আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রবাসের পথে ... (৯) জাপানের ইতিহাস-১

পিছনের পায়ের ছাপের রেখাটা র্দীঘ আর অস্পষ্ট হয়ে আসছে... ক্রমশঃ...
(আদিকথাঃ কোন পরিকল্পনা ছাড়াই শুরু হয়েছিলো প্রবাসের পথে সিরিজটি। কোন এক বৃষ্টিস্নাত সকালে প্রবাস জীবনের একাকীত্বতা ঘুচানো, কিছুটা অভিগ্গতা শেয়ার সহ নিজের জানার পরিধিটুকু বাড়ানোর ইচ্ছে থেকেই মূলতঃ শুরু হয়েছিলো এই সিরিজটি। ফলে এই সিরিজটির কোন ধারাবাহিকতার বাধ্যবাধকতা ছিলো না। কিন্তু গত ৯টি পর্ব শেষে ধারাবাহিকতার প্রয়োজনীয়তাটুকু খুব গভীর ভাবে অনুভূত হচ্ছে। কাল পরিভ্রমনের যাত্রায় পিছু ফিরে যাওয়ার উপায়টা আমাদের জানা নেই।

তাই এই ব্যর্থতাটুকু স্বীকার করেই নাহয় নতুন করে প্রচেষ্টার প্রয়াস...) আদি জাপান (খ্রীষ্টাব্দ ৭১০ সময়কাল পর্যন্ত): খ্রীষ্টপূর্ব ১৩০০০ সাল থেকে ৩০০ সাল পর্যন্ত সময়কে জাপানের জ্যামন পিরিয়ড (Jomon Period) বলা হয়। এসময়কালীন জাপানের অধিবাসীদের জীবিকা ছিলো শিকার ও মৎস্য আহরন। খ্রীষ্টপূর্ব ৩০০ সাল থেকে খ্রীষ্টাব্দ ৩০০ সাল পর্যন্ত সময়কে ইয়াইয়োই পিরিয়ড (Yayoi Period) বলা হয়। এই পিরিয়ডের খ্রীষ্টাব্দ ১০০ সালে জাপানে ধান চাষ শুরু হয়। কৃষিকাজের সাথে সাথে সামাজিক স্তর বিন্যাস শুরু হয় এবং দেশের বিভিন্ন অংশে ক্ষমতাশালী জোতদারদের আবির্ভার ঘটে।

জনশ্রুত আছে এসময় জাপানে হিমিকো (বা পিমিকো) নামে একজন রানী ছিলেন। এই সময়কালেই তৎকালীন জাপানে কোরিয়া হতে লৌহের ব্যবহার সহ অন্যান্য আধুনিক ধ্যান ধারণার প্রচলন ঘটে। খ্রীষ্টাব্দ ৩০০ সাল থেকে ৫৩৮ সাল পর্যন্ত সময়কে কোফুন পিরিয়ড (Kofun Period) বলা হয়। এই সময়কালে উর্বর কিনাই এলাকা (ওসাকা, কোবে, কিয়োটো এবং নারা এই চারটি প্রিফেকচার নিয়ে কিনাই এলাকা) জাপানের সকল ক্ষমতার কেন্দ্রে পরিণত হয়। খ্রীষ্টাব্দ ৪০০ সালের দিকে নারা প্রিফেকচারকে ঘিরে জাপানের রাজনৈতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

তখন এর নাম ছিলো ইয়ামাতো জাপান। এই ইয়ামাতো জাপান তৎকালীন কিয়ুসো থেকে কিনাই এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে। কিন্তু কান্তো (বর্তমানের টোকিও, ইয়োকোহামা সহ আরো ৫টি প্রিফেকচার), তোহুকু (জাপানের উত্তরের বৃহত্তম দ্বীপ হোনসুর ৬টি প্রিফেকচার) এবং হোক্কাইডো (জাপানের দ্বিতীয় বৃহত্তম, সর্বউত্তরের তুলনামূলকভাবে স্বল্পন্নত দ্বীপ) এলাকা এর বাহিরেই থেকে যায়। তখন সম্রাটরা ছিলেন ইয়ামাতো জাপানের শাসক। সম্রাটরা সাধারণতঃ রাজধানীতেই বসবাস করতেন, কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে এই রাজধানী প্রায়ই এক শহর থেকে অন্য শহরে স্থানান্তর করা হতো।

কিন্তু অচিরেই সোগা ক্লান ইয়ামাতো জাপানের রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে ক্ষমতা গ্রহন করে। এসময় সম্রাটরা শুধুমাত্র রাজ্যের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হতেন এবং সিনটো ধর্মের যাজক হিসাবে দায়িত্ব পালন করতেন। মজার বিষয় হচ্ছে এই সোগা ক্লান ছিলেন অন্যতম ক্ষমতাশালী ক্লান যিনি কোরিয়া থেকে জাপানে বৌদ্ধ ধর্ম বিস্তারে অনবদ্য ভূমিকা রাখেন। এসময় কোরিয়ার কুদারা রাজ্যের সাথে সুসম্পর্কর কারণে কিনাই এলাকা ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী হয়। বাস্তবতা হচ্ছে তখন জাপানের শাসন ব্যবস্থার এবং ধর্মের উপর কোরিয়ার খুব শক্তিশালী প্রভাব ছিলো।

৫৩৮ বা ৫৫২ সালের দিকে জাপানে বৌদ্ধধর্মের প্রসার ঘটে। এই প্রসারে জাপানের শাসকশ্রেণী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমসাময়িক কালে প্রিন্স সোতোকু এই অন্চলে চাইনিজ ধ্যানধারণা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি সেসময় আদর্শগত এবং রাজনৈতিক ১৭টি আর্টিকেলের একটি সংবিধান প্রণয়ন করেন। এই ইয়ামাতো পিরিয়ডেই জাপানে কনফুসিয়ানিজম এবং টাওইজম ধারণাসহ চাইনিজ লিখন পদ্ধতির প্রসার ঘটে।

খ্রীষ্টাব্দ ৬৪৫, কামাতারি, ফুজিওয়ারা ক্লান যুগের সুচনা করেন। এই ক্লানের পরই আসে একাদশ শতাব্দীর মিলিটারী ক্লাস - সামুরাই। এই বছরই জাপানের তাইকা রিফর্ম শুরু হয়। এই রির্ফম অনুসারে একটি নতুন সরকার ও প্রশাসনিক কাঠামোর প্রচলন ঘটে। নতুন এই রির্ফমে সকল জমি রাষ্ট্র গ্রহন করে, এবং পরবর্তীতে তা সমান ভাগে কৃষকদের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়।

একটি নতুন রাজস্ব আদায় পদ্ধতিও গ্রহন করা হয়। আর এসব কিছুই মূলতঃ চাইনিজ ধারণা হতে আসে। (তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট) ==================== আগের পর্বসমুহঃ প্রবাসের পথে... (১) ওসাকার অলিগলি... প্রবাসের পথে... (২) জাপানের ঐতিহ্য... প্রবাসের পথে... (৩) জাপানীজ কিমোনো... প্রবাসের পথে... (৪) জাপানীজ সুসি... প্রবাসের পথে... (৫) ফসলের ছবি... প্রবাসের পথে... (৬) হকুসাই চিত্রকর্ম... প্রবাসের পথে... (৭) ইকেবানা... প্রবাসের পথে... (৮) জাপানীজ পুতুল-নিনগো...
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।