পিছনের পায়ের ছাপের রেখাটা র্দীঘ আর অস্পষ্ট হয়ে আসছে... ক্রমশঃ...
"নিনগো" জাপানীজ শব্দ, যার অর্থ মানুষ আকৃতির পুতুল। এইসব পুতুল সাধারণতঃ ছোট শিশু, যোদ্ধা, হিরো, গল্পকথার চরিত্র নিয়ে তৈরী করা হয়। হেইয়ান পিরিয়ড থেকে জাপানে পুতুল উৎসব শুরু হয়। তখন ধারণা করা হতো পুতুলের মধ্যে খারাপ আত্মা ভর করে। সে সময় জাপানীজরা সেই সব পুতুল নৌকায় করে নদীতে ভাসিয়ে দিতো, যেন ভেসে ভেসে তা সমুদ্রে গিয়ে পরে, আর সঙ্গে করে সকল খারাপ আত্মাকে নিয়ে যায়।
পুতুল নিয়ে জাপানীজদের একটা বিশেষ উৎসবও রয়েছে মার্চের ৩ তারিখ, নাম হিনামাতসুরি। এই দিনটাকে মেয়ে দিবসও বলা হয়। এই দিনে লাল রঙের ষ্টেজের উপর সম্রাট সম্রাগ্গী সহ নানা চরিত্রের পুতুল সাজানো হয়। আসলে এই সজ্জায় একসেট পুতুল থাকে। এই সেটটি কখনো মাত্র দুটি পুতুল (সম্রাট আর সম্রাগ্গী) দিয়ে আবার কখনো কখনো তারও বেশি পুতুলের সেট দিয়ে সাজানো হয়।
উপরের ছবিটিতে দুটি পুতুল দিয়ে সাজানো একটি হিনা ষ্টেজ দেখা যাচ্ছে। আর নিচের ছবিতে বেশি পুতুল দিয়ে সাজানো একটি হিনাষ্টেজ-
এই ষ্টেজে যে পুতুলগুলো থাকে সেগুলো-
ষ্টেজের একদম উপরে থাকে সম্রাট আর সম্রাগ্গীর পুতুল-
এছাড়াও থাকে অন্যান্য আরো সব পুতুল, যেমন-
বিভিন্ন মিউজিশিয়ান পুতুল-
(বাদ্যযন্ত্রঃ সাকুহাচি)
(বাদ্যযন্ত্রঃ ড্রাম)
(বাদ্যযন্ত্রঃ কোতসুজুমি)
বিভিন্ন গার্ড জাতীয় পুতুল-
যুবক গার্ড-
বৃদ্ধ গার্ড-
এই ষ্টেজ আরো বিভিন্ন ধরণের পুতুল দিয়ে সাজানো হয়।
আবার মে মাসের ৫ তারিখ পালন করা হয় ছেলে দিবস। এখন অবশ্য এই দিনটাকে শিশু দিবসও বলা হয়। এই দিনে যে সব পুতুল সাজানো হয় তার কিছু হচ্ছে-
এখন আমরা আরো কিছু জাপানীজ পুতুল সম্পর্কে জানবো।
গোসোনিনগো পুতুল ১৬০০ শতকের পূর্বে শিশুর জন্মকে নিরাপদ করতে ও শিশুর সুস্বাস্থ্য কামনা করতে ঘরে ব্যবহার করা হতো। পরবর্তীতে তা আন্চলিক রাজাদের উপহার সামগ্রী হিসাবে ব্যবহার শুরু হয়।
গোসোনিনগো পুতুল-
ডারুমা পুতুল হচ্ছে গোল হাত-পা ছাড়া চোখবিহীন পুতুল। সাধারণতঃ লাল, হলুদ, সবুজ এবং সাদা রংয়ের হয় এই পুতুলগুলো। ডারুমা পুতুলকে ইচ্ছাপূরণ বা সৌভাগ্যের প্রতীক হিসাবে ধরা হয়।
কেনার সময় এই পুতুলগুলো চোখবিহীন থাকে। যখন কোন ইচ্ছা করা হয় (মানত করা) তখন এই পুতুলের একটি চোখ পূরণ করে দেয়া হয়। আর যখন সেই ইচ্ছাটা পূরণ হয়, তখন অপর চোখটিও পূরণ করে দেয়া হয়। এই পুতুলের ব্যবহার সবচেয়ে বেশী দেখা যায় নতুন বছরের শুরুতে। আর বছরের শেষে পুরাতন পুতুলগুলো টেম্পলে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
একচোখা ডারুমা পুতুল-
কোকেশি পুতুল জাপানের প্রায় ১৫০ বছরের ঐতিহ্য। কাঠের তৈরী সিলিন্ডার আকৃতির এই পুতুল শুরুতে বাচ্চাদের খেলনা হিসাবে ব্যবহার করা হলেও ধীরে ধীরে এটি পর্যটকদের কাছে আর্কষণীয় সুভ্যেনির হিসাবে স্বীকৃতি লাখ করেছে। কোকেশি পুতুল-
টেরু-টেরু-বোজু হচ্ছে সাদা কাপড় দিয়ে বানানো পুতুল। এই পুতুল জাপানীজরা ভালো আবহাওয়ার আশায় ঘরের জানালায় ঝুলিয়ে রাখে। সাধারণতঃ বৃষ্টি বন্ধের জন্য বা রোদের জন্য এই পুতুল ঝুলানো হয়।
টেরু-টেরু-বোজু পুতুল -
বুনরাকু হচ্ছে জাপানীজ পাপেট শোর পুতুল। একটি বুনরাকু পুতুলের মুখ -
সুচিনিনগো হচ্ছে কাদা দিয়ে বানানো কুকুরের মুখাকৃতির পুতুল। কিয়োটো প্রিফকচারের ফুসিমি নামক স্থান এই পুতুলের জন্য বিখ্যাত। সুচিনিনগো পুতুল-
কেসি পুতুল হচ্ছে ছোট্ট ছোট্ট পুতুলের সেট। এই সেট বিভিন্ন বিষয়ের উপর তৈরী করা হয়।
একটি কেসি পুতুলের সেট-
ইসোনিনগো পুতুল অন্যান্য সকল পুতুলের চেয়ে আলাদা। এই পুতুলের শরীরের ড্রেস আলাদা ভাবে পরানো হয়। সত্যিকার অর্থে এই পুতুল হচ্ছে একটি গ্রুপ। আর এই গ্রুপের সবচেয়ে জনপ্রিয় পুতুল হচ্ছে গিসা পুতুল। জাপানে সাধারণতঃ শিল্পী শ্রেণীর লোকদের গিসা নামে ডাকা হয়।
কয়েকটি গিসা পুতুল-
এছাড়াও কিছু বিখ্যাত পুতুল আছে-
মমোতারো গোফুন...
কুরোডাবুশি...
সবশেষে... আমার একটা গিসা পুতুল আছে, তার ছবি আপনাদের জন্য...
সবাই ভালো থাকবেন।
(তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট)
======================
আগের পর্বসমূহঃ
প্রবাসের পথে... (১) ওসাকার অলিগলি...
প্রবাসের পথে... (২) জাপানের ঐতিহ্য...
প্রবাসের পথে... (৩) জাপানীজ কিমোনো...
প্রবাসের পথে... (৪) জাপানীজ সুসি...
প্রবাসের পথে... (৫) ফসলের ছবি...
প্রবাসের পথে... (৬) হকুসাই চিত্রকর্ম...
প্রবাসের পথে... (৭) ইকেবানা...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।