌধ, স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। মহান স্বাধীনতার গৌরবোজ্বল ভূমিকার অসামান্য চেতনার অনুষঙ্গ এ সৌধগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরার চেস্টা করছিঃ- জাতীয় স্মৃতিসৌধ অবস্থান: ঢাকার অদূরে সাভারের নবীনগরে। স্থপতি: মাইনুল হোসেন। স্থাপনাঃ ১০৯ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত এ স্মৃতিসৌধটি।

যার অপর নাম "সম্মিলিত প্রয়াস"। এর উচ্চতা ১৫০ ফুট। ১০টি গণকবর রয়েছে এর প্রাঙ্গনে। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ সালে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর এটার উদ্বোধন করা হয় ১৬ ডিসেম্বর ১৯৮২ সালে।

প্রতিপাদ্যঃ স্বাধীনতা আন্দোলনের সাতটি পযার্যের নিদর্শন স্বরূপ এ স্মৃতিসৌধে রয়েছে ৭টি ফলক। পর্যায় সাতটি হচ্ছে ৫২ এর ভাষা আন্দোলন ,৫৪ এর নির্বাচন, ৫৮ এর সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ৬২ এর শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন, ৬৬ এর ছয় দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুথান ও ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ। ৭টি ফলকের ব্যাপারে এর স্থপতি মাইনুল হোসেনের ভাষ্য, ৫২ তে হলো ভাষা আন্দোলন, তাতে পাঁচ আর দুই সাত। ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস; এখানেও পাচ্ছি ছয় আর একে সাত। তারপর আমাদের বীরশ্রেষ্ঠর সংখ্যাও সাত।

সেজন্যই সাতটি স্তম্ভ রাখা হয়েছে স্মৃতিসৌধে। রায়েরবাজার বধ্যভূমিঃ অবস্থানঃ মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিমপাশের বেড়িবাধে এর অবস্থান স্থপতিঃ ফরিদউদ্দিন আহমেদ ও মো: জামি-আল শফি। স্থাপনাঃ ৩.১৫ একর জমির উপর নির্মিত হয়েছে এ সৌধটি। এ স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ১৯৯৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর। ১৯৯৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর এটির দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ হয়।

প্রতিপাদ্যঃ স্মৃতিসৌধটি রাযেরবাজার আদি ইটখোলার প্রতীক, যেখানে বুদ্ধিজীবিদের মৃতদেহগুলো পড়েছিল। দেয়ালটির দুদিক ভাঙ্গা; যা ঘটনার দুঃখ ও শোকের গভীরতা নির্দেশ করে। বাঁকা দেয়ালের সম্মুখভাগে একটি স্থির জলাধার আছে। এর ভিতর কালো গ্রানাইট পাথরের পলেস্তারা উঠে এসেছে। এটি শোকের প্রতীক।

স্মৃতিসৌধের প্রবেশপথের ধারে তৈরি করা হয়েছে একটি কৃত্রিম বটগাছ। '৭১ সালে এখানে একটি বটগাছ ছিল। যার নিচে বুদ্ধিজীবিদের প্রথম ধরে এনে শারীরিক নির্যাতন করে পরে ইটখোলায় হত্যা করে। চিরসবুজ এ গাছটি ছাড়া , চত্বরে আর যে সব গাছ লাগানো হয়েছে সেগুলোর পাতা শীতে ঝরে পড়ে মনে করিয়ে দেয় দেশের জন্য ঝরে পড়া অকুতোভয় বীরমুক্তিযোদ্ধাদেরকে। মুজিবনগর স্মৃতিসৌধঃ অবস্থানঃ মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরের ভবেরপাড়া গ্রামে স্থপতিঃ তানভীর কবির।

স্থাপনাঃ মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে রয়েছে মোট ২৩টি স্তম্ভ। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গঠিত অস্থায়ী সরকারের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নান্দনিক স্থাপত্যকর্ম ও নির্মানশৈলীতে নির্মিত হয়েছে এ সৌধটি। প্রতিপাদ্যঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন ঐতিহাসিক স্থান মুজিবনগর। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য এখানে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিষ্ঠা ঘটে। এ স্মৃতিকে সমুন্নত রাখতেই নির্মিত হয়েছে এ স্মৃতিসৗধটি।

শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতিসৌধঃ অবস্থানঃ ঢাকার মিরপুর ১ নম্বরে স্থপতিঃ মোস্তফা হারুন কুদ্দুস হিলি স্থাপনাঃ শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর। ১৯৮৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর এটি সম্প্রসারিত ও নবরূপে উদ্বোধন করা হয়। প্রতিপাদ্যঃ ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার চক্রান্তে দেশের সেরা সন্তানদেরকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী। মহান এ বীর সন্তানের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতে নির্মিত হয়েছে এ স্মৃতিস্তম্ভটি। যেটি সগর্বে জানান দিচ্ছে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অসামান্য আত্মত্যাগের কথাকে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরঃ অবস্থান: সেগুনবাগিচা, ঢাকা স্থাপনাঃ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দেশের প্রথম জাদুঘর এটি। সর্ম্পূন বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এ জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ। প্রতিপাদ্যঃ "ফিরে দেখ একাত্তর ; ঘুরে দাড়াঁক বাংলাদেশ" শ্লোগানকে সঙ্গীকে করে সফল পদচারনা এর। এতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধোদের ব্যবহত সামগ্রী, ডায়েরি, মুক্তিযুদ্ধোদের রোজনামচাসহ অনেক কিছু। রয়েছে যুদ্ধের ছবি, তৎকালীন পত্রপত্রিকা আর মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক দূর্লভ সামগ্রী।

প্রর্দশনীর সময়ঃ সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। রবিবার বন্ধ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (রেসকোর্স ময়দান)ঃ ৭ই মার্চ, ১৯৭১। রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)। সকাল থেকেই ভেসে যাচ্ছিল জনস্রোতে।

সকলের গন্তব্যই মিলেছে একস্থান-রেসকোর্স ময়দানে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের উজ্জ্বলতম মাইলফলক রমনার রেসকোর্স ময়দান। "এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"-এমনিভাবে একাত্তরের ৭ই মার্চ এখান থেকেই পরাধীনতার শৃংখল ভাঙ্গার আহবান জানিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বসন্তের পাতাঝরা দিনশেষে বৃক্ষশোভিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও শিশুপার্কের যে জায়গায় গাছে গাছে নতুন কুড়িঁ উঁকি দিচ্ছে একাত্তরের এই দিনে সেখানে অংকুরিত হয়েছিল আজকের বাংলাদেশের। এ স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই বর্তমানে সেই স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে স্মৃতিসৌধ "শিখা অর্নিবান"।

অবশ্য এটির নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। তাই সাধারণর জন্য উন্মুক্ত নয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.