অনেক দিন পর একটা মিয়াঁও পর্ব দিতে ইচ্ছা হল।
ভাগ্নে আমার উপযুক্ত ভাগ্নে। বিলাই-পাগল একেবারে ছোটকাল থেকেই। ওর একটা বিড়াল ছিল যার নাম রেখেছিল ডন। কিন্তু কিছুদিন পর জানা গেল সে একটা মেয়ে বিলাই।
মেয়ে বিলাইয়ের নাম ডন কেমন শোনা যায়, তাই নাম পাল্টে রাখা হল ডোনা। দারুণ শিকারী বিড়াল। ছোট্ট থাকতেই বাড়ির সব তেলাপোকা ধ্বংস করে খুব তাড়াতাড়ি সবার মন জয় করে নিয়েছিল।
ডোনার প্রিয় কাজ ছিল জানালার পাশে বসে শরীরের অর্ধেকটা জানালার গ্রিলের বাইরে রেখে রাস্তার মানুষজন পর্যবেক্ষণ করা। ঘুমের জন্য সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ছিল ছোট বোনের আলমারীর উপরে রাখা সুটকেস।
যদিও প্রতিদিন এজন্য তাকে লাঠির তাড়া খেতে হত, তবু কী যে আকর্ষণ ছিল তার ঐ জায়গাটার জন্য। একদিন ছোটবোন ঘুমাচ্ছে, হঠাৎ মনে হল তার পায়ে কি যেন ভেজা ভেজা লাগে, তাকিয়ে দেখে ডোনা মনের সুখে বিছানায় শুয়ে গা চাটছে, মাঝে মধ্যে ছোটবোনের পা দুটোও চেটে দিচ্ছে। তবে রে, গেলি......বেচারীকে ঘরছাড়া করেই ক্ষান্ত হল ছোটবোন। আহারে ডোনা, চুপচাপ শুয়ে থাকলে তো কেউ টেরও পেত না, বেশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়েই ধরাটা খেলি।
ভাগ্নের সাথে ছিল তার সবচেয়ে বেশি খাতির।
ভাগ্নে হাঁটতে থাকলে তার পিছন পিছন হাঁটতে থাকত ডোনা। ভাগ্নেও ডোনার জন্য পাগল ছিল। একদিন ডোনাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। ওর ঘুমের সব সম্ভাব্য জায়গায় খোঁজা হল, আম্মা খাবার দিয়ে ডেকে ডেকে হয়রান, কোন খবর নেই। হঠাৎ কেউ একজন খেয়াল করল, আম্মার আলমারীর ভিতর থেকে মিয়াঁও ডাক আসছে।
খুলে দেখা গেল আরামসে গা মোড়ামুড়ি করতে করতে মহারাণী বের হলেন। কোন ফাঁকে যে এখানে ঢুকে নিদ্রা যাচ্ছিল কে জানে।
একদিন ডোনার খুব শরীর খারাপ করল, সারাদিন কিছুই খেল না, বমি করতে করতে অবস্থা কাহিল। এরপর তিনদিন কিছুই মুখে নিল না, চুপচাপ শুয়ে কাটাল। তারপর হঠাৎ উধাও হয়ে গেল।
কোথাও আর পাওয়া যায় না, এমন কি আলমারীতেও না। পরদিন পাশের বাড়ির এক পিচ্চি (ভাগ্নের ছোট্টকালের বান্ধবী) জানাল যে ভাগ্নের বিলাইটা মরে গেছে, পড়ে আছে বাড়ির পাশের গলিতে। ভাগ্নে বিশ্বাসই করতে পারল না। আমি ভাগ্নেকে নিয়ে গেলাম দেখতে, আসলেই একটা বিড়াল মরে পড়ে আছে, আর সেটা সত্যিই ডোনা।
ভাগ্নের ভীষণ মন খারাপ।
ডোনার একটা ভাই(?) ছিল, নাম রাখা হয়েছিল কিম। মাঝে মধ্যে বাসায় এসে বোনকে দেখে যেত আর বোনের খাবারে ভাগ বসিয়ে যেত। ডোনা মারা যাবার পর তার জায়গাটা নেয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগল কিম। ভাগ্নেও ডোনাকে হারিয়ে কিমকে নিয়ে দুঃখ ভুলে থাকতে চাইত। উপরে (?) চিহ্ন দেয়ার কারণ হল এটাকে সবাই ছেলে বিলাই মনে করেছিল।
আমি দেখে বললাম, এটাতো মেয়ে বিলাই। কেউ কিছুতেই মানে না। সবার যুক্তি হল, কিম যদি মেয়েই হত তাহলে এতদিনে কয়েক দফা ছানা-পোনা দিয়ে দিত।
কয়েকদিন আগে ভাগ্নে জানাল, কিম একটা পাজী বিলাই। কেন? কারণ হল সে বাচ্চা দিয়েছে কিন্তু বাচ্চার কোনরকম যত্ন নেয় না, বাচ্চাগুলো মায়ের যত্ন না পেয়ে মারা গেছে।
হুমম, আমি বলেছিলাম কি না এইটা মেয়ে বিলাই। সেদিন ভাগ্নে আবার জানাল কিমের নাকি অর্ধেক জ্বর হয়েছে আর অর্ধেক ভালো আছে। এটা আবার কী রোগ রে বাবা। বলল, সে ঠিকমত চলাফেরা করছে, খেলাধূলা করছে, কিন্তু খাওয়া-দাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছে। বললাম, দেখ আবার বাচ্চা-কাচ্চা পেটে নিয়ে ঘুরছে কি না, অসম্ভব কিছু না।
কিছুদিন আগে আম্মা বাসার পাশে একটা সুন্দর বিড়ালের বাচ্চা পেয়ে নিয়ে এসেছিলেন। বিলাইটা চুড়ান্ত দখলবাজ, এসেই এমন আচরণ শুরু করল যেন এটা তারই বাসা। তার এই আচরণ মাফ করে দেয়া হল শুধুমাত্র তার তেলাপোকা শিকারে অতি আগ্রহ দেখে। নইলে যেভাবে বাড়ির সবার পা খামচা-খামচি করেছে তাতে তাকে বাড়িতে জায়গা দেয়ার কোন কারণ ছিল না। এই বিলাইটার নাম রাখা হল ক্যাটরিনা (বিশিষ্ট সুন্দরী বিধায়)।
বাসা দখলের এক পর্যায়ে ক্যাটরিনা ডাইনিং রুমের সবগুলো চেয়ার দখল করে নিল নিজের ঘুমের জন্য। যখনই কেউ কোন চেয়ারে বসতে যায়, সেখানে ক্যাটরিনা ঘুমন্ত অবস্থায় আবিষ্কৃত হয়। একবার তো আম্মা না দেখে চেয়ার টেনে সাথে সাথে বসে পড়ে সে কি বিপত্তি। প্যাঁও করে একটা চিল্লানি দিয়ে ক্যাটরিনা আম্মাকে এমন চমকে দিল যে আম্মাকে এই বয়সেও মিনি হাই জাম্প দিয়ে দিতে হল।
ক্যাটরিনার চেয়ার দখলের ছবি...
কিন্তু একদিন ক্যাটরিনাও ডোনার মত অসুস্থ হয়ে পড়ল।
আজকাল কি তেলাপোকাতেও ভেজাল ঢুকে গেছে নাকি? ক্যাটরিনা উধাও হয়েছে। জানি না তারও কি ডোনার মতই করুণ পরিণতি হল কি না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।