আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফিকে হতে চলেছে দিন বদলের স্বপ্ন...

আমরা সবাই পাগল...

"আপনারা নৌকায় ভোট দিন, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। নৌকা বিজয়ের মার্কা, দশ টাকা কেজি চাল খাওয়ার মার্কা। "(বগুড়ায় নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনা দৈনিক জনকণ্ঠ, ২৫ ডিসেম্বর ২০০৮)। এই ছিল আওয়ামীলীগের নির্বাচনী প্রচারণার সারকথা। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও মিডিয়া বিগত ক্ষমতাসীন বিএপিকে এমনভাবে নাস্তানুবাদ করে ছেড়েছে যে চতুর্দিকে পরিবর্তনের এক সুস্পষ্ট প্রেক্ষাপট তৈরি হয়ে যায়।

আর এই সুযোগে চতুর আওয়ামীলীগ তত্বাবধায়ক সরকারের সাথে আতাঁত করে, তাদের সকল কাজ (সেটা অবৈধ হলেও) সংসদে পাস করিয়ে দিবে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে। সেই সাথে নতুন জেনারেশনকে ডিজিটাল যুগের স্বপ্ন দেখিয়ে বোকা বানিয়ে ক্ষমতার মসনদে আসীন হয় আওয়ামীলীগ। কিন্তু আওয়ামীলীগের সেই নির্বাচনী অঙ্গীকার পালনতো দূরের কথা তারা তা বেমালুম অস্বীকার করতে ও দ্বিধা করেনি। যেমন নির্বাচনের পরপরই বিবিসি সংলাপে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমপি বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, "১০টাকা কেজি চাল খাওয়ানো এবং বিনামূল্যে কৃষকদের সার দেয়ার কথা শেখ হাসিনা একবারও বলেন নি। নেত্রী দ্রব্যমূল্য কমানোর কথা বলেছেন।

দ্রব্যমূল্য কখন কমানো হবে নির্দিষ্ট করে দিনতারিখ বলে দেয়া যাবে না। " আর বর্তমান বানিজ্যমন্ত্রীতো বহুবার দ্রব্যমূল্য কমানোর ঘোষণা দিয়ে যখন ব্যর্থ হয়েছেন, তখন রাগত স্বরে বলেছেন "কাঁচা মরিচের দাম কমানোর বিশ্বের কোন সরকারের দ্বারা সম্ভব না"! দিন বদলের স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামীলীগ দিন বদল তো অবশ্যই করেছে। দিনকে এক ঘন্টা এগিয়ে এনেছেন। এ নিয়ে বেশ হাস্য-রসেরও সৃষ্টি হয়েছিল। বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণ করছেন দলীয় লোকদেও নামে।

যেমন চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, পরিবর্তন করেছেন দুই বীরশ্রেষ্ঠ স্কোয়াড্রন লীডার রুহুল আমিন স্টেডিয়াম, চট্রগ্রাম এবং ফ্লাইট লেফটেনেন্ট মতিউর রহমান ষ্টেডিয়াম, খুলনা। নাম বদলের বদলের পাশাপাশি সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ভাগ্য বদলের জোর প্রচেষ্টা ও চালিয়ে যাচ্ছেন। যারফলে চাঁদাবজিটা এখন প্রকাশ্যে রূপ ধারণ করেছে। চলছে বিরোধী পক্ষেও উপর চরম নিপীড়ন-নির্যাতন। ফিরোজপুরে বোরখা পরার দায়ে তিন ছাত্রীকে অযথা জেলের ভাত খাইয়ে ছেড়েছে।

আর বর্তমানে ঢাকাসহ পুরা বিশ্বে শুধু নারী নয় পুরুষেরাও মুখ ঢাকার (সোয়াইন ফ্লু আতংকে) কাপড় কেনায় ব্যস্ত রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের নামেও মামলা হচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই আওয়ামীলীগ ৭৫ সালের চেয়ে মূর্তীয়মান হয়ে আবির্ভূত হচ্ছে। বিশেষ করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজী নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই অসন্তুষ্ট। প্রধানমন্ত্রী এতটাই বিরক্ত হয়ে পড়েছেন যে কিছুদিন পূর্বে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন।

তার এই সিদ্ধান্তে দেশব্যাপী কড়া সমালোচনা বয়ে যায়। কারণ যেখানে ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরা উচিত ছিল , সেখানে তিনি ছাত্রলীগকে অবিভাবক হারা করে পদত্যাগ করেছেন। যা পক্ষান্তরে তাদেরকে আরো বেশী সন্ত্রাসী কার্যকলাপে উৎসাহিত করেছে। গত পনেরই আগষ্ট মরহুম শেখ মুজিবর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে পুরো দেশ বিশেষ করে ঢাকা শহর নানা ধরণের পোষ্টার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, ব্যানারে চেয়ে গিয়েছিল। যার প্রায় প্রত্যেকটিতে একটি কথা কমন ছিল, তা হচ্ছে "কাঁদো বাঙ্গালী কাঁদো"।

এ নিয়ে নানান জনের নানা কথা থাকলেও বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দীন কাদেও চৌধুরীর একটি কথাই সমীচীন। তিনি যুবদলের এক সমাবেশে বলেছিলেন, পুরো ঢাকা শহর কাঁদো বাঙ্গালীর পোষ্টার দিয়ে চেয়ে ফেললেও এদের কাউকেই তো ৭৫ সালে কাাঁদতে দেখিনি। সবাই জান নিয়ে সেদিন পালিয়েছিল, আর সারা দেশের মানুষ মিষ্টি বিতরণ করেছিল। বিতর্ক অনেক থাকতে পারে কিন্তু ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না। ১৫ আগষ্টকে কেন্দ্র করে যে হারে চাঁদাবাজি হয়েছে তা আওয়ামীলীগের দিন বদলের স্বপ্নে বিভোর এই জাতি মুখ বুজে সহ্য করেছে।

আর সহ্য না করেই বা কি করবে? কারণ এই চাঁদার ভাগ যে অনেক মন্ত্রী এবং নেতার পকেটেও যায়। রাস্তার মোড়ে মোড়ে সামিয়ানা টানিয়ে উচ্চ স্বরে তিন চার দিন ধরে মাইক বাজিয়ে তারা শোক পালন করেছে। শোক পালনের অনেক নিয়ম থাকলেও উচ্চ স্বরে গান বাজিয়ে শোক পালন জাতি হয়তো এইবারই উপভোগ করেছে। শুধু কি তাই, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক তো ভিন্ন স্টাইলে শোক দিবস উৎযাপন করেছেন। তিনি ভারত থেকে কাঁটা লাগা খ্যাত শেফালী (অনেকে বাইজী ও বলে থাকে) ও আরো দুই শিল্পীকে এনে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র) ডিসকো পার্টি দিয়েছেন! দেশ রক্ষার, দেশের স্বাধীনতা রক্ষার শপথ নিয়ে দিনবদলের মন্ত্রীরা লাগামহীনভাবে দেশের বিরুদ্ধে কথা বলে যাচ্ছেন।

ক্ষমতায় যাওয়ার দুই মাসের মাথায় বিডিআর-সেনাবাহিনীর তথাকথিত বৈষম্যকে কাজে লাগিয়ে দেশ-মাতৃকা রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী দুইটি এলিট ফোর্সকে ধ্বংশ করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনে দলীয়করণের চরম ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছে বাকশালের উত্তরসূরীরা। বিশ্বের সকল পানি বিশেষজ্ঞ যেখানে টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছেন সেখানে পানি সম্পদ মন্ত্রীর মতে , আগে ভারত বাঁধ নির্মাণ করুক, তার পর লাভ-ক্ষতি হিসাব করা যাবে। আর প্রধানমন্ত্রীতো দাদা মনমোহনের এক আশ্বাসেই সাফা। কথায় আছে, বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।

তিনি ভারতীয়দের বিনাবাক্যে বিশ্বাস করতে চান, তর্ক বাড়িয়ে তাদের বিরাগ-ভাজন হতে চান না। বাহ্!, এই না হলো স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির চরিত্র। যাদের হাতে আজ স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নিরাপদ নয়। সর্বশেষ বহুল বিতর্কিত "পার্বত্য শান্তি চুক্তি" বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্রগ্রাম থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু হয়েছে। এক সময়কার সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান, বর্তমানে প্রতিমন্ত্রীর প্রটোকল নিয়ে ঘুরে বেড়ানো সন্তু লারমা আবার হাঁক-ডাক ছেড়ে মাঠে নেমেছেন।

অথচ আশ্চর্য হলে ও সত্যি প্রতিমন্ত্রীর প্রটোকল নিয়ে গাড়িয়ে জাতীয় পতাকা নিয়ে ঘুরে বেড়ালেও সে ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের ভোটার আইডি কার্ড করেনি, নেই বাংলাদেশের নাগরিকত্বের সনদ। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির সময় স্থানীয় নিবন্ধনকারীরা তার কাছে গেলেও সে নাম নিবন্ধ করতে আগ্রহ দেখান নি। বাংলাদেশের অস্তিত্বে অবিশ্বাসকারী এমন একটি লোক কি করে দেশের ভেতর এতটা প্রভাবশালী এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যেতে পারে তা বিস্তর সন্দেহের অবকাশ রাখে বৈকি। বর্তমানে তাদের দাবি হচ্ছে পার্বত্য চট্রগ্রাম থেকে সকল সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে, পাশাপশি পাহাড়ে অবস্থানরত সকল বাঙ্গালীকে সরিয়ে আনতে হবে এবং পার্বত্য শান্তি চুক্তির অলিখিত শর্তসমূহ যথাযথ পূরণ করতে হবে। আর এই অলিখিত চুক্তির অন্যতম হচ্ছে তাদের শায়ত্ব শাসন।

অর্থাৎ একটি দেশকে দুটি ভাগে ভাগ করা। দেশের অভ্যন্তরে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের শান্তিতে রাখার স্বার্থে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী, দুষ্কৃতিকারীদের শায়েস্তা করতে যে কোন ফোর্সকে মোতায়েন করতে পারে। তার উদাহরণ অনেক দেশে রয়েছে। ভারতীয় সেভেন সিস্টার্সে ৪০ বছর ধরে প্রায় ৪ লাখ সৈন্য মোতায়েন আছে। কাশ্মীরে গত দুই দশক ধরে ৫০ লাখেরও বেশী ভারতীয় সেনা মোতায়েন আছে।

এ সবের বিরুদ্ধে কথিত কোন মানবাধিকার গ্রুপ টু শব্দ করতেও দেখা যায় না। আর পাহাড়ে আমাদের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো গুরুতর অভিযোগও নেই, তার পরও কেন সেখান থেকে সেনা বাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে? ১৯৮৬ সাল থেকে ধীরে ধীরে পাহাড়ে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে সেনা ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়েছে। আজ হঠাৎ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে সকল সেনা ক্যাম্প এবং ব্রিগেড প্রত্যাহার করা হলে পাহাড়ে দুষ্কৃতিকারীদের অবাধ চলাচল বৃদ্ধি পাবে। সংঘাত সৃষ্টি হবে পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মধ্যে। যা ইতিমধ্যে পরিলক্ষিত হয়েছে।

কয়েকটি এলাকার সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের পর সন্তুর লোকেরা এক পাহাড়ী বাঙ্গালী নেতাকে এলাকা ছাড়ার আল্টিমেটাম দিয়ে গেছে, মসজিদের ইমামকে আজান দিতে বারণ করেছে। সবচেয়ে যে আশংকাটি সবার মাঝে কাজ করছে তা হচ্ছে সেনাবাহিনী পুরাপুরি প্রত্যাহার করা হলে সন্তু গংরা যদি স্বাধীনতা চেয়ে বসে তাহলে সরকার কি আদৈ তা প্রহিত করতে পারবে? হয়তো সম্ভব হবে না। কারণ প্রতিহত করার মত কোন কিছুই আর সরকারের হাতে থাকবে না। দেরীতে হলেও দেশের মানুষ আজ বুঝতে শুরু করেছে। কিন্তু এই জাতির হয়তো একটিই দোষ- সময় থাকতে সব কিছু বুঝতে চায় না।

কারণ প্রবীণদের যারা ৭১-৭৫ এর আওয়ামী শাসন এবং নবীনদের যারা ৯৬-০১ সালের আওয়ামীলীগের শাসন আমল দেখেছে তারা অন্তত নতুন করে শেখার কিছু নেই যে আওয়ামীলীগ কি বা তার চরিত্র কি? স্বাধীনতার কথিত উত্তরাধিকার যদি একক ক্ষমতাবলে দেশের স্বাধীনতাকে বিকিয়ে দিতে চায় তাহলে দেশপ্রেমিক ইসলামী জনতা অতীতের ন্যায় এবারও নব্য মীর জাফরদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কালক্ষেপণ করবে না। ইতিহাস সাক্ষী ক্ষমতা কারো জন্য চিরস্থায়ী নয়। বরং অতিরিক্ত দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, বিশেষ বাহিনী গঠন, নিজের নিরাপত্তা নিয়ে তটস্থ থাকা অধিপতিরা নিজের জন্যই চরম বিপদ ডেকে এনেছেন। বর্তমান সরকার যদি ভুল শুধরে চলার চেষ্টা না করে তাহলে অতীতের সরকারগুলোর ন্যায় চরম মূল্য দিয়ে পাপের পায়শ্চিত্ত করতে হবে। যেখানে কাঁদার মত লোকটিও খুঁজে পাওয়া যায়।

দিন বদলের সরকারকে অতীত ইতিহাস স্টাডি করে পথ চলা উচিত। সূত্রঃ মু. নূরনবী/সোনার বাংলা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।