পিছনের পায়ের ছাপের রেখাটা র্দীঘ আর অস্পষ্ট হয়ে আসছে... ক্রমশঃ...
সারা পৃথিবীতে নিজের যেসব ঐতিহ্যের জন্য জাপান বিখ্যাত, তার অন্যতম হচ্ছে খাবার। অনেক জাপানীজ খাবার স্বাধে পৃথিবীর মধ্যে অদ্বিতীয়। তার মধ্যে অন্যতম সুসি। সুসি শুধূমাত্র স্বাধ-এর জন্যই নয়, বরং তৈরীর সহজ কৌশলের জন্যও সমাদৃত। আজ সুসি তৈরীর কৌশল নিয়ে আলোচনা করবো।
সুসি তৈরীর জন্য আপনাকে বেশ কয়েকটি ধাপ অনুসরন করতে হবে। ধাপগুলো নিচে আলোচনা করছি...
১) সুসি তৈরীর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন সুসি ভাত। সেজন্য স্টিকি রাইস ব্যবহার করতে হবে। স্টিকি রাইস হলো সেই চাল যা রান্নার পর, ভাত আঠালো হয়, ঝরঝরে নয়।
রান্নার পূর্বে চাল কমপক্ষে ৩০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
ভিজিয়ে রাখার পর দেখতে হবে চাল নিচের ছবির মতো আছে কিনা... যদি নিচের ছবির মতো থাকে তাহলে আরো ভিজিয়ে রাখতে হবে।
আরো ১৫-২০ মিনিট পর পূনরায় পরীক্ষা করতে হবে চাল নিচের ছবির মতো হয়েছে কিনা...
চাল যদি উপরের ছবির মতো হয়ে থাকে, তবে এবার চাল ধুয়ে ফেলতে হবে। যতক্ষণ চাল ধোয়ার পানি ঘোলাটে থাকবে ততক্ষণ চাল ধুতেই হবে। ধোয়া শেষ হলে চাল থেকে পানি সম্পূর্ণ বের করে ফেলতে হবে।
এবার একটি ননস্টিকি প্যান নিতে হবে।
ননস্টিকি প্যান না নিলে ভাত রান্নার সময় প্যানের নিচে লেগে যেতে পারে।
এবার সমপরিমান (দুই কাপ চাল + দুই কাপ পানি; উদাহরণ হিসাবে এখন থেকে ২৫০ মি.লি.-এর কাপ বিবেচনা করা হবে) চাল ও পানি প্যানে নিয়ে চুলায় মাঝারি আচেঁ বসাতে হবে। এরপর প্যানের ঢাকনা লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখতে হবে। তারপর ঢাকনা উঠিয়ে দেখতে হবে ভাত সিদ্ধ হয়েছে কিনা। ভাত কিছুটা ভেজা ভেজা থাকবে, তবে কোন পানি থাকবেনা।
যদি ভাত সিদ্ধ না হয়ে থাকে, তবে ১/২ কাপ গরম পানি দেয়া যেতে পারে। তবে সাবধান হতে হবে যেনো ভাত নিচে লেগে না যায়। প্রয়োজনে নাড়তে হবে। রান্না হয়ে গেলে ভাত দেখতে নিচের ছবির মতো হবে...
এরপর ভাত প্লাস্টিকের (বা কাঠের) পাত্রে নিতে হবে। প্লাস্টিকের (বা কাঠের) পাত্রে নেয়ার পরপরই দুই থেকে তিন টেবিল চামচ রাইস ভিনেগার দিয়ে ভাতের সাথে ভালো করে মিশাতে হবে।
যদি রাইস ভিনেগার পাওয়া না যায়, তাহলে অন্য ভিনেগারেও কাজ চালানো যেতে পারে। তবে কিছুতেই ভিনেগার বেশি দেওয়া যাবে না। এতে সুসি টক হয়ে যাবে।
অতঃপর প্লাস্টিকের পাত্রটি সুতির কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে স্বাভাবিক তাপমাত্রায়।
২) সুসি তৈরীর অন্যান্য উপকরণঃ
- অ্যাভেকেডো
- সুসি মাছ (যেমনঃ স্যালমন, টোনা ইত্যাদি)
- ক্রাব স্টিক
- ক্যাপসিকাম
- সয়াসস
- ওয়াসাবি
- নোরি
- তিসি
- সুসি রোলিং ম্যাট
সুসি মাছঃ
জাপানে সুসি তৈরীর জন্য সুসি গ্রেডের মাছ বাজারে পাওয়া যায়।
এই মাছ সাধারণতঃ স্যালমন, টোনা, চিংড়ি এই জাতীয় হয়। অর্থাৎ লোনা পানির মাছ। এই লোনা পানির মাছকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রসেস করে বাজারে বিক্রি করা হয়।
ওয়াসাবিঃ
ওয়াসাবি, সরিষা গাছের মতো এক ধরনের গাছের শিকড় গুড়া করে বানানো পাউডার বা পেস্ট। এটা জাপানে সহজলভ্য।
৩) সুসি ম্যাটের উপর নেরি বিছিয়ে তার উপর আগে তৈরী করা ভাত বিছিয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে নেরির মসৃণ অংশ থাকবে ম্যাটের উপর আর অমসৃণ অংশের উপর ভাত বিছিয়ে দিতে হবে।
ভাত বিছানোর পর দেখতে এরকম হবে...
ছবির মতো একপার্শ্বে কিছুটা অংশে ভাত লাগানো যাবে না...
৪) মাকি সুসি রোলঃ
এরপর মাকি সুসি রোল তৈরী করতে, ক্রাব স্টিক, ক্যাপসিকাম, অ্যাভোকেডো ও সুসি মাছ নিচের ছবির মতো করে লম্বা লম্বা কুচি করে কাটতে হবে...
ক্রাব স্টিক...
ক্যাপসিকাম কুচি...
অ্যাভোকেডো কুচি...
সুসি মাছের ফালি...
এরপর নোরি লাগানো ভাতের উপর এই কুচি গুলো বিছিয়ে দিতে হবে...
বিছানোর পর ছবির মতো করে রোল তৈরী করতে হবে...
রোল বানানোর সময় জোরে চাপ দিতে হবে...
যদি দুইপাশ দিয়ে কোন কুচি বের হয়ে যায়, তাহলে আঙুল দিয়ে চাপ দিয়ে আবার ঢুকিয়ে দিতে হবে...
এরপর রোলটি একহাতে নিয়ে অন্যহাতে পানি নিয়ে নোরির উপর ঘষে দিতে হবে। এতে করে নোরি নরম হয়ে যাবে। ফলে পরবর্তীতে রোলটি কাটার সময় নোরি ভেঙে যাবে না...
৫) ক্যালির্ফোনিয়া সুসি রোলঃ
ক্যালির্ফোনিয়া সুসি রোল তৈরীর কৌশলও মুকি সুসি রোল-এর মতোই।
তবে এক্ষেত্রে, সুসি ম্যাটের উপর ফুড রাপিং পেপার বিছিয়ে নিতে হবে...
তার উপর পূর্বে তৈরীকৃত নোরি ভাতের স্টিপটা উল্টা করে বিছাতে হবে। অর্থাৎ এবার ভাতের অংশটা থাকবে নিচের দিকে ও নোরি থাকবে উপরের দিকে। এর উপরে সুসি মাছ, অ্যাভোকেডো, ক্যাপসিকাম, ক্রাব স্টিক গুলো আগের মতো করেই বিছিয়ে দিতে হবে...
তারপর আগের মতো করে রোল করতে হবে...
তৈরী হয়ে গেলো সুসি রোল...
এবার একটা ফ্রাই প্যান-এ তিসি ভেজে নিতে হবে...
তিসি লালচে হয়ে আসা পর্যন্ত ভাজতে হবে...
ভাজা তিসি একটা প্লেটে নিতে হবে। এই প্লেটের উপর ক্যালির্ফোনিয়া রোলটা গড়িয়ে নিতে হবে...
এতে করে রোলের গায়ে তিসি লেগে যাবে...
ব্যাস তৈরী হয়ে গেলো সুসি রোল...
৬) সুসি রোল কাটাঃ
সুসি রোল কাটার জন্য কাটার বোর্ড ও ধারালো ছুরি লাগবে...
এরপর ধারালো ছুরির সাহায্যে ছবির মতো করে কাটতে হবে সুসি রোল গুলো...
ব্যাস তৈরী হয়ে গেলো সুসি...
এবার একটা বাটিতে সয়াসস ও ওয়াসাবি মিশিয়ে পরিবেশন করা হয় সুসি। আসলে সয়াসস ও ওয়াসাবির মিশ্রণটা সসের মতো করে ব্যবহার করা হয়।
এটা মূলতঃ সুসি তৈরীর একটা কৌশল। সুসি উপকরণে পরিবর্তন করে বিভিন্ন রকমের সুসি তৈরী করা যায়। আপনারাও চেস্টা করে দেখতে পারেন। তবে আমাদের দেশের মাছ দিয়ে সুসি করা যাবে না। কারণ সুসি তৈরীর মাছ একটু ভিন্ন রকমের।
সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র ভেজিটেবল দিয়ে বা চিংড়ি সেদ্ধ করে তা দিয়ে সুসি তৈরী করা যেতে পারে। আর ওয়াসাবির পরিবর্তে সরিষা বাটা ব্যাবহার করা যেতে পারে।
আজ এপর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন...
(তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট)
আগের পর্বঃ
প্রবাসের পথে... (১) ওসাকার অলিগলি...
প্রবাসের পথে... (২) জাপানের ঐতিহ্য...
প্রবাসের পথে... (৩) জাপানীজ কিমোনো...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।