*~*জীবনে যত কম প্রত্যাশা থাকবে ... .. . তত বেশী ভালো থাকা যাবে*~*
সাধারণত কম-বেশী সবাইকেই দেখি যে বাবার মা-কে দাদী,দাদীমা,ঠাকুরমা বলে ডাকতে । কিন্তু আমরা ৩ ভাই-বোন সেই ছোটবেলা থেকেই ঠাকুরমাকে মা (মায়ের আগে নির্দিষ্ট বিশেষণ লাগিয়ে)বলে এসেছি। আর আমরা বাড়ীর সবার বড় বলেই আমাদের পরের সব কাজিনরা ও একই ভাবে ফলো করে ডেকেছে। ছোটবেলাতে এমনো হয়েছে অনেকে আমাদের বাড়ীতে আসার পর যদি দেখত নিজের মাকে ও মা আবার ঠাকুরমা কে ও মা ডাকি তারা বলতো এটা আবার কেমন? তারপর ও কেউ আমাদের ডাক বদলাতে পারেনি। আমাদের বাড়ীতে দাদুরা ৩ ভাই থাকতো,সেই হিসেবে ঠাকুরমাও ৩জন ছিলো।
কিন্তু ৩ জনকে যদি শুধুই মা বলে ডাকি তাহলে তো বুঝতে সমস্যা হয় কখন ,কাকে ডাকছি। সেইজন্য আমাদের আপন ঠাকুরমাকে ডাকতাম ঢাকার-মা,কারণ উনি ঢাকাতেই ছেলেদের বাসায় বেশী থাকতেন। মেঝ ঠাকুরমাকে ডাকতাম সিলেটের-মা,উনি বাড়ীতে থাকলেও উনার স্বামী(মেঝ দাদু) চাকরী করতেন সিলেটে। আর সবার ছোট ঠাকুরমাকে ডাকতাম কয়েকটা নামে...ছোট-মা,সিসি-মা,সুন্দরী -মা(উনি সবসময়ই দেখতে অনেক সুন্দরী ছিলেন)
ঢাকার-মার কথা তেমন মনে নেই কারণ আমি স্কুলে থাকতেই তিনি মারা গিয়েছেন। স্মৃতি ঘেটে যেটুকু মনে পড়ে উনার মাথায় অনেক বড়,বড় চুল ছিলো আর গায়ের রং তেমন উজ্জ্বল না হলে ও উনার চেহারার মধ্যে অন্যরকম একটা লাবণ্যতা ছিলো।
আর হ্যা ঢাকার-মা বাড়ীর সবার বড় বউ হলেও কখনো বড় ভাব দেখাতো না,কেউ কিছু বললে দু'টা কথা শুনানোর বদলে নিজেই কান্নাকাটি করতো। সিলেটের-মা আমার জীবনে দেখা অন্যতম সেরা আলাভোলা ধরণের মানুষ,যে-যা বলবে সরল মনে তা-ই বিশ্বাস করবে....কখনো যাচাই ও করবেনা কেউ তার সাথে মিথ্যা বলছে কিনা। আমরা নাতী-নাতনীরা অনেক মজা করতাম আগে উনার এই স্বভাবটা নিয়ে। এইবারের ঈদে বাড়ী গিয়ে দেখলাম সিলেটের-মার শরীরটা তেমন ভালো না আর কানে একদমই শুনে না। যে মানুষটার মুখে সবসময় কথার ফুলঝুড়ি ছুটতো সে কিনা একদমই শান্ত হয়ে গেছে।
সিসি-মা বাড়ীর সব নাতী-নাতনীদের সবচেয়ে বেশী আদর করে আর সবাইকে নানা নামে ডাকে। আমি বাংলা শ্রাবণ মাসে হয়েছি বলে উনি আমার জন্মের পর থেকে শ্রাবণ নামে ডাকে। বাড়ীর আর সবাই শ্রাবণী ডাকলেও উনি শ্রাবণ-ই ডাকে। অনেকদিন পর দেখা হওয়াতে সিসি-মা কিযে খুশী বলে বুঝানো যাবেনা....কখনো অভিযোগ করছে কেন বাসাই যাইনা,ফোন করিনা...আবার কখনো চুল ধরে দেখছে,হাত ছুঁয়ে দেখছে,শাড়ী ধরে দেখছে...আবার কখনো ছোটবেলার কথা মনে করে কান্না করছে। সিসি-মার সাথে কথা বলার সময় হাত ধরে বসে ভেবেছি উনার স্পর্শে যেমন নিজে বুঝেছি উনি কতটা ভালোবাসেন সেভাবে যদি উনিও বুঝতে পারতেন আমাকে........সারাটাদিন অমিশুক,অসামাজিক আমি শুধু হাসছি আর দেখছি কত ভালোবাসেন উনি...........!!!
যোগাযোগ কম হলেও উনাদের ভালোবাসা এখনো আগের মতই অটুট আছে.....হয়তো বুঝাতে পারিনা মুখে বলে কিন্তু জানি আমার এই তিন মাকে অনেক ভালোবাসি.......২জনের অনেক বয়স হয়ে গেছে.......কামনা করি উনারা যেন যতদিন বেঁচে থাকেন ভালো আর সুস্হভাবে থাকেন......!!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।