রাজধানীর ডিআইটি প্রজেক্ট থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে বাসচালক খলিলকে আটক করে ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে কোর্টে চালান দেয়ার হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বাড্ডা থানার এক সহকারী দারোগা। ঈদের আগে ওসির জন্য দামি পাঞ্জাবি কিনে দেয়ার প্রতিশ্রম্নতিও দিতে হয়েছে ওই বাসচালককে। পরে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার মুচলেকায় গভীর রাতে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
পল্লবীতে সোহানুর রহমান খোকন নামে পিডিবির এক ঠিকাদারকে আটক করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সিভিল টিমের সাব-ইন্সপেক্টর জহিরউদ্দিন তৈমুর। একই পুলিশ কর্মকর্তার বিরম্নদ্ধে পল্লবীর ৭ নাম্বার সেকশনের জেনারেটর ব্যবসায়ী টুলটুলকে আটক করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ২৫ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, শুধু খলিল, খোকন ও টুলটুলই নয়, তাদের মতো শত শত নিরীহ নগরবাসী প্রতিদিনই পুলিশের ভুয়া গ্রেপ্তার বাণিজ্যের শিকার হচ্ছে। ঈদ সামনে রেখে উৎকোচ আদায়ে পুলিশের এ পুরনো কৌশল আতঙ্কজনক রƒপ নিয়েছে। পুলিশের দাবিকৃত অর্থ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেই ফৌজদারি দন্ডবিধির ৫৪ ধারা বা ডিএমপি অ্যাক্টে গ্রেপ্তার দেখিয়ে নিরীহ জনসাধারণকে অযথা হয়রানি করা হচ্ছে। ঊধ্র্বতন কর্মকর্তাদের মনিটরিং না থাকায় ঈদ যতোই ঘনিয়ে আসছে দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তারা ততোই বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি মাসের গত ১০ দিনে ১ হাজার ৯৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর মধ্যে ৪০ জনকে ফৌজদারি দÐবিধির ৫৪ ধারায় এবং ৭৩৪ জনকে ডিএমপি অ্যাক্টে আদালতে চালান দেয়া হয়।
এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী দÐপ্রাপ্ত পলাতক আসামি, ওয়ারেন্টি এবং খুন, ডাকাতি, ছিনতাই ও দস্যুতাসহ বিভিন্ন অপরাধের এজাহারভুক্ত আসামির প্রায় সমানসংখ্যক গ্রেপ্তার করা হয়েছে ডিএমপি অ্যাক্টে, যা সাধারণ সময়ের চেয়ে প্রায় তিনগুণ। রমজানের শুরম্ন থেকেই ডিএমপি অ্যাক্টে গ্রেপ্তারের এ হার আকস্মিক লাফিয়ে কয়েকগুণ বৃদ্ধির কথা ডিএমপির ঊধ্র্বতন কর্মকর্তারা স্বীকার করলেও এর নেপথ্য কারণের সন্তোষজনক কোনো উত্তর তারা দেননি।
ডিএমপির লালবাগ, সূত্রাপুর, শ্যামপুর, উত্তরা, সবুজবাগ ও মিরপুরসহ প্রায় এক ডজন থানায় ঘুরে বিচিত্র দৃশ্য দেখা গেছে। গভীর রাতে এসব থানা হাজতে গ্রেপ্তারকৃতদের গাদাগাদি করে রাখা হলেও ভোর হওয়ার আগেই তা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
দালাল, থানার সোর্স ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দিয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে রাতদুপুরে গ্রেপ্তারকৃতদের একটি বড় অংশকে ছাড়িয়ে নেয়া হচ্ছে। মধ্যরাত থেকে ভোর অবধি থানাগুলোতে প্রকাশ্যে চলছে অবৈধ অর্থের লেনদেন। আর যারা এসব মিডিয়ায় পুলিশকে সন্ত্তষ্ট করতে পারছে না তাদের চালান দেয়া হচ্ছে ৫৪ ধারা ও ডিএমপি অ্যাক্টে।
এদিকে বাড্ডা, সূত্রাপুর ও পল্লবীসহ ডিএমপির বেশ কয়েকটি থানার ওসিরা এ বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটর করায় সিভিল টিমের কর্মকর্তারা ভিন্ন পথ ধরেছেন। তারা রাস্তা থেকে নিরীহ ব্যবসায়ীদের তুলে নিয়ে সারাদিন টহল গাড়িতে করে ঘুরিয়ে আটক ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে নগদ অর্থ আদায় করে ছেড়ে দিচ্ছেন।
সিটি সার্ভিসের ১০ নাম্বার রম্নটের বাসচালক খলিল অভিযোগ করেছেন, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে তিনি ডিআইটি প্রজেক্টের ১২ নাম্বার রোডের একটি সেলুনে বসে ছিলেন। এ সময় সিভিল টিমের সহকারী দারোগা শহীদ সেখানে গিয়ে তাকে টহল গাড়িতে তুলে নেন। তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে মাদক মামলায় চালান দেয়ার ভয় দেখান। পরে তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা জোগাড় করে দারোগা শহীদের হাতে তুলে দেয়ার পর রাত ১টায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
পল্লবী থানা যুবদলের প্রচার সম্পাদক ও পিডিবির ঠিকাদার সোহানুর রহমান খোকন জানান, ৩ সেপ্টেম্বর সকালে বাচ্চাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বাসায় ফেরার পথে মিল্ক ভিটার মোড়ে পল্লবী থানার সিভিল টিমের দারোগা জহিরউদ্দিন তৈমুর তার গতিরোধ করেন।
কোনো রকম সিনক্রিয়েট না করার হুমকি দিয়ে তাকে কালো গ্লাসের একটি নোহা মাইক্রোবাসে তুলে নেন। তাকে মার্ডার কেসে ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করেন। এতো টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় সারাদিন তাকে গাড়িতে আটকে রাখেন। পরে ২০ হাজার টাকা আদায় করে রƒপনগর আবাসিক এলাকার ২৮ নাম্বার সড়কের মাথায় নামিয়ে দেয়া হয়।
গাড়ি ব্যবসায়ী হানিফ তালুকদার অভিযোগ করেন, ১ রমজান সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পল্লবী থানার দারোগা জহিরউদ্দিন তৈমুর মিরপুর-১১ নাম্বার সেকশনের ওয়ান ব্যাংকের সামনে থেকে তাকে আটক করেন।
মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে সারাদিন গাড়িতে করে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে ৪০ হাজার টাকা আদায় করে ইফতারির কিছু পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
পল্লবীর সিভিল টিমের বিরম্নদ্ধে একই কায়দায় অর্থ আদায়ের অভিযোগ করেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী চুন্নু, আবদুল হাই মোল্লা ও সিরাজ। তাদের অভিযোগ, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে ঢোকানোর ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
গ্রেপ্তার বাণিজ্যের এ অভিযোগ প্রসঙ্গে পল্লবী থানার ওসি আবদুল মালেক বলেন, বেশ কয়েক ব্যবসায়ী এ ধরনের অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অভিযোগের সত্যতা মিললে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরম্নদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, শুধু থানা পুলিশ নয়, ডিবিসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ঈদবাণিজ্যে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, চিহ্ণিত অপরাধী ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের না ধরে ঈদ সামনে রেখে একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এ অপতৎপরতায় মেতেছেন। ভুয়া মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হলে স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করা হবে না- এ আশঙ্কায় অনেকেই ঈদ খরচা তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন।
কারওয়ান বাজার, বাদামতলী ও সদরঘাটের নৈশ শ্রমিকদের সূত্রগুলো জানিয়েছে, চলতি মাসে তাদের শতাধিক শ্রমিক পুলিশের ঈদবাণিজ্যের শিকার হয়েছে।
কেউ কেউ পুলিশকে ঘুষ দিয়ে ছাড়া পেলেও অনেকেরই ঠাঁই হয়েছে জেলহাজতে। আতঙ্কজনক এ পরিস্থিতিতে নৈশ শ্রমিকদের অনেকে কাজ ছেড়ে দিয়ে বাড়ির পথ ধরেছেন।
সূত্রঃ Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।