বাংলাদেশ ব্লগারস এসোসিয়েশন সদস্য নং: ১০ । facebook.com/milton3d
সে বেলার ঈদের আনন্দটা মূলতঃ চাঁদ উঠার পরে শুরু হতো আর সেই সাথে টিভিতে "রমজানের ঐ রোজার শেষে" এই গানটি শোনার পর থেকে। তখন তো আর এত চ্যানেল ছিল না। শুধু বিটিভি। অনেকগুলো শিল্পী এক কাঁতারে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক দোলাদুলি করে এই গানটি গাইতো।
ওটাই বাজানো হতো কিছুক্ষণ পর পর। এটাতো গেলো আনন্দের কথা। কিন্তু অনেক অপেক্ষা করেও যদি রাতে টিভির খবরে বলতো "আজ বাংলাদেশের আকাশে কোথাও ঈদের চাঁদ দেখা যায়নি। " মুখটা যে কি ভার হতো সেটা আর বলা যাবে না। আম্মা আমার সেই বেজার মুখ দেখো হাসতো আর আমাকে ক্ষেপাতো।
আমার ভিতরে জ্বলে যেত।
ঈদের দিন একবারে ফজরের আজানের সময় ঘুম ভাঙ্গতো। লাফ মেরে উঠতাম তাড়াতাড়ি গোসল করার জন্য। একটা তাড়াহুড়া ভাব ছিল। জায়নামাজ হাতে করে আব্বার সাথে ঈদগাহে যেতাম।
এক রাস্তা দিয়ে গিয়ে আব্বার সাথে ঈদগাহ থেকে অন্যরাস্তা দিয়ে বাসায় ফিরে আসতাম। এসে দেখতাম আম্মা গোসল করে আমাদের জন্য রেডী হয়ে আছে। যাওয়ার সাথে সাথেই আব্বা আম্মাকে সালাম করতাম। আব্বা হয়ত হাতে ১০ টাকার একটা নোট তুলে দিতো। ওটাই ছিল তখন আমার কাছে অনেক কিছু।
এবাড়ী ওবাড়ী যাওয়া কখনই আমার ভালো লাগতো না। একটু বাহিরে ঘুরে এসে বাসাতেই থাকতাম। ছোটবোনের জন্য কিছু খেলনা কিনে বাসাতেই ওর সাথে খেলতাম। মনে আছে, তখন খেলনা বলতে প্লাষ্টিকের কিছু খেলনা, বেলুন পাওয়া যেত। আর আরেকটি জিনিস আমাদের কাছে টানতো সেটাকে আমরা বলতাম "রকেট"।
একটি রঙিন জড়ি পানি ভর্তি কাঁচের টিউবের ভিতরে একটি ছোট কাঁচ দন্ড থাকতো। সেই টিউবটা উপর নীচ করলে রকেট গতিতে ভিতরে থাকা কাঁচদন্ডটি উঠানামা করতো।
সেসময় ঈদের আরেকটা আনন্দ ছিল সেটা হলো "জব্বার আলীর নাটক" আর "আনন্দ মেলা"। এ দুটি অনুষ্ঠানই ছিল টিভির প্রধান আকর্ষণ। সেই প্রতিবার একই কাহিনী, চাঁপাই এর আজিজ মিয়ার সাথে জব্বার আলী দুই নম্বরী ব্যাবসা করে জেলে যাবে আর ঈদের দিনে তার মা জেলে গিয়ে ছেলেকে সেমাই খাওয়াবে আর জব্বার আলী ডুকরে ডুকরে কাঁদবে।
ব্যাঙ্গার "দুবাই যামু টেকা দাও" ডায়লগটা কানে এখনও ভাসে। আর কোঁকড়া চুলধারী কানে দুল ওয়ালা ধইঞ্চার সেই মুখ ভেচকানী ছিল দেখার মত। আর আনন্দমেলার সেই কিছু বিনোদন একমাত্র বিনোদন ছিল। তবে ছোটদের কোন অনুষ্ঠান আমাকে টিভিতে টানতো না।
সন্ধ্যার অন্ধকারই ঈদের দিনের আনন্দের ইতি টানতো।
চাঁদ দেখা থেকে ঈদের দিন বিকাল পর্যন্ত যে আনন্দটা থাকতো সেটা আর ঈদের দিন সন্ধ্যার পরে থাকতো না। আস্তে আস্তে মুখ হয়ে যেত বাংলার পাঁচের মত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।