আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিচিত্র হাট-শামুকের হাট ও একটি বিপর্যয়ের হাতছানি

মহলদার
নানা হাটের কথা শুনলেও শামুকের হাটের কথা বোধহয় অনেকের কাছে নুতন। হ্যাঁ, শামুকের হাট, শামুক বেচা-কেনার হাট। এ হাটে বস্তায় বস্তায় বিক্রি হয় শামুক। বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকার খাল, বিল, হাওড়, বাওড়, ধানক্ষেত, পুকুর ও অন্যান্য জলাশয়ে দেখতে পাওয়া যায় শামুক। আগে শামুকের ব্যবহার হত গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে পালিত হাঁস-মুরগীর খাদ্য হিসাবে।

শামুকের খোলসের ভেতরের মাংসই প্রধানত হাঁস-মুরগীর খাবার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্ত বিগত বেশ কয়েক বছর আগে থেকে, মোটামুটি বলা যায় ১৯৯০ সালের কাছাকাছি সময় থেকে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে গলদা চিংড়ি চাষ শুরু হয় এবং তখন থেকেই মুলত শামুকের ব্যবহার শুরু হয় এই চিংড়ির খাদ্য হিসাবে। প্রথমদিকে খাল-বিল থেকে শামুক সংগ্রহ করে এর মাংস ব্যহার হত চিংড়ি ঘেরে খাদ্য হিসাবে। তখনো শামুক কেনা-বেচা শুরু হয়নি। পরে যখন এর চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তখনে থেকে, মুলতঃ ১৯৯৮-২০০০ সালের দিক থেকে শুরু হয় এর কেনা বেচা।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় চাষ হয় গলদা চিংড়ির। আর শামুকের হাট ও বসে এইসব অঞ্চল গুলোতে। প্রথমদিকে এই সব এলাকার আশে পাশের খাল বিল থেকেই সংগৃহীত শামুকই বাজারে বিক্রি হত। ধীরে ধীরে সেটা কমতে থাকে। বর্তমানে এইসব এলাকার খালে বিলে আর শামুক তেমন দেখা যায় না।

তাই এখন শামুক আসে দেশের অন্যান্য জেলা যেমন ফরিদপুর, কুমিল্লা, ঢাকা, মাগুরা প্রতৃতি অঞ্চল থেকে। ট্রাকে করে শামুক পৌঁছে যায় এইসব হাটে। আগে দামে কিছুটা সস্তা হলেও বর্তমানে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি ইউরিয়া সারের যে বস্তা) শামুক বিক্রি হয় ২৫০-৩০০টাকায়। প্রতি বস্তা শামুকে খোলস ছাড়ানোর পর মাংস হয় ২৫-৩০ কেজির মত। ঘের মালিককেরা খোলস সহ শামুকের বস্তা কিনে এলাকার মহিলা বা বাচ্চাদের দিয়ে খোলস থেকে মাংস ছাড়িয়ে নেয়।

প্রতি বস্তা শামুকের জন্য সেখানে খরচ হয় ৩০-৪০ টাকা। এছাড়া আছে পরিবহন খরচ। সব মিলিয়ে এক বস্তা শামুকের জন্য একজন ঘের মালিকের খরচ হয় ৩৫০-৪০০ টাকার মত। (বিক্রির জন্য এভাবে বস্তাভরে সাজিয়ে রাখা হয় শামুক। ) শামুক থেকে এমনভাবে মাংস বের করা হয় যেন শামুকের খোলসগুলো আস্ত থাকে।

শামুক থেকে এর মাংস বের করার পর এর খোলস গুলো জমা করে রাখা হয় রাস্তার আশে পাশে। আস্তে আস্তে খোলসগুলো জমা হয়ে ছোটখাট টিলার রূপ নেয় কখনো কখনো। পরে এগুলো বিক্রি করা হয়। হাঁস-মুরগী ও মৎস্য খাদ্যে ব্যবহৃত হয় এই খোলসের গুঁড়া। (শামুকের খোলসের ঢিবি।

ছবিটি তুলেছিলাম ২০০২ সালে আমার মাস্টার্স এর গবেষণার সময়। ) বাংলাদেশ থেকে একসময় ব্যাঙের পা বিদেশে রপ্তানী হত। এর পরিনাম আমাদের সবার জানা আছে। কয়েক বছরের মধ্যেই দেশে পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায় ভীষণভাবে। ব্যাঙ মুলতঃ খাদ্য হিসাবে পোকা-মাকড় খায় এজন্য রপ্তানী শুরু হলে দেশে ব্যাঙের পরিমান কমে যায় অনেক।

ফলে বেড়ে যায় এইসব পোকা-মাকড়ের উপদ্রব। পরে অবশ্য ব্যাঙ রপ্তানী নিষিদ্ধ করা হয়। বর্তমানে যে হারে শামুক নিধন চলছে তাতে এর পরিণতি যে কি হবে সেটা সহজেই অনুমেয়। শামুক কে বলা হয় প্রকৃতির ফিল্টার। এরা পরিবেশ থেকে নানা দূষিত পদার্থ, রোগ-জীবানু খেয়ে পরিবেশ কে রাখে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।

কিন্তু প্রকৃতি থেকে যদি এদের বিলুপ্তি ঘটে তাহলে নষ্ট হবে ইকোসিস্টেম, দেখা দেবে কোন বিপর্যয় আর এর মাশুল দিতে হবে আমাদেরই। (পানিতে ভাসমান অবস্থায় শামুক) (সব ছবি গুলো নিজের তোলা। শামুকের হাটের ছবি গুলো তোলা হয়েছে খুলনার আড়ংঘাটা বাজার থেকে। )
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।