আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজিতে জড়িয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ

গর্জে ওঠার এইতো সময়.... তিতাস বাচাও, দেশ বাচাও

যুগান্তর রিপোর্ট ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। আর ঈদকে সামনে রেখে তারা আরও বেশি লাগামহীন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সংগঠনের শীর্ষ নেতারা সরাসরি মদদ দিচ্ছেন। কেউ কেউ এজেন্ট নিয়োগ করে বখরা নিচ্ছেন।

এমনকি মধ্যম ও নিচের সারির নেতারা যে টু-পাইস কামান তাতেও শীর্ষ নেতারা ভাগ বসাচ্ছেন। এ নিয়ে একাধিকবার দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ প্রকাশ্য রূপ লাভ করেছে। সর্বশেষ ৩০ আগস্ট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় একজন প্রভাবশালী সহ-সম্পাদক সভাপতিকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আপনি আমাদের দিয়ে বিভিন্নভাবে টাকা ইনকাম করছেন। অথচ আমরা তা থেকে কিছুই পাই না। এভাবে চলতে পারে না।

’ ঘটনার পর অতি গোপনে ওই সহ-সম্পাদককে শোকজ নোটিশও দেয়া হয়। তবে তাও ক্ষুব্ধ নেতা প্রকাশ করে দেন। এমনকি তিনি গ্র“প পরিবর্তন করে সাধারণ সম্পাদক গ্র“পে চলে যান। একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানায়, তারা সার্বিক ব্যাপারে সরকারের হাইকমান্ডে রিপোর্ট দিয়েছেন। এদিকে ছাত্রলীগের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পত্র এসেছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে।

নাম প্রকাশ না করে একাধিক প্রভোস্ট জানান, তারা পত্রটি পেয়েছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কারণে নিরপেক্ষ রিপোর্ট দিতে পারবেন কিনা, সংশয় রয়েছে। এদিকে শীর্ষ নেতাদের আখের গোছানোর মরণকামড়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়েছে। হলে হলে যে জনপ্রিয়তা নিয়ে ছাত্রলীগ যাত্রা শুরু করেছিল, তা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে বলে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে। ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, সারাদেশে ছাত্রলীগের পরিচয়ে কেউ টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ব্যাপারে বলেন, ‘আমার কোন কিছুর অভাব নেই। মানসম্মান নিয়ে থাকার চেষ্টা করছি। কাউকে দিয়ে অর্থ কামানোর কোন প্রশ্নই ওঠে না। কেউ যদি অভিযোগ করে থাকে, তবে আমাকে হেয় করার জন্যই করছে। ’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লালবাগ থানার সাধারণ সম্পাদকের ঘটনাসহ কয়েকটি ঘটনার তদন্ত হচ্ছে।

প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানা যায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের মাঝে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ক্যাম্পাসে ঠিকাদারি ও বিভিন্ন এলাকার চাঁদা আদায় নিয়ে নিজেরা বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ ২২ আগস্ট রাতের একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা নিয়ে কবি জসীমউদ্দীন হল ছাত্রলীগের দু’গ্র“পে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় আট ছাত্রলীগ কর্মীকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পুলিশ সূত্র জানায়, গত জুন মাসের মাঝামাঝিতে বনানী চেয়ারম্যানবাড়ীর এক ব্যবসায়ী গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। রাত আনুমানিক ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের রোকেয়া হলের বিপরীতের রাস্তায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনিয়ে নেয়া হয় নতুন মডেলের একটি এলিয়েন কার। ওই ঘটনায় সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ছাত্রলীগ কর্মী নজরুল ইসলাম খান জেরিকে গ্রেফতার করা হয়। রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই গাড়ি উদ্ধর করা সম্ভব হয়।

ওই সময় জেরিকে ছাত্রলীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয়। এর কয়েকদিন পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি লাভলু মোল¬া শিশির সুপ্রিমকোর্টের এক আইনজীবীর গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে আটকে রেখে চাঁদা দাবি করেন। ওই আইনজীবী গাড়ি উদ্ধারের জন্য শাহবাগ থানায় ফোন করলে পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে পরামর্শ দেয়া হয়, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করতে। এরপর তিনি কোর্টে মামলা দায়ের করেন এবং বিষয়টি লিখিত আকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টরকে অবহিত করে এর বিচার দাবি করেন। তবে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই আইনজীবীকে তিনি পুলিশ পাঠিয়ে সহায়তা করতে চাইলে তিনি নিতে রাজি হননি।

এমনকি চাঁদা দাবির বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা দায়ের করতে বললেও তিনি তা করেননি। এছাড়া ছাত্রলীগের এসব ঘটনার সঙ্গে শাহবাগ থানা পুলিশ জড়িত নয় বলে তিনি দাবি করেন। একইভাবে ২২ আগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের সামনে ছিনতাই করতে গিয়ে জসীমউদ্দীন হলের ছাত্রদের হাতে ধোলাই খায় কয়েক ছিনতাইকারী। এদের প্রত্যেকের বাড়ি গোপালগঞ্জে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হল ছাত্রলীগের এক নেতার প্রশ্রয়ে ছিনতাইকারীরা দীর্ঘদিন ধরে হলে অবস্থান করছে আর এসব অপকর্ম ঘটিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগে জানা গেছে।

ওই রাতে তাদের বাঁচাতে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ওই অঞ্চলের দুই ছাত্রলীগ নেতা। এর জের ধরে ঘটে কবি জসীমউদ্দীন হলের সংঘর্ষ। ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক রাশেদুল হাসান সুপ্ত তার এলাকা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির নামে একাই কার্ড ছাপিয়ে কয়েক লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীর একটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, তার কাছ থেকে ওই ছাত্রলীগ নেতা ৫শ’ টাকা নিয়েছেন কার্ড দেখিয়ে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার নাম করেও টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

কয়েকদিন আগে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে চাকরি দেয়ার নাম করে চারজনের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে শহীদুল¬াহ হলে হইচইও হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতির আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে চারুকলা অনুষদ শাখার সভাপতি হন জামিরুল ইকবাল আজাদ। সভাপতি হওয়ার দু’দিন পরই তিনি নিউমার্কেটের বিপরীতে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস বিল্ডার্সের কাজ বন্ধ করে দেন। চাঁদা দাবি করেন তিনি।

না হয় কাজ বন্ধ থাকবে বলে সাফ জানিয়ে দেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে জানাজানির পর ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতির হস্তক্ষেপে আজাদের বিষয়টি মীমাংসা হয়। ওই নেতার আশীর্বাদপুষ্ট এফ রহমান হলের আরেক কেন্দ্রীয় নেতা মুহসীন হলের বসুনিয়া গেটের পাশের দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা নেন। একদিন চাঁদা না পেলেই ভাংচুর করে তার সমর্থকরা। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেশ কয়েকবার ওই দোকান ভাংচুর করে ছাত্রলীগের কর্মীরা।

এছাড়া ৪ অক্টোবর নীলক্ষেত মোড়ে গ্রামীণফোনের স্থাপন করা বিলবোর্ড ভেঙে দেয় কেন্দ্রীয় সভাপতি সমর্থিত কর্মীরা। তারা ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। এর আগে সংগঠনের অপর গ্র“পের দুই নেতাকে অর্ধলক্ষ টাকা দেয়া হয়েছিল বলে বিলবোর্ড স্থাপনকারী ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে নালিশ করে। পরে সংগঠনের উচ্চ পর্যায় থেকে জানানো হয়, বিষয়টি তাদের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। নীলক্ষেতের গাউছুল আজম মার্কেট থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায় করছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দু’নেতার সমর্থকরা।

তাদের হয়ে চাঁদা আদায় করে ছাত্রলীগ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখার এক শীর্ষ নেতা। অভিযোগ রয়েছে, ওই মার্কেটের একটি দোকান দখল করে নিয়েছেন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ এক নেতা। দখলকারী নেতা এখন নিয়মিত ওই দোকানে বসেন। এছাড়া গাউছুল আজম মার্কেটে অবস্থিত কেএস নেট নামক ইন্টারনেট সেবাদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত মাসোহারা দিতে হয় ‘ভাই’ নামে পরিচিত ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান দু’নেতাকে। গাউছুল আজম মার্কেটের বিপরীতের নীলক্ষেত হাইস্কুলের নির্মাণাধীন ভবনও ছাত্রলীগ নেতাদের চাঁদার বাইরে যেতে পারেনি।

এখানে চাঁদা নিচ্ছেন এফ রহমান ও মুহসীন হলের সাবেক কয়েক নেতা। এছাড়া ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। ওই কলেজের শিহাবের সমর্থকরা গত মাসের শেষদিকে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এর জের ধরে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ নিউমার্কেটের সামনের রাস্তা অবরোধ করে। ভাংচুর করে পথচারীদের গাড়ি।

ডিডিসি সূত্র জানায়, লালবাগ থানার ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গত সপ্তাহে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবদুর রহমানের কাছে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে তাকে অপহরণ করা হবে বলেও হুশিয়ার করে দেন ওই নেতা। এরপর থেকে আতংকে অফিস করেন এ কর্মকর্তা। যদিও কেন্দ্রীয় সভাপতি জানিয়েছেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ২৩ সেপ্টেম্বর খাদ্য ভবনে টেন্ডারবাজি করেন সূর্যসেন হল শাখার এক নেতা।

এসব বিষয় এখন সংগঠনের ভেতরে-বাইরে প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে। ৩০ আগস্ট ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় তাদের চাঁদাবাজি আর টেন্ডারবাজি নিয়ে প্রকাশ্য বাকবিতণ্ডা হয়। সভা সূত্র জানায়, এসময় কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম সংগঠনের এক শীর্ষ নেতাকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘আপনার নির্দেশে আমরা সবকিছু করি। আপনি আমাদের কোন ভাগ না দিয়ে একাই সবকিছু ভোগ করেন। ’ এ নিয়ে সভাস্থলে অনেকে নাজমুলের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করলেও এটা ছিল তাদের চেপে রাখা সত্য কথা।

প্রধানমন্ত্রীর দফতরের চিঠি : চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজদের ব্যাপারে তথ্য জানাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিগুলো হলের প্রভোস্টের হাতে পৌঁছেছে। এছাড়া ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল শাখা কমিটি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে পাঠানো ওই চিঠি পেয়েছে। জহুরুল হক হলের ছাত্রলীগের এক নেতা যুগান্তরকে জানান, গত মাসের শেষ দিন প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে তাদের হলেও এমন একটি চিঠি আসে। এতে জানতে চাওয়া হয়, ওই হলের বা হলে অবস্থান করে ছাত্রলীগের কোন কোন নেতা চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করছেন।

এদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে জানাতে বলা হয়। তবে ওই হলের ছাত্রলীগ বর্তমান কমিটির এক নেতা যুগান্তরকে বলেন, এসব নেতা এত বেশি ক্ষমতাধর যে, তাদের সম্পর্কে তথ্য দিতে এরা ভয় পাচ্ছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.