আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফিকে হয়ে আসছে স্বপ্ন

সাভারের জিরানীর ১০ ফুট প্রস্থ আর ১১ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কক্ষ। কক্ষের বাসিন্দা পোশাকশ্রমিক নূপুর আর তাঁর তিন সঙ্গী বছর খানেক আগে বরিশালের এক গ্রাম থেকে এসে উঠেছিলেন এখানে। চোখে রঙিন স্বপ্ন ছিল। বছর না ঘুরতেই ফিকে হয়ে এসেছে সেই স্বপ্ন। দোকানে বাকির পর বাকি, হাতশূন্য।

বুক কাঁপে, জানুয়ারির পর এই ঘরটা থাকবে তো? এখানকার বাড়ির মালিকেরা ভাড়াটে পোশাকশ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির একটা সম্ভাবনা থাকায় বাড়তি ভাড়ার ঘোষণা কয়েক মাস আগেই দিয়ে রেখেছেন।

নূপুরদের কক্ষে উঁকি দিয়ে দেখা গেল সেখানে কোনো জানালা নেই। ছোট্ট একটি খাট ফেলার জায়গা আছে শুধু। খাটে থাকেন দুজন আর এক চিলতে মেঝেতে আরও দুজন। ইয়াসিন টেক্স নামের একটি পোশাক কারখানার সুইং অপারেটর নূপুর প্রথম আলো ডটকমকে ঘরটা দেখিয়ে বলেন, টিন দিয়ে ঘেরা এই বাসার ভাড়া বিদ্যুত্ বিলসহ এক হাজার ৭০০ টাকা।

বাড়তি ভাড়া যোগ হলে জানুয়ারি থেকে দিতে হবে দুই হাজার ২০০ টাকা। শ পাঁচেক টাকা বাড়িভাড়া গুনতে হলেও থাকার সুবিধা বাড়ছে না একটুও। নূপুরের চোখেমুখে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা, কোথা থেকে জুটবে খাবার, বাড়িভাড়া। নূপুর বলেন, ‘এই ঘরটায় চারজন থাকি, গরম পড়লে বিদ্যুত্ খরচ বাড়ে, টাকা বাড়ে। রান্নার জন্য কাঠ কিনতে হয়।

জনপ্রতি ৩০০ টাকা কাঠ কেনার খরচ যায়, খাবার খরচ তো আছেই। ’

নূপুরের মতো আরও কয়েকজন শ্রমিক বললেন, বেতন বছর তিনেক আগে বেড়েছিল। কিন্তু এই তিন হাজার টাকা হাতে পাওয়ার পর বাকি মেটাতেই চলে যায় সব। বাড়িভাড়া বাকি, চাল-ডালের দোকানে বাকি। খাওয়া বলতে শুধু ভর্তা-ভাত।

কখনো ভাতের ওপর ডাল জোটে, কখনো জোটে না।

নূপুরদের এই কষ্টের কথা জানেন তাঁদের বাসার তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ সুলতানও। বললেন, ওদের কষ্ট  অনেকটা দোজখবাসীর মতো।

মাসিয়াতা গার্মেন্টসের অপারেটর হক মিয়া ও নর্দার্ন নিটের সুজন জানান, তিন বছর আগে বেতন বেড়েছিল। কিন্তু বাড়িভাড়া বাড়ছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা হারে।

হক মিয়া আরও বলেন, এখন তো খাওয়ারও কিছু নেই। পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা।

শ্রমিকদের এই আর্থিক কষ্টের প্রভাব পড়েছে এলাকার বাজারগুলোয়। জিরানীর মেসার্স মেরাজ রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আফজাল হোসেন জানান, আগে যেখানে প্রতিদিন মণ দশেক চাল বিক্রি হতো, এখন ছয় থেকে সাত মণে নেমে এসেছে। বাকি নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।

কিন্তু বাকির টাকা ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না। শাকসবজির বাজারেও একই অবস্থা। জিরানী ও এর আশপাশের বাজারগুলোয় নিত্যপণ্যের বেচাকেনা কমে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পোশাক কারখানার মালিক দাবি করেন, বেতন বাড়ানোর ঘোষণা এলে বাড়তি চাপ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ফ্যামিলিয়ার গার্মেন্টসের নিট ম্যানেজার শেখ মাহমুদুর রহমান।

মালিকের পক্ষ থেকে তিনি বলেন, ‘গত বছর তাজরীনের আগুন, এরপর রানা প্লাজা, হরতাল-অবরোধের কারণে অর্ডার কম পাচ্ছি। তাই বেতন বাড়ানোর ঘোষণা এলে টাকা কোথায় পাব?’

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।