আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃত্যু এসে উনাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে

mahbub-sumon.com
বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের মৃত্যু আমাকে কস্ট দেয়নি, লজ্জা দিয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয় মৃত্যুই এসে উনাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে পৃথিবীর সমস্ত লজ্জার হাত হতে। পত্রিকার পাতা খুলতেই চোখে পড়ছে এক গাদা গৎ বাঁধা শোকবার্তা। কাঁদতে কাঁদতে লুঙি ভেজানোর উপক্রম করছি আমরা। মৃতদেহ দেখতে বা জানাজায় দলে দলে আসা অমুক তমুকের সার্কাস দেখতেও খারাপ লাগছে না।

আজ কালকার জামানায় এগুলো স্বাভাবিক। আগামী বছর ধুম ধাম করে উনার মৃত্যবার্ষিকী পালন করা হবে নিয়ম মেনে। পরের বছর আবেগের তোড় একটু কম থাকাতে সেটা একটু কম ধুম ধামের করে পালন করা হবে। আবেগ কমতে কমতে যখন সেটা যখন শুন্যে পরিণত হবে তখন উনার কথা স্মরন করবে শুধুমাত্র উনার পরিবার আর উনার শীষ্যরা। আমরা সুশীল মধ্যবিত্ত মেতে উঠবো অন্য কাউকে নিয়ে।

আবেগ হোলো মধ্যবিত্তের ফ্যাশন। ঈদের ফ্যাশনের মতো আবেগও বদলে যায় বছর বছর - আবেগের ব্যক্তি/বস্তুও বদলে যায়। অনেক সময়ই দেখেছি সিডি বা ক্যসেটের ফ্ল্যাপে গানের সুরকার/গীতিকারের নামের জায়গায় লেখা "সংগৃহিত"। ভেবেছিলাম হয়তো সেই মহান শিল্পী অনেক খেটে খুটে - বন বাদারে ঘুরে ঘুরে গান সংগ্রহ করে বাঙালী জাতির সংগীত সম্ভারকে সমৃদ্ধ করেছেন। পরে শুনেছি, সেটা বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের লেখা - সুর করা।

চরম অকৃতজ্ঞ এবং চোর সেই শিল্পী বেমালুম চেপে গিয়েছেন। পরে ধরা পরার পর ইয়ে ইয়ে বলে পার পেতে চেয়েছিলেন সেই ভদ্রবেশী চোর। এর পর যা হয় , শাহ আবদুল করিমের ভাগ্যে স্বীকৃতিতো দূরের কথা ; রয়ালটির ক্ষুদ্রাংশ টুকুও জুটেনি। বেঁচে থাকতে শাহ আবদুল করিম‌ অনেক পদক পেয়েছিলেন, অনেক সম্মাননাও পেয়েছিলেন। কিন্তু অর্থাভাবে উনার পেটে যখন ভাত জুটতো না তখন কোনো সুশীলই তার খবর নেয়নি।

এই মানুষটাই একদিন কস্ট নিয়ে বলেছিলেন "এত সংবর্ধনা, সম্মান দিয়ে আমার কী হবে! সংবর্ধনা বিক্রি করে দিরাই বাজারে এক সের চালও কেনা যায় না"। (প্রথম আলো) আজকে ফেসবুকের পাতায়, ব্লগের পাতায়, পত্রিকার পাতায় যারা শোকগাঁধা লিখছি ফ্যাশন করে তারাও কোনো খোঁজে নেইনি সেসময়। এক বোতল ব্লাক লেভেলের দাম দিয়ে কয় সের চাল কেনা যায় সেটা ভাবছি, একটা ডিএসএলআর এর দাম দিয়ে কয় মাস পেট পুরে খাওয়া যায় সেটাও ভাবার চেস্টা করছি। বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম যখন ক্ষুদায় কাতর ছিলেন, চিকিৎসার অভাবে ভাঙা কুঁড়ে ঘরে কাতরাচ্ছিলেন তখন অবশ্য এসব হিসেব করার ফুসরত হয়নি আমার বা আমাদের। এখন যা করছি তার সব কিছুই ভন্ডামী।

এসব ভন্ডের মাঝে আমিও একজন। ভাবছি সামনে কার পালা ? এ লেখাটি সর্বপ্রথম মাহবুব সুমন.কম এ প্রকাশিত।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.