পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি
কেনাকাটা
বহু বছর হয়ে গেছে , ঈদে নতুন জামা কাপড় কেনা বাদ দিয়েছি। ভালো লাগে না । সারা বছরে যাদের দরকার হলেই কাপড় কেনার ক্রয় ক্ষমতা হয়ে গেছে তাদের পক্ষে ঈদ এর উপলক্ষ তৈরী করে নতুন কাপড় কিনে ঘর ভর্তি করাটা যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি আমাদের কারো কাছে , বড় হয়ে ওঠার পর । এখন ঈদে বাচ্চা আর কাজের লোক, দারোয়ান, ড্রাইভার, তাদের বউ বাচ্চাদের জন্য যা একটু কাপড় কেনা হয় । গড্ডালিকা প্রবাহে শরীর ভাসিয়ে শার্ট (!!!) কামিজ, আলখেল্লা কামিজ (ঐ বার গোড়ালি পর্যন্ত লম্বা কামিজের ফ্যাশন উঠেছিলো) কিংবা মশারি (মাসাক্কালি) কেনার জন্য মাততে ইচ্ছে করে না, করেনি।
বরং , হাতে টাকা যদি কিছু থাকে তো সেইটা জমাতে চেষ্টা করছি । জানি না , স্বপ্নটা কবে আমি সেইভাবে পূরণ করতে পারবো । কিন্তু চেষ্টাটুকু চালিয়ে যেতে চাই । একটু একটু করে পয়সা জমিয়ে স্কলারশীপ চালু করার চেষ্টা করছি । আমাদের মতন ভুক্তভোগী কিন্তু কৃতজ্ঞ ছাত্রছাত্রীদের দিয়েই হয়ত একদিন এই রকম হাজারো স্কলারশীপ চালু করতে পারবো ।
নাহ, হাতে টাকা ধরিয়ে দিয়ে , নাও বাবা পড়ো , আমি খুব মহান - ধরনের বৃত্তিতে আমার কোনই আগ্রহ নেই। আমি স্বপ্ন দেখি মানুষকে দান এর করুণা , অপমান থেকে বাঁচিয়ে তাঁকে সম্মানজনক কর্মঠ একটা সুযোগ দিতে । কর্মমুখী বৃত্তি চাই । ছাত্র বা ছাত্রীটি কাজ করবে । খন্ডকালীন কাজ।
তার বিনিময়ে বেতন নেবে । এই বেতনের টাকাটা আসবে স্কলারশীপ থেকে । এতে যে কাজ দেবে, যে করবে আর যে বেতন দেবে - সবারই সুবিধা। মেরদন্ডী মানুষের কাজ এর প্রয়োজন হয় ; প্রয়োজন হয় মেধা , পরিশ্রম কাজে লাগিয়ে একটা সম্মানজনক উপার্জন । বাকিটা বাহারী নামের ভিক্ষাই লাগে আমার কাছে ।
অই ভিক্ষা শিখানো বৃত্তির চেয়ে বরং স্টুডেন্ট লোন অনেক ভালো জিনিস । আর সব ধরনের বিষয় খন্ডকালিন কাজের সময় ও দেয় না । সেক্ষেত্রে , চাকুরী বা স্বাধীন পেশা শুরুর পর , ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে টাকাটা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা থাকার কথা ভাবছি। পুরো সাহায্য প্রক্রিয়াটার মধ্যে কারো মাথা যেন মুহুর্তের জন্যও নত না হয় । আর ফেরতের ভিতর দিয়ে আমরা জানি যে সাহায্য আমি পেয়েছিলাম সেই সাহায্য আরেকজন কোন ছাত্র বা ছাত্রী পাচ্ছে ।
এই স্বপ্নটা বড্ড আপন, ব্যয় করার মত অর্থ যুক্ত হোক সেই খাতে । দোয়া করবেন সবাই, পারলে নিজেরাও উদ্যোগী হবেন আশা করি । দেশ থেকে তো অনেক নিয়েছি , নিচ্ছি। দেশকে কিছু দিতে পেরেছি, মরার আগে এইটা দেখে না গেলে শান্তি পাব না ।
অনুষ্ঠান
বেশির ভাগ সমবয়সীরাই এখন আর তেমন বেরুতে চায় না ঈদে।
পরিবারের সাথে দেখা করাটা জরুরী। কিন্তু এর বেশি নয়। আসলে , জীবন এখন খুব ব্যস্ত। বাবা মার সাথে, আত্মীয় বন্ধুদের সাথে একই শহরে থেকেও দেখা হয় না , তাই এইটুক গাত্র উত্তোলন। বাকি? টেলিভিশনে সেঁটে থাকে দু'চোখ।
একটু আরাম করে ঘরে বসেই মানুষ বিনোদন পেতে চায়। আমিও চাই। কিন্তু একই ধরনের অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে কান, চোখ, মস্তিষ্ক ঝালাপালা হয়ে গেলো। যে হারে নাটক বেড়েছে সে হারে বিতর্ক বাড়েনি। বিজ্ঞানভিত্তিক অনুষ্ঠান বাড়েনি।
মানুষকে চিন্তা করতে, ক্রিটিকাল থিংকিং যাকে বলে , শেখায় - এমন অনুষ্ঠান বাড়েনি। প্রশ্ন করতে, গবেষনা করতে, আবিষ্কার করতে , সৎ ও স্বাধীন ব্যবসা কি ভাবে করা যায়, উপার্জন এর পথ কি ভাবে নিজেই বের করা যায় এসব শেখানোর অনুষ্ঠান বাড়েনি। সে হারে দেশের আনাচে কানাচে কে কি করছে, ভাবছে -- সেই সব তথ্যের আদান প্রদান বাড়েনি । খুব ইচ্ছে করে বিতর্ক দেখতে । যেই সব স্পর্শ কাতর বিষয় নিয়ে আমরা রাজপথ রক্তাক্ত হতে দেখি, সেই সব মত ভেদের বিতর্ক।
খুব ইচ্ছে করে , রাজনীতিবিদদের ধরে এনে প্রশ্ন করতে - আপনাদের বাজার নীতি কি আসলে? কতটা জিনিস কি পরিমানে প্রয়োজন আমাদের? সেই প্রয়োজন মেটানোর জন্য দেশের কোন জায়গায় কি ব্যবস্থা নিয়েছেন?
প্রতিটা পরিবার থেকে একজনের চাকরীর কথা বলা হচ্ছে । খুব ভালো কথা । দেশে এত চাকুরী তৈরী হবে কি করে? আমাদের কয়জন কৃষক , ডাক্তার, প্রকৌশলী, ম্যানেজার, ব্যবসায়ী ইত্যাদি লাগবে এই দেশটাকে চালাতে? এখন কয়জন আছে ? আর কয়জন লাগবে? এদের বেতন আসবে কোথা থেকে?
আমাদের স্কুল কলেজের কারিকুলাম প্রতি বছর আপডেট হয় না কেন? আমরা বান্দরের অংক বাদ দিয়ে সাবমেরিন কেবলের অংক করছি না কেন? কেন ভূমি কম্পের , ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের বিজ্ঞান পড়ছি না ?
এত এত টক শো হয়। কেউ এই সব নিয়ে কথা বলে না । আস্তিক নাস্তিক বিতর্ক নিয়ে কত গালিগালাজ হয় ব্লগে, মিছিল হয় মসজিদের সামনে , তাসলিমারা বিতাড়িত হন।
কিন্তু টেলিভিশনে আজ পর্যন্ত একটা বিতর্ক দেখেছি দুই পক্ষের পন্ডিত ব্যক্তিত্বদের মাঝে?
মতের পার্থক্য গুলো নিয়ে সুস্থ বিতর্ক কবে দেখবো?
সময় অসময়ের মত নাটক আর কবে দেখবো?
অশনি সংকেতের মত সিনেমা?
সারা দেশ থেকে বিভিন্ন মানুষের প্রশ্নের জবাব একবার শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন। এইটা এইবার দেবেন না?
কেন , এই জবাব দিহিতার উদাহরণটিকে আইনে পরিণত করার আন্দোলন হয় না ? প্রতি বছর অর্ধেক ছাত্র ছাত্রী এস এস সি, এইচ এস সি তে ফেল করার পরে শিক্ষাবোর্ড এর মাথা থেকে পা পর্যন্ত কে জবাবদিহি করতে হয় না কেন? আমি এই সব নিয়ে অনুষ্ঠান, টক শো, নাটক দেখতে চাই।
লিখতে লিখতে মহাভারত হয়ে যাচ্ছে , আজকে এইখানেই থামি। আমি অন্যরকম কেনাকাটা করতে চাই । অনুষ্ঠান গুলোতে আমাদের বুকের মাঝে ঘা দেওয়া লক্ষ লক্ষ প্রশ্নের প্রতিফলন আর তার উত্তর দেখতে চাই।
বস্তাপঁচা সুড়সুড়ি ম্যাগাজিন আর "প্রেম করাটাই বাঙ্গালী জীবনের সবচে বড় সমস্যা" ধরনের নাটক দেখতে চাই না ।
ধনীকে ভিক্ষা দেবার আর দরিদ্রকে ভিক্ষা নেওয়ার ঈদ চাই না । বিলাসের নষ্ট জলে ভেসে যাওয়া আর ছিন্নমূলের অশ্রু লুকানো ঈদ চাই না । একই দেশে লাখ টাকার শাড়ি , মোবাইল, কামিজ , পোলাও কোর্মা আর কারো আর্ত , শূন্য হাতের ঈদ চাই না । ক্ষুধার্ত, নগ্ন , রোগাক্রান্ত , পথ শিশুদের ১০ টাকা ভিক্ষা দেওয়া নিশান জিপের ঈদ চাই না ।
খাওয়াতে না পেরে স্ত্রী , কন্যাদের হত্যা করতে হয় যেই দেশে সেই পিতার দেশে লাখ লাখ , কোটি টাকা খরচ করে মাংস, পোলাও , পিঁয়াজু , বেগুনির ঈদ চাই না । আমার ভালো লাগে না ।
আমি একটু অন্যরকম ঈদ চাই ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।