পায়ের তলায় শর্ষে! সুযোগ পেলেই দেশ দেখতে বেড়িয়ে পড়ি! সেই ইউনির্ভাসিটি জীবনে এরশাদ সরকার জোর করে একবার হল ছাড়া করেছিল... সেই থেকে আমার শুরু। এ এক আজব নেশা!
এই নেশার টানেই গত আগষ্ট মাসে গেছি টাঙ্গোয়ার হাওড়! এবার এই ঈদ পরবর্তী ছুটিতে ঘুরে এলাম বান্দরবান। এর আগেও চারবার গেছি বান্দরবান- শৈলপ্রপাত, চিম্বুক আগেও দেখা হয়েছে, কিন্তু এবার যুক্ত হলো নীলগীরি আর বগা লেক।
চিম্বুক
নাইট কোচে বান্দরবান। বান্দরবান থেকে চাঁদের গাড়ীতে চিম্বুক।
সমূদ্র তল থেকে ৩০৫০ ফুট ঊঁচু চিম্বুক পাহাড়! বান্দরবান শহর থেকে ২৬ কিঃমিঃ পাহাড়ী পথ। খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠার সময়েই কানের পর্দায় বায়ুচাপের তারতম্য অনুভব করা যায়। আর্মি-দের টিনশেড রেস্ট হাইজে রাতে থাকার সুবিধে আছে, তবে আগেই তা নিশ্চিত করে যেতে হবে। চিম্বুকের সকালটা খুব সুন্দর! নীচে সাদা মেঘের জমাট মেলা, তার উপরে সকালের সূর্যকিরণ! আপনি এই দৃশ্য দেখবেন মেঘের লেভেলের-ও উপর থেকে! আপনি মুগ্ধ হয়ে দেখবেন সেই সৌন্দর্য!
সকালের সাদা মেঘ- চিম্বুক চুঁড়া থেকে
চিম্বুক রেস্ট হাউজের বারান্দা থেকে তোলা মেঘ-পাহাড়
সাদা মেঘের ভেলা
নীলগীরি
সমূদ্র সমতল থেতে ৩৪৬০ ফুট উপরে মেঘের রাজ্যে নীলগীরি-এর অবস্থান। বান্দরবান শহর থেকে ৪২ কিঃমিঃ দূরে নীলগীরি।
চিম্বুক ছাড়িয়ে থানচী যাবার পথে পড়বে এই নীলগীরি। সকালটা বাদে সারাদিন-ই নীলগীরি থাকে মেঘের ভিতর। এ এক আশ্চর্য অনুভূতি। আপনাকে ঘীরে ঘন মেঘ! মেঘের ভিতর আপনি! বেশ মজা না?! দেখবেন- মেঘের অনেক রং! নীলগীরি-এর বিকাল আর সন্ধেটা খুব উপভোগ্য!
মেঘের রাজ্যে আমরা ক'জন
পাহাড় চুঁড়া যখন মেঘে ঢাকা
মেঘের অনেক রঙ- নীলগীরি-তে সন্ধ্যা
এখানেও একমাত্র থাকার ব্যবস্থা আর্মি-দের চারটি কটেজ। প্রতিটি কটেজে আটজনের থাকার ব্যবস্থা আছে, ভাড়া ৫০০০/- টাকা।
তাবুতেও থাকতে পারবেন, ভাড়া ১৫০০/- টাকা। তবে অবশ্যই আপনাকে আগে থেকেই বুকিং দিয়ে যেতে হবে। আর্মি রেফারেন্স থাকলে বুকিং পেতে সুবিধে হবে।
বগা লেক
বান্দরবান শহর থেকে ৩৪ কিঃমিঃ দূরে কঙ্কনছড়া ঘাট। চিম্বুক থেকে ৮ কিঃমিঃ আগেই ওয়াই জাংশন থেকে বাম দিকে টার্ন নিতে হবে।
কঙ্কনছড়া ঘাট হতে ইঞ্জিন বোটে সাঙ্গু নদী দিয়ে দেড় ঘন্টার পথ (স্রোতের বিপরীতে) রুমা বাজার। আপনি চাইলে অতিরিক্ত আধা ঘন্টা (যাওয়া-আসা অতিরিক্ত এক ঘন্টা) নৌ ভ্রমণ করে অনেক ঊঁচু থেকে পড়া রিঝুক ঝর্ণাটাও এই ফাঁকে দেখে আসতে পারেন। রুমা থেকে ১৬ কিঃমিঃ দূরে পাহাড়ের উপরে আশ্চর্য এক জলাধার- বাগ লেক! রুমা বাজার থেকে বগা লেক পর্যন্ত দু'ভাবে যাওয়া যায়। ঝর্ণার পথ অনুসরণ করে হেঁটে পাড়ী দিতে পারেন এই পথ, যাকে বলে ঝিরি পথ। অথবা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় ১১ কিঃমিঃ চাঁদের গাড়ীতে গিয়ে তারপর আরও ৭ কিঃমিঃ পাহাড়ী পথে হেঁটে যেতে পারেন বগা লেক (এই পথের দূরত্ব ১৮ কিঃমিঃ)।
আপনি যেই পথেই যান না কেন... শারীরিক ফিটনেস খুবই জরুরী এখানে। বগা লেকে আসা আদৌ উচিত ছিল, কি ছিলনা- মাঝপথে গিয়ে এমন চিন্তা করার কোন সুযোগ নেই। রুমা বাজার থেকে গাইড পাবেন। আর্মিদের ক্যাম্পে গাইডের নামসহ আপনাদের নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হবে। রেজিস্টার্ড গাইড ছাড়া সামনে এগুনো নিষিদ্ধ।
গাইড-কে প্রতিদিনের জন্য দিতে হবে ৩০০/- টাকা!
ভূ-তাত্ত্বিকগণের মতে প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে মৃত আগ্নেয়গিরি-এর জ্বালামূখে সৃষ্টি হয়েছে এই বগা লেক। বগা লেকের উচ্চতা ১৭২০ ফিট! এই স্থানটি মূলতঃ কেউক্রাডাং পাহাড়ে ওঠার বেজক্যাম্প। কেউক্রাডাং জয়ের অভিযাত্রীরা এখানেই অবস্থান করে থাকেন। স্থানীয় মারমা-দের পরিচালনায় কাঠ-বাঁশের তৈরী রেস্ট হাউজ পেয়ে যাবেন সহজেই। ভাত (অথবা খিচুরী), চাল কুমড়ার বা শিম এর তরকারী আর ডিম- এই হচ্ছে মোটামুটি প্রতি বেলার ম্যেনু! ধান, সবজী সবকিছুই জুম চাষ থেকে পাওয়া!
সাঙ্গু নদী
পাহাড় চুঁড়ায় নয়নাভিরাম বগালেক
বগা লেক থেকে ৪০ মিনিটের হাঁটা পথ পেড়িয়ে সুন্দর একটা ঝর্ণা (চিংড়ি ঝর্ণা) দেখে আসতে পারেন।
আর কেউক্রাডাং চুড়ায় উঠতে হলে বগা লেক হতে আরও ৪-৫ ঘন্টার পাহাড়ী হাঁটা পথ! সে পথও মাড়িয়ে আসতে পারেন। শরীর পারমিট করলে ও মনের জোড় থাকলে বগা লেক থেকে পুরো এক দিনের হাঁটা পথ মাড়িয়ে দেখে আসতে পারেন কাইখ্যাং ঝর্ণা ও পুকুর!
টিপসঃ
১। সারাদিনের জন্য চাঁদের গাড়ীর ভাড়া ২৫০০/- টাকা। তবে পর্যটন মৌসুমে তা ৪০০০/- থেকে ৫০০০/- টাকা পর্যন্ত হতে পারে। রিজার্ভ গাড়ী ছাড়া লোকাল চাঁদের গাড়ীতে ভ্রমণের চিন্তা না করাই ভাল।
২। বগা লেক যাবার পরিকল্পনা করার আগে রাস্তার অবস্থা এবং নিজের ও সহযাত্রীদের শারীরিক সখ্যমতা সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকা প্রয়োজন। যাত্রার আগে ম্যালেরিয়া-এর প্রিভেনটিভ ওষুধ খেয়ে নেয়া জরুরী। ভাল গ্রীপের কেডস এবং মোটা মোজা পায়ে থাকতে হবে। পাহাড়ী পথে জোক-এর উপদ্রব রয়েছে।
অন্ততঃ দুই জোড়া মোজা সাথে নেয়া ভাল। সহযাত্রী সকলের নিতান্তই প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র একটি ব্যাগে ভরে বাকী মালপত্র রুমা বাজারে কোথাও রেখে যাওয়া শ্রেয়ঃ।
৩। চিম্বুক, নীলগীরি এবং বগা লেকে রেষ্ট হাউজ রিজার্ভেশন-এর জন্য এই নম্বরগুলিতে কন্টাক্ট করতে পারেন-
ক) চিম্বুকঃ ওয়ারেন্ট অফিসার মিঃ আজিজ/সামাদ - ০১৫৫৬৭৪৪০৩১
খ) নীলগীরিঃ মেজর ফারুক-০১৭১৬৫৯৮২৬৬, ক্যাপ্টেন নাহিদ-০১৮১৯১৮৫০১৫.
গ) বগা লেকঃ লারাম-০১৫৫২৩৭৬৫৫১ (সহসা এই নম্বরটা নেটওয়ার্কে পাওয়া যায়না)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।